IPL 2024

আইপিএলে ব্যর্থ ২৫ কোটির স্টার্ক! কিসের অভাব ভোগাচ্ছে কেকেআর বোলারকে?

অনেক আশা নিয়ে স্টার্ককে কিনেছিল কেকেআর। প্রায় ২৫ কোটি টাকা খরচ করতেও ভাবেনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সফল বোলারকে চেনা যাচ্ছে না আইপিএলে। এখনও দলকে ভরসা দিতে পারেননি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:৩৫
Share:

মিচেল স্টার্ক। — ফাইল চিত্র।

আইপিএলের প্রথম থেকেই আলোচনায় মিচেল স্টার্ক। দুর্বল পারফরম্যান্সের জন্য। ইডেন গার্ডেনসে লখনউ সুপার জায়ান্টস ম্যাচ ছাড়া কোনও ম্যাচেই নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি অস্ট্রেলিয়ার অভিজ্ঞ জোরে বোলার। অথচ অনেক আশা নিয়ে ২৪ কোটি ৭৫ লাখ খরচ করে স্টার্ককে নিলামে কিনেছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স।

Advertisement

কী হল স্টার্কের? আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যথেষ্ট সফল স্টার্ক। একটা সময় জোরে বোলার মানে ছিল গতি, গতি এবং গতি। জোয়েল গার্নার, অ্যান্ডি রবার্টসদের মতো বোলারদের সমীহ করতেন ব্যাটারেরা। তাঁরা ব্যাটারদের মাথা বা পাঁজর লক্ষ্য করে বল করতেন। গতি দিয়ে পরাস্ত করতে চাইতেন ব্যাটারদের। কয়েক বছর আগের অ্যালান ডোনাল্ড বা শোয়েব আখতারেরাও গতির ঝড় তুলতেন বল হাতে। সমীহ করে চলতেন ব্যাটারেরাও। ক্রিকেটের সেই দিন এখন আর নেই। ব্যাট-বলের লড়াইয়ের ভারসাম্য হারিয়েছে ক্রিকেট। নিয়ম বদলাতে বদলাতে ক্রিকেট এখন ব্যাটারদের জন্য। সব নিয়মই যেন বোলারদের বিপক্ষে। ক্রিকেট যত একপেশে হয়েছে, তত কঠিন হয়েছে বোলারদের কাজ। ব্যাটারদের বোকা বানাতে বোলারদের নিত্যনতুন পরিকল্পনা ছকতে হচ্ছে। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট আসার পর বদলে গিয়েছে ক্রিকেট নিয়ে সার্বিক ধারণা।

২০ ওভারের ক্রিকেটে ব্যাটারেরা প্রথম বল থেকেই আগ্রাসী থাকেন। উইকেট হারানোর পরোয়া করেন না। প্রতি ওভারে তিন-চার বার বল মাঠের বাইরে পাঠাতে না পারলে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ব্যাটারের কোনও মূল্য নেই। ‘ডট’ বল খেলা কার্যত অপরাধের চোখে দেখা হয়। পিচগুলিও তৈরি করা হয় ব্যাটারদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে। বোলারেরা এখন কার্যত ক্রিকেটের পার্শ্বচরিত্র।

Advertisement

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ব্যাটারদের দাপট সামলাতে বলের গতি কমাচ্ছেন জোরে বোলারেরা। ব্যাটারদের বিভ্রান্ত করতে বলের গতি কমানোর কথা প্রথম ভেবেছিলেন ডেনিস লিলি এবং জেফ থম্পসন। তাঁদের সেই ভাবনা এখন জোরে বোলারদের নতুন অস্ত্র হয়ে উঠেছে। স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বলের গতি কমিয়ে দিচ্ছেন যশপ্রীত বুমরা, মাথিসা পাতিরানা, হর্ষল পটেল, প্যাট কামিন্স, কাগিসো রাবাডার মতো বোলারেরা। বল ছাড়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত ব্যাটারেরা বুঝতে পারছেন না, বোলার স্লোয়ার করবেন। তাতেই সময়ের হেরফের ঘটছে। ব্যাট-বলের সংযোগ ঠিক মতো হচ্ছে না। চার, ছয় কম হচ্ছে। পড়ছে উইকেটও। যে জোরে বোলার যত নিখুঁত ভঙ্গিতে স্লোয়ার করতে পারেন, তাঁকে খেলা ব্যাটারদের পক্ষে তত সমস্যার হয়। স্লোয়ার করতে গিয়ে বোলিং ভঙ্গির পরিবর্তন আবার ব্যাটারকে আগাম সতর্ক করে দেয়। এখনকার যে জোরে বোলারেরা ধীর গতির বল করতে দক্ষ, তাঁরা অনেক সময় ১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টারও কম গতিতে বল করছেন। গতি কাজে লাগিয়ে বল মাঠের বাইরে পাঠাতে সমস্যায় পড়ছেন ব্যাটারেরা। সেখানে প্রথম সাত ম্যাচে স্টার্ক করেছেন মাত্র পাঁচটি স্লোয়ার।

মিচেল স্টার্ক। ছবি: আইপিএল।

এটাই স্টার্কের সব থেকে বড় দুর্বলতা। অস্ট্রেলীয় বোলার নিজেই এক বার স্বীকার করে নিয়ে বলেছিলেন, ‘‘আমার হাতে ২৪ রকমের ধীর গতির বল নেই। যেগুলি নিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নামব। আমার গতি আছে। সেটাই আমার শক্তি। শেষ দিকের ওভারে আমি গতি দিয়েই ব্যাটারকে পরাস্ত করার চেষ্টা করি।’’ ওয়াকার ইউনিসের পর্যবেক্ষণ, ‘‘স্টার্ক বলের গতি কমানোর ক্ষেত্রে একেবারেই দক্ষ নয়। স্লোয়ার করার সময় ওর বল করার ভঙ্গি বদলে যায়। এতে ব্যাটারেরা আগে থেকেই ধরে ফেলতে পারে।’’ ওয়াসিম আক্রম বলেছেন, ‘‘শাহিন আফ্রিদিকে দেখুন। যে গতিতেই বল করুক, একই রকম ভাবে করে। একদম শেষ মুহূর্তে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করে। স্টার্ক এখানে পিছিয়ে রয়েছে। ও কী ভাবে বল ধরছে সেটা আগেই দেখতে পেয়ে যায় ব্যাটারেরা।’’

স্টার্ক অস্ট্রেলিয়ার হয়েও নিয়মিত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলেন না। ১২ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটজীবনে ৬০টি ২০ ওভারের ম্যাচ খেলেছেন দেশের হয়ে। অথচ টেস্ট খেলেছেন ৮৯টি। লাল বলের ক্রিকেটে স্টার্ক নিঃসন্দেহে বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলার। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেট এবং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের পার্থক্য বিস্তর। এটাই তফাত গড়ে দিচ্ছে টেস্টের স্টার্ক এবং টি-টোয়েন্টির স্টার্কের মধ্যে। তাঁর প্রধান অস্ত্র ইন সুইং মেশানো দ্রুত গতির ইয়র্কার। যে বলে বিশ্বের তাবড় ব্যাটারেরা পরাস্ত হয়েছেন। মার্চ-এপ্রিল-মে মাসের ভারতে স্টার্কের সেই বল নির্বিষ হয়ে গিয়েছে। তাঁর আর এক অস্ত্র ভিতরে ঢুকে আসা বাউন্সারও কাজে লাগছে না ভারতীয় পিচে। অফ স্টাম্প পড়ে যে বল সামান্য ভিতরের দিকে চলে যায় ব্যাটের কাছে এসে, সেটাও করতে পারছেন না। তাঁর পারার মতো কোনও আয়োজনই নেই আইপিএলে।

রান তোলার গতি রুখতে পারছেন না স্টার্ক। এ বারের আইপিএলে এখনও পর্যন্ত স্টার্ক খেলেছেন সাতটি ম্যাচ। ২৫ ওভার বল করে দিয়েছেন ২৮৭ রান। ওভার প্রতি ১১.৪৮ রান খরচ করে পেয়েছেন ৬ উইকেট। ম্যাচ প্রতি একটি উইকেটও পাননি। তাঁর বলের গতি কাজে লাগিয়ে রান তুলে নিচ্ছেন প্রতিপক্ষ দলের নীচের দিকের ব্যাটারেরাও। ২৫ কোটির বোলারের এমন দুর্দশা দেখে বিস্মিত নন বাংলার বোলিং কোচ শিবশঙ্কর পাল। তাঁর বক্তব্য, ‘‘স্টার্ককে দোষ দেওয়া যায় না। আইপিএল তো ব্যাটারদের জন্য হয়ে গিয়েছে। পিচে কিছুই নেই বোলারদের জন্য। এই গরমে সুইংও হচ্ছে না। মার তো খাবেই। টেস্ট ক্রিকেটের পারফরম্যান্স দিয়ে বিচার করলে হবে না। টেস্ট পাঁচ দিন খেলতে হয়। প্রথম বল থেকেই কেউ মারে না। সব বলেও মারার চেষ্টা করে না। স্টার্ক চেষ্টা করছে। কিন্তু কার্যকর হচ্ছে না। আইপিএলের পারফরম্যান্স দেখে কোনও বোলারের মান বিচার করা ঠিক নয়। এই ক’দিনের জন্য হঠাৎ কেউ ভাল বা খারাপ বোলার হয়ে যেতে পারে না।’’

প্রশ্ন উঠছে স্টার্ককে কেন প্রায় ২৫ কোটি টাকা দিয়ে কিনল কেকেআর। কলকাতা নিলামে দান ছেড়ে দিলেও স্টার্ক অন্য দলে ২১-২২ কোটি টাকায় বিক্রি হতেন। ২৪ কোটি ৫০ লাখও পেতে পারতেন। এক জন ক্রিকেটার শেষ পর্যন্ত কত টাকা পাবেন, তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না তাঁরা নিজেরা। ফ্র্যাঞ্চাইজ়িগুলিও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না অনেক ক্ষেত্রে। শক্তিশালী দল গঠনের জন্য পরিকল্পনা মতো প্রয়োজনীয় ক্রিকেটারকে পেতে ঝাঁপাতেই হয়। অভিজ্ঞ জোরে বোলার হিসাবে স্টার্ককে নিয়েছিল কেকেআর। সমালোচনার মুখে ‘ব্যর্থ’ স্টার্ককে বাইরে রেখেই পঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে শুক্রবার প্রথম একাদশ সাজিয়েছিলেন গৌতম গম্ভীরেরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement