কলকাতাকে জেতালেন কামিন্স ছবি আইপিএল
একটা সময় মনে হচ্ছিল মুম্বই গাঁট বোধহয় এ বারও থেকে যাবে কলকাতার। কিন্তু একজনই এসে গোটা চিত্রনাট্য বদলে দিলেন। ঘটনাচক্রে বুধবারই প্রথম বার মরসুমের প্রথম ম্যাচ খেললেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার প্যাট কামিন্স কলকাতার হয়ে প্রথম ম্যাচে নেমেই নায়ক হয়ে গেলেন। তবে বল হাতে নয়, ব্যাট হাতে।
১৫ বলে ৫৬! অর্ধশতরান এল ১৪ বলে। ১৫ ওভারের পর কলকাতার জেতার জন্য দরকার ছিল ৩৫ রান। কেউ ভাবতেও পারেননি পরের ওভারেই কলকাতা জিতে যাবে। মুম্বইয়ের হয়ে এতক্ষণ যিনি সবচেয়ে ভাল বল করছিলেন, সেই ড্যানিয়েল সামস এক ওভারে আচমকা খলনায়ক হয়ে গেলেন। সব হিসেব বদলে দিলেন তিনি। প্যাট কামিন্স। বল হাতে দু’উইকেট নিলেও ৪৯ রান হজম করেছিলেন। বাকি বোলারদের থেকে অনেক বেশি। ব্যাট হাতে যাবতীয় রাগ যেন মিটিয়ে নিলেন তিনি। প্রথমে ব্যাট করে মুম্বই তুলেছিল ১৬১/৪। কলকাতা ২৪ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ পকেটে পুরে নিল।
টসে জিতে ফিল্ডিং নিলেও শ্রেয়সের সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেকেই বিস্মিত হয়েছিলেন। কারণ পুনের মাঠে শিশিরের প্রভাব সে ভাবে টের পাওয়া যায় না। যদিও মুম্বই অধিনায়ক রোহিত টসে হেরে মুখটাই এমন বেজার করে ফেললেন যা দেখে মনে হল মাঠে নামার আগেই তাঁরা হেরে বসে আছেন। ম্যাচেও তার ছাপ দেখা গেল। এমনিতে কলকাতাকে সামনে তাঁর জ্বলে ওঠার নজির বহু রয়েছে। কিন্তু বুধবার প্রথম বল থেকেই অস্বস্তিতে ছিলেন রোহিত। তৃতীয় ওভারেই তিনি ফিরে যান উমেশ যাদবের বলে। দলের রান তখন মাত্র ছয়।
ক্রিকেটদুনিয়ায় ‘বেবি এবি’ নামে পরিচিত ডেওয়াল্ড ব্রেভিসের বুধবারই আইপিএলে অভিষেক হল। শুরুটাও করেছিলেন একদম এবি ডিভিলিয়ার্সের মতোই। প্রথম থেকেই আক্রমণাত্মক। কিন্তু দু’টি চার এবং দু’টি ছয় মারার পর একটু বেশি আগ্রাসী হতে গিয়ে উইকেট খোয়ালেন। বরুণ চক্রবর্তীর বল এগিয়ে মারতে গিয়েছিলেন। দুরন্ত স্টাম্পিং স্যাম বিলিংসের। মাঝে ব্রেভিসের একটি ক্যাচ মিস করেন রহাণে। আদতে সেটি ছিল উইকেটকিপারের লোপ্পা ক্যাচ। কিন্তু যোগাযোগের অভাবের কারণে সুযোগ হাতছাড়া হয়।
অতীতে কলকাতার হয়ে মুম্বইকে হারিয়েছেন সূর্যকুমার। আবার উল্টোটাও হয়েছে। বুধবার পুরনো দলের বিরুদ্ধে ফের জ্বলে উঠতে দেখা গেল সূর্যকে। প্রথম দিকে একটু ধীরগতিতে খেলে ইনিংস গড়ার চেষ্টা করছিলেন। সূর্যের তাণ্ডব দেখা গেল শেষ চার ওভারে। ১৬ ওভার পর্যন্ত মুম্বইয়ের রান ছিল ৯৮। মনে করা হচ্ছিল, ১৩০-এর আশেপাশে তুলতে পারে তারা। কিন্তু সূর্যরা তুললেন ৬৩। যোগ্য সঙ্গত দিলেন তিলক বর্মা এবং কায়রন পোলার্ড। বরুণের ১৭তম ওভার থেকে ১৭ রান এল। এর পর সুনীল নারাইনের ওভার থেকে ১৪ এবং কামিন্সের ওভার থেকে ২৩ রান এল। কামিন্সের ওভারে তো জ্বলে উঠলেন পোলার্ড। তিনটি ছক্কার সাহায্যে ৫ বলে ২২ করে গেলেন। সূর্য আউট হন ৫২ রানে।
কলকাতারও শুরুটা ভাল হয়নি। অজিঙ্ক রহাণেকে শুরু থেকে নড়বড়ে দেখাচ্ছিল। শেষমেশ সাত রানের মাথায় টাইমল মিলসের বল তুলে মারতে গিয়ে ফিরে গেলেন। তিনে নেমেছিলেন শ্রেয়স। কিন্তু অধিনায়কোচিত ইনিংস দেখা গেল না তাঁর থেকে। ১০ রানেই আউট হলেন অধিনায়ক। স্যাম বিলিংস এসে চালিয়ে খেলার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু টিকতে পারলেন না তিনিও। সব আশা-ভরসা ছিলেন তখন আন্দ্রে রাসেলই। আগের ম্যাচে তাঁর ব্যাটে ঝড় দেখে মনে করা হয়েছিল, মুম্বইয়ের বিরুদ্ধেও সে রকম কিছু আসতে চলেছে। কিন্তু হতাশ করলেন দ্রে রাস। রাসেলকে দ্রুত ফেরানোর লক্ষ্যে বুমরাকে এনেছিলেন রোহিত। সেই ওভারে বেঁচে গেলেও, পরের বলেই মিলস তুলে নিলেন রাসেলকে। কলকাতার হাত থেকে ম্যাচ ওই ওভারেই প্রায় বেরিয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু সেটা হল না কামিন্সের সৌজন্যে। প্রথম থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিং করছিলেন তিনি। ১৫ বলে ৫৬ রানের ইনিংসে রয়েছে চারটি চার এবং ছ’টি ছয়। কৃতিত্ব প্রাপ্য বেঙ্কটেশ আয়ারেরও। তিনি একটা দিক ধরে না রাখলে কলকাতার পক্ষে এই রান তাড়া করা মুশকিল হয়ে যেত। তিনি শেষ পর্যন্ত ৪১ বলে ৫০ রানে অপরাজিত থাকলেন।