ফাইল চিত্র।
জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে সময় কাটানোর উপযুক্ত ব্যবস্থা রয়েছে আইপিএলের বেশির ভাগ শিবিরে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সময়ও প্রত্যেক টিম হোটেলে ক্রিকেটারদের বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়। বিভিন্ন ইন্ডোর গেমস থেকে সুইমিং, সিনেমা দেখার জন্য ছোট থিয়েটার রুমের ব্যবস্থাও থাকে। তবুও টানা একটি হোটেলের মধ্যে বন্দি থাকা সহজ নয়। যা আগেও বলে গিয়েছেন বিরাট কোহলি থেকে রোহিত শর্মারা। বলয়ের মধ্যে থেকেই নিজেদের ক্লান্তি কাটানোর আরও একটি উপায় খুঁজে বার করেছেন ক্রিকেটারেরা।
ইনস্টাগ্রামে ‘রিলস’ তৈরি করে বিনোদনের আরও একটি পথ বেছে নিচ্ছেন ক্রিকেটারেরা। ‘রিলস’ এমন একটি অ্যাপ্লিকেশন, যেখানে অভিনয়, নাচ, ফিটনেস ভিডিয়ো তৈরি করে গণমাধ্যমে আপলোড করা যায়। তবে এই ভিডিয়ো হয় খুবই অল্প সময়ের। ১৫-২০ সেকেন্ডের মতো। সেই ‘রিলস’ নিয়েই এখন মেতে উঠেছেন ক্রিকেটারেরা। সুরক্ষা বলয়ের বদ্ধ আবহ থেকে নিজেদের কিছুটা রেহাই দেওয়ার জন্যই এই পথ বেছে নিয়েছেন রবীন্দ্র জাডেজা, শ্রেয়স আয়াররা।
ডেভিড ওয়ার্নারের হাত ধরেই ক্রিকেটারদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘রিলস’। দক্ষিণ ভারতীয় গানের সঙ্গে নেচে ভক্তদের মন জয় করেছেন তিনি। স্ত্রী, সন্তানদের নিয়েও বিভিন্ন ভিডিয়ো তৈরি করে গণমাধ্যমে তুলে ধরেন ওয়ার্নার। তাঁর ভিডিয়োর প্রশংসাও করেছেন সিনেমা জগতের তারকারা। কখনও আল্লু অর্জুন অস্ট্রেলীয় ওপেনারের ভিডিয়ো দেখে মন্তব্য করছেন, কখনও আবার রণবীর সিংহ মুগ্ধ হয়ে দেখছেন ওয়ার্নারের প্রতিভা। ধীরে ধীরে এই প্রবণতা ছড়িয়ে পড়েছে আইপিএলের বলয়ের মধ্যেও।
রোহিত শর্মা, শ্রেয়স আয়ার ও শার্দূল ঠাকুরের একটি নাচের ভিডিয়ো যেমন জনপ্রিয় হয়েছে, ঠিক তেমনই ‘পুষ্পা’ সিনেমার সংলাপ বলে নজর কেড়েছেন রবীন্দ্র জাডেজা। বিরাট কোহলি অন্য দিকে নিজের ফিটনেস ভিডিয়ো তুলে ধরেছেন এর মাধ্যমে। নাইট শিবিরে যোগ দেওয়ার আগে বেঙ্কটেশ আয়ার ও আবেশ খানও নতুন একটি নাচের ভিডিয়ো তৈরি করে সমর্থকদের মন জয় করে নিয়েছেন। ‘রিলস’ শুধুমাত্র সমর্থকদের বিনোদনের জন্যই নয়, ক্রিকেটারদেরও চাপমুক্ত হতে সাহায্য করছে বলেই মত ক্রীড়া মনোবিদ অনুশীলা ব্রহ্মচারীর। আনন্দবাজারকে তিনি বলছিলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতির আগে সারা দিন ধরে ম্যাচ খেলার পরে ক্রিকেটারেরা নিজেদের ক্লান্তি দূর করার জন্য বাইরে বেরোতেন। কেউ পাব-এ যেতেন। পরিবারের সঙ্গে কেউ ভাল রেস্তরাঁয় ডিনার করতেন। তাতেই সারা দিনের শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি দূর হয়ে যেত। এখন বলয়ের মধ্যে সারা দিন থাকায় শারীরিক ক্লান্তি দূর হলেও মানসিক ভাবে ক্রিকেট থেকে কিন্তু বাইরে কেউ বেরোতে পারছেন না।’’ যোগ করেন, ‘‘ধকল সামলানোর বিভিন্ন উপায় খুঁজে চলেছেন ক্রিকেটারেরা। ‘রিলস’ তার মধ্যে একটি জনপ্রিয় মাধ্যম, যার সৌজন্যে কিছুটা হলেও আনন্দ ভাগ করে নিতে পারছেন সকলে।’’
অনুশীলা জানিয়েছেন, শুধুমাত্র ইন্ডোর গেমিং অথবা সবাই বসে একসঙ্গে গল্প করলেও কিন্তু ‘স্ট্রেস’ কমছে না। তাই ‘রিলস’-এর পথ বেছে নিয়েছেন অনেকেই। যা এক প্রকার বিনোদনের মাধ্যমও হয়ে উঠছে ক্রিকেটার এবং সমর্থকদের মধ্যে। তাঁর কথায়, ‘‘ছোট ছোট এই ভিডিয়োর মাধ্যমে দর্শকেরাও কিন্তু জানতে পারছেন, কোন ক্রিকেটার ভাল নাচ করেন, কে গান করতে পারেন, কে অভিনয়ে দক্ষ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রত্যেক ক্রিকেটার কিন্তু আমাদের মতোই মানুষ। তাঁদের মধ্যেও অনেক রকম গুণ থাকতে পারে। বলয়ের মধ্যে আনন্দের সঙ্গে থাকতে গেলে ক্রিকেটারদেরও নিজেদের বিনোদনের পথ বেছে নিতে হবে এ ভাবেই।’’