ম্যাচ জিতে উল্লাস কেকেআরের ক্রিকেটারদের। ছবি: আইপিএল।
আইপিএলে মুম্বই বরাবরই কেকেআরের কঠিন প্রতিপক্ষ। অন্তত দু’দলের পরিসংখ্যান তাই বলে। আগের ৩২ বারের সাক্ষাতে মুম্বই জিতেছিল ২৩ বার। কেকেআর ৯ বার। শুক্রবার ওয়াংখেড়েতে খেলার প্রথম আধ ঘণ্টা দেখে মনে হয়েছিল আরও এক বার হেরে মাঠ ছাড়তে হবে কেকেআরকে। কিন্তু এ বার কলকাতা আগের সব বারের থেকে আলাদা। এ বার কোনও এক জনের উপর নির্ভরশীল নয় তারা। সেটা আরও এক বার দেখা গেল। সুনীল নারাইন, ফিল সল্টদের ব্যর্থতার দিনে বেঙ্কটেশ আয়ারের অর্ধশতরান ও অভিজ্ঞ মণীশ পাণ্ডের ব্যাটে ১৬৯ রান করল কেকেআর। পরে বোলারেরা মুম্বইকে আটকে রাখলেন। ৪ উইকেট নিলেন মিচেল স্টার্ক। ফলে চলতি আইপিএলে মুম্বইকে হারিয়ে নিজেদের সাত নম্বর জয় পেয়ে গেল কলকাতা। ওয়াংখেড়েতে ১২ বছর পর জিতল কেকেআর। প্লে-অফের দিকে আরও এক পা এগিয়ে গেলেন শ্রেয়স আয়ারেরা। অন্য দিকে এ বারের আইপিএল থেকে বিদায় প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেল মুম্বইয়ের।
ওয়াংখেড়েতে নতুন পিচে এই ম্যাচ হওয়ায় টস জিতে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেন হার্দিক পাণ্ড্য। সেই সিদ্ধান্ত কাজে লাগে। পিচে পড়ে কিছু বল থমকাচ্ছিল। কয়েকটি বল আবার নিচু হচ্ছিল। ফলে শট খেলতে সমস্যা হচ্ছিল ব্যাটারদের। প্রথম ওভারেই নুয়ান তুষারার বলে বড় শট খেলতে গিয়ে আউট হন ফিল সল্ট। ৫ রান করেন তিনি। অঙ্গকৃশ রঘুবংশী শুরুটা ভাল করেন। তুষারার বলে দু’টি ছক্কা মারেন তিনি। কিন্তু বেশি ক্ষণ খেলতে পারেননি তিনি। ১৩ রান করে তুষারার বলেই ফেরেন রঘুবংশী।
একই হাল হয় শ্রেয়সেরও। ব্যাট করতে নেমে প্রথম বলেই চার মারেন তিনি। কিন্তু তুষারার সেই ওভারেই আউট হন তিনি। ৬ রান করেন কেকেআর অধিনায়ক। আউট হওয়ার ধরন দেখে বোঝা যাচ্ছিল, ঠিক মতো ব্যাটে-বলে হচ্ছিল না। সুনীল নারাইনও শুরু থেকে নিজের স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারছিলেন না। হার্দিকের বলে বোল্ড হন তিনি। কেকেআরের ভরসা রিঙ্কু সিংহেরও দিনটা ভাল যায়নি। ৯ রান করে পীযুষ চাওলার বলে তাঁর হাতে ক্যাচ দিয়েই ফিরে যান রিঙ্কু। অনেক আগেই ব্যাট চালান তিনি। তাই বল হাওয়ার ওঠে। ৫৭ রানে ৫ উইকেট পড়ে যায় কলকাতার।
বাধ্য হয়ে ব্যাট করার সময়ই ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসাবে মণীশকে নামিয়ে দেয় কেকেআর। সেই সিদ্ধান্ত তফাত গড়ে দেয়। নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগান মণীশ। বেঙ্কটেশের সঙ্গে মিলে দলের রান এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। ঝুঁকি না নিয়ে দৌড়ে রান করার দিকে বেশি নজর দেন তাঁরা। মাঝেমধ্যে খারাপ বল পেলে বড় শট খেলছিলেন। ভেঙে পড়া ইনিংস সামলান তাঁরা।
আগের মরসুমে ওয়াংখেড়েতে শতরান করেছিলেন বেঙ্কটেশ। এই ম্যাচেও ৩৬ বলে অর্ধশতরান করেন তিনি। ৮৩ রানের জুটি হয় দু’জনের মধ্যে। রানের গতি বাড়াতে গিয়ে ৪২ রানের মাথায় আউট হন মণীশ। আন্দ্রে রাসেল প্রথম বলে ছক্কা মারলেও বেশি ক্ষণ টিকতে পারেননি। বেঙ্কটেশের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হন তিনি। রাসেলের উইকেট কেকেআরকে বড় ধাক্কা দেয়।
শেষ তিন ওভারে পর পর উইকেট পড়ায় কেকেআরের রান তোলার গতি কমে যায়। যশপ্রীত বুমরার সামনে রমনদীপ সিংহ ও মিচেল স্টার্ক রান পাননি। বাধ্য হয়ে বেঙ্কটেশকে একাই সব বল খেলতে হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত এক বল বাকি থাকতে ১৬৯ রানে অল আউট হয়ে যায় কেকেআর। ৭০ রান করে আউট হন বেঙ্কটেশ। অন্তত ১৫ রান কম হয় তাদের।
১৭০ রানের লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নেমে শুরু ভাল হয়নি মুম্বইয়েরও। স্টার্কের বলে একটি চার ও একটি ছক্কা মারলেও পরের বলেই বোল্ড হয়ে যান ঈশান কিশন। তিন নম্বরে নমন ধীরকে নামিয়ে দেয় মুম্বই। রোহিত ও নমন বুদ্ধি করে খেলছিলেন। প্রতি ওভারে একটি বা দু’টি বলে বড় শট মারার চেষ্টা করছিলেন তাঁরা। শিশির পড়ায় বল করতে সমস্যা হচ্ছিল। বাধ্য হয়ে পাওয়ার প্লে-র মধ্যেই বরুণ চক্রবর্তীর হাতে বল তুলে দেন শ্রেয়স। প্রথম বলেই নমনকে আউট করেন তিনি। ৩৮ রানে মুম্বইয়ের দ্বিতীয় উইকেট পড়ে। পাওয়ার প্লে-র শেষ ওভারে বল করতে আসেন নারাইন। তাঁর বলে পুল মারতে গিয়ে ১১ রানের মাথায় আউট হয়ে যান রোহিত। ৪৬ রানে ৩ উইকেট পড়ে যায় মুম্বইয়ের।
শ্রেয়স জানতেন, এই ম্যাচ জিততে হলে নিজের সেরা বোলারদের আগেই বল করিয়ে দিতে হবে। সেটাই করেন তিনি। বরুণের বলে বড় শট মারতে গিয়ে ৪ রান করে আউট হন তিলক বর্মা। নেহাল ওয়াধেরা ও হার্দিকও রান পাননি। নারাইনের বলে ওয়াধেরা ও রাসেলের বলে হার্দিক আউট হয়ে যান। ৭১ রানে ৬ উইকেট পড়ে যায় মুম্বইয়ের। চাপে পড়ে যায় তারা।
মুম্বইকে জেতানোর সব দায়িত্ব গিয়ে পড়ে সূর্যকুমার যাদব ও টিম ডেভিডের উপর। কারণ, তার পরে আর ব্যাটার ছিল না। সূর্য রাসেলের ওভারে একটি ছক্কা মারেন। যে পিচে বাকিদের খেলতে সমস্যা হচ্ছিল সেই পিচে সহজে খেলছিলেন তিনি। বৈভবের ওভারকে নিশানা করেন তিনি। তিনটি চার ও একটি ছক্কা মারেন। ৩০ বলে অর্ধশতরান করেন সূর্য। বৈভবের সেই ওভারে ওঠে ২০ রান। ধীরে ধীরে খেলা ঘুরিয়ে দিচ্ছিলেন তিনি।
শেষ ছ’ওভারে জিততে দরকার ছিল ৬০ রান। আইপিএলে সেই রান তোলা কঠিন নয়। কেকেআরের দরকার ছিল উইকেট। কিন্তু সেটাই আসছিল না। শেষ পর্যন্ত কলকাতাকে স্বস্তি দেন রাসেল। তাঁর ফুলটসে ছক্কা মারতে যান সূর্য। কিন্তু ঠিকমতো ব্যাটে-বলে না হওয়ায় বল উপরে উঠে যায়। ভাল ক্যাচ ধরেন সল্ট। ৩৫ বলে ৫৬ রান করে আউট হন সূর্য। ডেভিড একা পড়ে যান। কিন্তু হাল ছাড়েননি তিনি। ১২ বলে দরকার ছিল ২৬ রান। ১৯তম ওভারে স্টার্কের প্রথম বলেই ছক্কা মারেন তিনি। কিন্তু দ্বিতীয় বলে শ্রেয়সের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ডেভিড। ২৪ রান করেন তিনি। পরের বলেই আউট হন পীযূষ চাওলা।
সেই ওভারেই মুম্বইয়ের ইনিংস শেষ করে দেন স্টার্ক। জেরাল্ড কোয়েৎজ়িকে বোল্ড করেন তিনি। সাত বল বাকি থাকতে ১৪৫ রানে অল আউট হয়ে যায় মুম্বই। ২৪ রানে ম্যাচ জেতে কেকেআর। চলতি আইপিএলে প্রথম বার দেখা গেল পুরনো স্টার্ককে। ৩৩ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন তিনি।