কথায় আছে, দল যতটা ভাল, অধিনায়কও ততটাই ভাল। কিন্তু নেতা হিসেবে অধিনায়কের কাজই হল সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া। এ বারের আইপিএলে ১০ জন অধিনায়কও তাই সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
১০ জন অধিনায়কের মধ্যে কেউ প্রথম বার নেতৃত্ব দিচ্ছেন, কেউ বা এ কাজে বেশ পুরনো। কিন্তু একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার পালা চলছেই।
কেউ ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে মাত করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন, আবার কেউ দলের জন্য এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন যা চমকে দিচ্ছে। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কাদের পারফরম্যান্স কী রকম। পয়েন্ট তালিকায় থাকা দল অনুসারে অধিনায়কদের স্থান দেওয়া হয়েছে।
সঞ্জু স্যামসন: এই মুহূর্তে রাজস্থান পয়েন্ট তালিকায় সবার উপরে রয়েছে। দলের ব্যাটাররা দুর্দান্ত খেলছেন। তবে অধিনায়ক সঞ্জুও পিছিয়ে নেই। আট ম্যাচে তিনি ২৫৫ রান করে ফেলেছেন। একটি অর্ধশতরান রয়েছে। চাপের মুখেও মাথা ঠান্ডা রাখার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে তাঁর। গোটা দলকে এক সুতোয় গেঁথে ফেলেছেন তিনি। পাশাপাশি কিপিংয়ের দক্ষতাও অসামান্য।
হার্দিক পাণ্ড্য: গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর কার্যত ‘ভিলেন’ বানিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। এ বার নিলামে আগে ছেড়ে দেয় মুম্বই ইন্ডিয়ান্সও। নতুন দল গুজরাতের অধিনায়ক হন। প্রথম বার নেতৃত্বের দায়িত্ব পেয়েই চমকে দিলেন হার্দিক। ছয় ম্যাচে ২৯৫ রান করেছেন তিনি। তিনটি অর্ধশতরানও রয়েছে। বল হাতেও দুরন্ত খেলছেন। সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া বলতে যা বোঝায়, সেটাই করছেন তিনি। দলও দৌড়চ্ছে পয়েন্ট তালিকায়।
কেন উইলিয়ামসন: আইপিএলের দুই বিদেশি অধিনায়কের একজন। সম্ভবত এই আইপিএলে একমাত্র অধিনায়ক, যিনি নিজে খারাপ খেললেও দল দুর্দান্ত খেলছে। প্রথম দুই ম্যাচে হারার পর টানা পাঁচটি ম্যাচে জিতেছে তারা। তবে উইলিয়ামসন নিজে বেশ ব্যর্থ। সাত ম্যাচে মাত্র ১৪৩ রান করেছেন। অর্ধশতরান মাত্র একটি। কিন্তু বুদ্ধিতে তিনি টেক্কা দিচ্ছেন বাকিদের।
কেএল রাহুল: পঞ্জাব ছেড়ে লখনউয়ে যোগ দিলেও রাহুলের ব্যাটে রান কমেনি। চলতি আইপিএলে দুর্দান্ত খেলছেন তিনি। দু’টি শতরান এর মধ্যেই হয়ে গিয়েছে। ব্যাটে ভাল করায় আত্মবিশ্বাসের ছাপ পড়ছে তাঁর অধিনায়কত্বেও। দলকে দুর্দান্ত ভাবে পরিচালনা করছেন তিনি।
ফ্যাফ ডুপ্লেসি: আইপিএলের আর এক বিদেশি অধিনায়ক। বিরাট কোহলী দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর তাঁর প্রতি আস্থা রাখা হয়েছে। তবে এখনও সমর্থকদের আস্থা পাননি তিনি। দেশকে সফল ভাবে নেতৃত্ব দিলেও আইপিএলে তাঁর পূর্ণ প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। যদিও ব্যাট হাতে তিনি সফল। এক বার শতরানের দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিলেন। তবে প্লে-অফে উঠতে গেলে আরও ক্ষুরধার হতে হবে তাঁকে।
ময়ঙ্ক অগ্রবাল: রাহুল দল ছাড়ায় আচমকা নেতৃত্বের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। কিন্তু এখনও সফল হতে পারেননি। না তাঁর দল এগোচ্ছে, না তিনি নিজে ব্যাট হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারছেন। পঞ্জাব দলে একাধিক পাওয়ার হিটার রয়েছে। তবে তা শুধু খাতায়-কলমে। সতীর্থদের থেকে সেরাটা এখনও বের করে আনতে পারেননি। ধারাবাহিকতার অভাব রয়েছে। সাত ম্যাচে মাত্র ১৩৬ রান করেছেন তিনি।
ঋষভ পন্থ: এই আইপিএলে এখনও পর্যন্ত বিতর্কে জড়ানো একমাত্র অধিনায়ক। রাজস্থানের বিরুদ্ধে ম্যাচে শেষ দিকে আম্পায়ার নো বল না দেওয়ায় দলই তুলে নিতে চেয়েছিলেন। বাকিরা অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে তাঁকে নিরস্ত করেন। কিন্তু দিল্লির জনপ্রিয়তা এক ধাক্কায় অনেক কমে যায়। পন্থের আত্মবিশ্বাসও বিরাট ধাক্কা খেয়েছে। বাকি ম্যাচকে দলকে টেনে তোলাই তাঁর কাছে অন্যতম চ্যালেঞ্জ।
শ্রেয়স আয়ার: কলকাতা তাঁকে কেনার পরেই নেতৃত্বের দায়িত্ব তুলে দিয়েছিল। কিন্তু সেই আস্থার দাম রাখতে ব্যর্থ শ্রেয়স। বার বার তাঁর দল নির্বাচন এবং ব্যাটিং অর্ডার কাঠগড়ায় উঠেছে। দল টানা চার ম্যাচে হেরেছে। জয়ে ফেরানোর কোনও মন্ত্রও তাঁর কাছে রয়েছে বলে মনে হয় না। ব্যাট হাতে আট ম্যাচে ২৪৮ রান করেছেন তিনি।
রবীন্দ্র জাডেজা: ধোনি সরে যাওয়ার পর তাঁকেই নেতা হিসেবে বেছে নিয়েছে চেন্নাই। কিন্তু প্রথম মরসুমেই ধাক্কার পর ধাক্কা খেয়েছেন তিনি। দল মাত্র দু’টি জয় পেয়েছে। অনেকেই ধরে নিয়েছেন, তিনি স্রেফ খাতায়-কলমে অধিনায়ক। কারণ মাঠে বেশিরভাগ সিদ্ধান্তই নিচ্ছেন ধোনি। বলা হচ্ছে, জাডেজাকে নাকি তৈরি করার প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু এই মরসুমে চেন্নাইয়ের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা কার্যত নেই। ব্যাট বা বল কোনওটিতেই ছাপ ফেলতে পারেননি। আট ম্যাচে মাত্র ১১২ রান করেছেন।
রোহিত শর্মা: আইপিএলের সব থেকে সফল অধিনায়কের দুর্দশা থেকে অনেকেই অবাক। আটটি ম্যাচ খেলেছে মুম্বই। দলকে এক বারও জয়ের মুখ দেখাতে পারেননি তিনি। মুম্বইয়ের দৌড় কার্যত শেষ। বাকি ম্যাচগুলি তাদের কাছে সম্মানরক্ষার লড়াই।