চেন্নাইকে হারিয়ে দিল গুজরাত। ছবি: আইপিএল
নিয়ন্ত্রণে থাকা ম্যাচও একটা সময়ে চলে গিয়েছিল হাতের বাইরে। তবে মুখে হাসি শেষ পর্যন্ত বজায় থাকল হার্দিক পাণ্ড্যের। গুরু মহেন্দ্র সিংহ ধোনির চেন্নাইকে তাঁর দল হারিয়ে দিল পাঁচ উইকেটে। জিতেই এ বারের আইপিএল অভিযান শুরু করল গুজরাত।
গত বছর গুজরাতকে একের পর এক ম্যাচে জিতিয়েছিলেন রাহুল তেওটিয়া এবং রশিদ খান। শেষ দিকে মাথা ঠান্ডা রেখে তাঁদের জিতিয়ে দেওয়া নজর এড়ায়নি। বছর ঘুরলেও একই রকম আছেন তেওটিয়া। ব্যাট করতে নেমে প্রথম দিকে একটু বেশি বল খেলে ফেলেছিলেন। আক্ষেপ মিটিয়ে দিলেন শেষে। তুষার দেশপান্ডেকে ছয় এবং চার মেরে ম্যাচ জিতিয়ে দিলেন তিনি।
টসে জিতে হার্দিকের বল করার সিদ্ধান্তেই মোটামুটি ম্যাচের ভবিষ্যৎ বোঝা হয়ে গিয়েছিল। মোতেরা স্টেডিয়ামের উইকেটে বোলারদের জন্যে সে ভাবে কিছুই ছিল না। তবু প্রথম দিকে ব্যাট করে ধোনিরা মোটামুটি ভদ্রস্থ একটা স্কোর খাড়া করেছিলেন। যদিও গুজরাতকে হারানোর মতো লড়াকু স্কোর তা ছিল না। ম্যাচের শেষে ধোনিও যা স্বীকার করে নিলেন।
বছর তিনেক আগে আইপিএলের সর্বোচ্চ স্কোরার হয়েছিলেন রুতুরাজ গায়কোয়াড়। সেরা উঠতি প্রতিভাও হয়েছিলেন। তিনি যে বদলাননি তার প্রমাণ পাওয়া গেল আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচেই। একা কুম্ভ হয়ে লড়ে গেলেন রুতুরাজ। উল্টো দিকে কোনও সতীর্থকে সে ভাবে পাননি। কিন্তু নিজে কোনও ভাবেই প্রতিপক্ষের পাতা ফাঁদে পা দেননি।
গত বার চেন্নাই যে টুকু ভাল খেলেছিল, তাতে ভূমিকা ছিল ডেভন কনওয়ে। শুরুর দিকে দলের বড় রানের ভিতটা গড়ে দিতেন তিনিই। সেই কনওয়ে এ বার প্রথম ম্যাচে হতাশ করলেন। তৃতীয় ওভারেই মহম্মদ শামির বলে তাঁর স্টাম্প ছিটকে যায়।
চেন্নাইয়ের হয়ে ধস সামাল দেন রুতুরাজ এবং মইন আলি। ইংরেজ ক্রিকেটারই বরাবরই উপর দিকে এসে ঝোড়ো ব্যাটিং করতে পারেন। এ দিনও তার ব্যতিক্রম হল না। গুজরাতের ব্যাটারদের শাসন করে শুরু থেকে চালাতে শুরু করলেন। মাঝে এক বার তাঁর বিরুদ্ধে এলবিডব্লিউয়ের আবেদন হয়েছিল। ডিআরএস নিয়ে সে যাত্রা বেঁচে যান মইন। যদিও দুটি বল পরেই আউট।
প্রচুর টাকা খরচ করে গত নিলামে বেন স্টোকসকে কিনেছিল চেন্নাই। লক্ষ্য, অলরাউন্ডার স্টোকসকে কাজে লাগানো। কিন্তু ইংল্যান্ডের টেস্ট দলের অধিনায়কের চেন্নাইয়ের হয়ে অভিষেক ভাল হল না। একটা বাউন্ডারি মেরে শুরুটা ভালই করেছিলেন। কিন্তু সতীর্থ মইনের মতোই আউট হলেন। রশিদ খানের বল কাট করতে গিয়েছিলেন। বলের বাউন্স এতটাই নীচু ছিল যে বুঝতেই পারেননি। বল জমা পড়ে ঋদ্ধিমানের হাতে।
পরের দিকে চেন্নাইয়ের আর কোনও ব্যাটারই উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারেননি। কিন্তু একটা দিক ধরে রেখেছিলেন সেই রুতুরাজ। গুজরাতের বোলারদের যথেচ্ছ পিটিয়ে তিনি বড় রান করেন। শতরানও পেয়ে যেতেন। তবে ছয় মারতে গিয়ে ব্যাটে-বলে হয়নি। আলজারি জোসেফের বলে ক্যাচ নেন শুভমন গিল।
কলকাতা নাইট রাইডার্সে বা বাংলার ক্রিকেটে কদর না-ই পেতে পারেন। কিন্তু ঋদ্ধিমান সাহা যে ফুরিয়ে যাননি, তার প্রমাণ আরও এক বার পাওয়া গেল শুক্রবার। বাঙালি ক্রিকেটার শুরু থেকেই চালিয়ে খেলার মেজাজে নেমেছিলেন। আইপিএলের ইতিহাসে প্রথম ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসাবে চেন্নাই নামিয়েছিল তুষার দেশপান্ডেকে। তাঁকে ছয় মেরে স্বাগত জানান ঋদ্ধি। দীপক চাহার বা রাজবর্ধন হাঙ্গারগেকরকেও মাথায় চড়তে দেননি। চতুর্থ ওভারের মাথায় শিবম দুবে অসাধারণ ক্যাচ না নিলে ঋদ্ধি আরও বেশি রান করতে পারতেন।
জাত চেনালেন শুভমন গিলও। কলকাতা ছেড়ে গুজরাতে যাওয়ার পর থেকেই তাঁর ব্যাটে রানের বন্যা। সম্প্রতি ভারতের হয়ে ক্রিকেট খেলেও রান পেয়েছেন। আইপিএলেও প্রথম ম্যাচেই জ্বলে উঠল তাঁর ব্যাট। অপরাজিত অর্ধশতরান গড়ে গুজরাতের জয়ের ভিত তৈরি করে দিলেন তিনি।