৫৫ বলে ৯৩ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচের নায়ক ঋদ্ধিমান সাহা।
তিন বছর আগে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে আইপিএল ফাইনালে তাঁর ৫৫ বলে ১১৫ রানের বিধ্বংসী ইনিংস বিফলে গিয়েছিল কেকেআর সেই ম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়নের খেতাব পেয়ে যাওয়ায়।
তিন বছর পর এ বার আরব সাগরের তীরে ফের ঝড় উঠল ঋদ্ধিমান সাহার ব্যাটে। এ বার ৫৫ বলে ৯৩। এগারোটা চার, তিনটে ছয়। ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের মঞ্চ মাতিয়ে একা বঙ্গসন্তানই এ বার উল্টে চাপে ফেলে দিন কলকাতা নাইট রাইডার্সকে। বৃহস্পতিবার ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স জিতলে নাইটদের প্লে অফে খেলা পাকা হয়ে যেত। কিন্তু পঞ্জাবের রুদ্ধশ্বাস জয়ে তাঁদের প্লে অফ ভবিষ্যৎ ঝুলেই রইল।
বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে যা অবস্থা দাঁড়াল, তাতে শনিবার ইডেনে মুম্বই বধ করতে না পারলে গৌতম গম্ভীরদের হাতে আর থাকবে না নিজেদের ভাগ্য। চলে যাবে অন্যদের হাতে। সুতরাং শনিবার জয় ছাড়া প্লে অফের দরজা খোলার কোনও উপায় নেই নাইটদের।
কিন্তু যে ভাবে পঞ্জাবের তোলা ২৩০ রান তাড়া করে সাফল্যের দরজায় মুম্বইকে প্রায় এনেই দিয়েছিলেন কায়রন পোলার্ড, হার্দিক পান্ড্যরা, তাতে শনিবার গম্ভীরদের রোহিতবাহিনীকে হারাতে যে প্রচুর কাঠ-খড় পোড়াতে হবে, তার ইঙ্গিতই পাওয়া গেল। ওয়াংখেড়েতে বসে স্বচক্ষে ব্যাটসম্যানদের এই ধ্বংসলীলা দেখলেন ভারতীয় ক্রিকেটের দুই কিংবদন্তি সচিন তেন্ডুলকর ও বীরেন্দ্র সহবাগ।
আরও পড়ুন: এই টুর্নামেন্টে কোহালি কিছুই করেননি: পন্টিং
হাসিম আমলা দেশে ফিরে যাওয়ায় ঋদ্ধিকে দিয়ে ওপেন করানোর ফাটকা খেলেছিলেন ম্যাক্সওয়েল ও দলের মেন্টর সহবাগ। সেটাই কাজে লেগে গেল। ওপেন করতে নেমে ঝড় তুলে দেন ঋদ্ধি। হরভজন সিংহকে মিড উইকেটের উপর দিয়ে ছয় হাঁকিয়ে পঞ্চাশে পৌঁছন তিনি। খেলার শেষে ম্যাচের সেরা ঋদ্ধিমান বলেন, ‘‘প্রথম ছ’ওভারেই চালিয়ে খেলার পরিকল্পনা নিয়ে নেমেছিলাম। আট ওভারেই যখন একশো উঠে যায়, তখন ঠিক করে নিই দুশো তুলতে হবে। ম্যাক্সওয়েল ক্রিজে এসে বলে, ‘চালিয়ে যাও। না পারলে স্ট্রাইক রোটেট করো’। দু’জনেই চালিয়ে খেলি।’’ ওপেন করতে যাওয়া নিয়ে প্রশ্নে আত্মবিশ্বাসী ঋদ্ধি বললেন, ‘‘ওপেন কেন, আমাকে দল যে জায়গাতেই ব্যাট করতে পাঠাক, আমি তৈরি। দলের জেতাটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় ব্যাপার।’’
মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের সামনে ২৩০ রানের পাহাড় তুলে কিংগস ইলেভেন পঞ্জাব বুঝিয়ে দেয় তারা প্লে অফে উঠতে কতটা মরিয়া। এক দিকে ঋদ্ধিমান ও অন্য দিকে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। এই দুই রানে ফেরা আগ্রাসী ব্যাটসম্যানের ৬৩ রানের পার্টনারশিপ যেমন পঞ্জাবকে রানের পাহাড় তুলতে সাহায্য করে, তেমনই তার আগে মার্টিন গাপ্টিলের সঙ্গে ঋদ্ধির ৬৮-র জুটিও ছিল সমান বিধ্বংসী। আইপিএলের দশ বছরে সবচেয়ে বেশি ২১৭ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড রয়েছে। মুম্বই আর একটু হলেই সেই রেকর্ড ভেঙেই দিচ্ছিল প্রায়। কিন্তু শেষ দুই ওভারে পঞ্জাবের দুই পেসার সন্দীপ শর্মা ও মোহিত শর্মার বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং-ই বিধ্বংসী মেজাজে থাকা পোলার্ডকে আটকে দেয়।
ষোলো নম্বর ওভারে ম্যাট হেনরিকে পোলার্ড (২৪ বলে ৫০) ও পান্ড্য (১৩ বলে ৩০) দুটো করে ছয় হাঁকিয়ে ম্যাচ প্রায় নিজেদের দিকে ঘুরিয়েই নিয়েছিলেন। এর পর মোহিত শর্মাও এক ওভারে ১৬ রান দিয়ে মুম্বইকে জয়ের আরও কাছাকাছি নিয়ে চলে আসেন। এই সময় বাউন্ডারি লাইনে সহজ ক্যাচও ফস্কান ম্যাক্সওয়েল। শেষ দুই ওভারে ২৩ রান দরকার ছিল পোলার্ডদের। কিন্তু সন্দীপ সাত রান ও মোহিত আট রান দেওয়ায় আর লক্ষ্যে পৌঁছনো হয়নি।
জয়ী দলের ক্যাপ্টেন ২১ বলে ৪৭ রান করা ম্যাক্সওয়েল বলেন, ‘‘আমার ক্যাচ ফস্কানোর জন্য ম্যাচটাও প্রায় ফস্কেই গিয়েছিল। দুটো ক্যাচ পড়েছে। রান আউটের সুযোগও নষ্ট করেছি। কিন্তু শেষ দুটো ওভার অসাধারণ করেছে আমাদের দুই বোলার। ওদের জন্যই জিততে পারলাম।’’