শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মারমুখী মেজাজে ছিলেন ঋষভ পন্থ। ছবি: আইপিএল।
আইপিএল শুরু হওয়ার আগে কেউ ভাবতেও পারেননি, এই দৃশ্য এত তাড়াতাড়ি দেখতে পাবেন। গাড়ি দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়া ঋষভ পন্থ তখন সবে আইপিএলে ফিরতে চলেছেন। সবাই অপেক্ষা করছিলেন, পন্থ কেমন খেলবেন? তিনি খেললেন। শুধু খেললেন না, যত দিন গড়াল তত ভাল খেললেন। বুধবার গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে ৪৩ বলে ৮৮ রান করেছেন তিনি। আটটি ছক্কা মেরেছেন এই বাঁ হাতি ব্যাটার। ভারতের বিশ্বকাপের দলে জায়গা প্রায় পাকা করে ফেলেছেন পন্থ। যে ভাবে এগোচ্ছেন, অন্তত উইকেটরক্ষকের জায়গাটা নিয়ে ভাবতে হবে না অজিত আগরকারের নির্বাচক কমিটিকে।
চলতি আইপিএলে এই ইনিংসের আগে দু’টি অর্ধশতরান করেছিলেন পন্থ। কয়েকটি ম্যাচে ঝোড়ো ইনিংসে খেলেছিলেন। বুধবারের ইনিংস সব কিছু ছাপিয়ে গেল। পন্থ যখন ব্যাট করতে নামেন তখন পাওয়ার প্লে-র মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে দিল্লি। সেখান থেকে অক্ষর পটেলের সঙ্গে শতরানের জুটি বাঁধলেন পন্থ। প্রথমে কিছুটা ধীরে খেলছিলেন। অক্ষর আউট হওয়ার পরে রান তোলার দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিলেন তিনি।
শেষ দিকে পন্থের ব্যাট থেকে একটার পর একটা বল বাউন্ডারির বাইরে গিয়ে পড়ছিল। উইকেটের সব দিকে শট খেলেছেন তিনি। লেগ সাইডে কব্জির মোচড়ে তাঁর বিখ্যাত ফ্লিক দেখা গিয়েছে। আবার উইকেট থেকে সরে জায়গা তৈরি করে হাওয়ায় বল উড়িয়েছেন। এক একটি বল তো এত উঁচুতে উঠল, মনে হচ্ছিল অরুণ জেটলি স্টেডিয়াম পার হয়ে যাবে।
শেষ ওভারে মোহিত শর্মাকে বেধড়ক মারলেন পন্থ। চারটি ছক্কা ও একটি চার মারেন তিনি। ওভারের শেষ তিনটি বল গিয়ে পড়ল গ্যালারিতে। এ বারের আইপিএলে মোহিত ডেথ ওভার বিশেষজ্ঞ হিসাবে খেলছিলেন। সেই মোহিতই শেষ ওভারে দিলেন ৩১ রান। ২০৪.৬৫ স্ট্রাইক রেটে এই ইনিংস খেললেন পন্থ। দেখে মনে হল না কোনও সমস্যা হচ্ছে। বড় শট মারার পাশাপাশি জোরে দৌড়তেও দেখা গেল তাঁকে।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি-উত্তর পর্বে ভারতীয় দলে নিজের জায়গা পাকা করে নিয়েছিলেন ঋষভ পন্থ। কিন্তু ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর সব কিছু লন্ডভন্ড হয়ে যায়। দিল্লি থেকে বাড়ি ফিরছিলেন পন্থ। নিজেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। ভোরের দিকে হয়তো হঠাৎ চোখ লেগে এসেছিল। গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা মারে ডিভাইডারে। তাতেই সব কিছু অনিশ্চিত হয়ে যায়। পন্থ প্রাণে বেঁচে গেলেও ক্রিকেট খেলতে পারবেন কি না তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। সেই সব কিছুর উত্তর এক এক করে দিচ্ছেন পন্থ। হয়তো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের জার্সি পরে মাঠে তাঁর প্রত্যাবর্তনের চক্র পূর্ণ হবে।
৪৫৪ দিন পর মাঠে ফিরেছিলেন পন্থ। গাড়ি দুর্ঘটনার পর মাথায়, পিঠে, হাঁটুতে চোট লেগেছিল। অস্ত্রোপচারও করতে হয়। ক্রাচ নিয়ে হাঁটতেন। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে এখন তিনি বিশ্বকাপের দলে ঢোকার জন্য নির্বাচকদের ঘরে কড়া নাড়তে শুরু করে দিলেন। এমন অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনের কথা সিনেমায় দেখালেও অবিশ্বাস্য মনে হত। কিন্তু পন্থ করে দেখালেন।
এখনও পর্যন্ত কমলা টুপির তালিকায় তিন নম্বরে রয়েছেন পন্থ। ৯টি ম্যাচে ৩৪২ রান করেছেন তিনি। ৪৮.৮৬ গড় ও ১৬১.৩২ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন তিনি। এই আগ্রাসন ও ধারাবাহিকতার পরে বিশ্বকাপের দলে তাঁর দিকেই হয়তো ভোট যাবে নির্বাচক প্রধান অজিত আগরকর ও অধিনায়ক রোহিত শর্মার। ভারতের বিশ্বকাপের দলে নিজের জায়গা প্রায় পাকা করে ফেলেছেন পন্থ।