জেক ফ্রেজ়ার-ম্যাকগুর্ক। ছবি: এক্স।
জেক ফ্রেজ়ার-ম্যাকগুর্ক নামটা শুক্রবারের আগে আদৌ কোনও ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমী শুনেছিলেন কি না বলা মুশকিল। অস্ট্রেলিয়ার এই ব্যাটার দেশের হয়ে দু’টি এক দিনের ম্যাচ খেললেও তেমন ভাবে নজর কাড়তে পারেননি। আইপিএলে খেলতে আসার আগে অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটেও রান পাচ্ছিলেন না ফ্রেজ়ার। শনিবার তিনিই দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে ঝড় তুললেন। সেটাও আবার তাঁর বৈগ্রহ (আইডল) ডেভিড ওয়ার্নার দ্রুত আউট হয়ে যাওয়ায়।
শুক্রবার চতুর্থ ওভারে বোল্ড হন ওয়ার্নার। যে ভাবে আউট হয়েছিলেন সেটা তাঁর দুর্ভাগ্য। কিন্তু সেটাই সৌভাগ্য হয়ে যায় ফ্রেজ়ারের কাছে। ডানহাতি অজ়ি ব্যাটার ৩৫ বলে ৫৫ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেন। পাঁচটি ছক্কা মারেন তিনি। ২২ বছরের ফ্রেজ়ার এই প্রথম আইপিএল খেলতে এসেছেন। প্রথম ম্যাচ খেললেন শুক্রবার। সেই ম্যাচেই নজর কাড়লেন তিনি। ফ্রেজ়ারের ৫৫ রানের ইনিংসে ভর করেই জয়ের পথ সহজ করে নেয় দিল্লি। তাঁর এই ইনিংসের পর হয়তো মিচেল মার্শকে আপাতত বসতে হবে বেঞ্চে।
ফ্রেজ়ার যে এই প্রথম এমন ইনিংস খেললেন তা নয়। অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটে ২৯ বলে শতরান করেছিলেন তিনি। লিস্ট এ ক্রিকেটে সেটাই দ্রুততম শতরান। সাউথ অস্ট্রেলিয়ার হয়ে তাসমানিয়ার বিরুদ্ধে ফ্রেজ়ারের এই ইনিংস সাড়া ফেলে দিয়েছিল। তাঁর খেলার সঙ্গে ওয়ার্নারের মিল দেখতে পান অনেকে। আগ্রাসী ব্যাট করতে পছন্দ করেন ফ্রেজ়ার। যশ ঠাকুরকে দ্বিতীয় বলেই যে ভাবে ছক্কা হাঁকান, তাতেই বুঝিয়ে দেন যে এ বারের আইপিএলে তাঁকে কোন মেজাজে দেখা যেতে পারে। আরশাদ খানকে এমন মারেন যে, তাঁকে আক্রমণ থেকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হন লোকেশ রাহুল।
ফ্রেজ়ার যদিও শুক্রবার ভাগ্যের সাহায্য পান। তাঁর ক্যাচ ফেলে দেন রবি বিষ্ণোই। ম্যাচ শেষে সেই নিয়ে আফসোস করতে শোনা যায় লখনউ অধিনায়ক রাহুলকে। তিনি বলেন, “আমরা শুরুতেই ওয়ার্নারের উইকেট তুলে নিয়েছিলাম। কিছু ক্ষণের মধ্যে পৃথ্বী শ-ও আউট হয়ে যায়। ১০ ওভার পর্যন্ত আমরা ম্যাচে ছিলাম। তার পরেই একটা ক্যাচ পড়ল আর সব শেষ। পন্থ আর ফ্রেজ়ার ম্যাচ নিয়ে চলে গেল। ফ্রেজ়ারকে আমরা খুব একটা চিনি না। ওর খেলা আমাদের কাছে পরিচিত নয়। বেশ কিছু ভিডিয়ো আমরা দেখেছিলাম। কিন্তু ও খুব ভাল খেলল। ফ্রেজ়ারকে কৃতিত্ব দিতেই হবে।”
ফ্রেজ়ারকে উচ্ছ্বসিত টম মুডি। তিনি মনে করেন দিল্লি যদি প্লে-অফে উঠতে যায়, তা হলে ফ্রেজ়ারকে ওপেন করানো উচিত। অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন ক্রিকেটার মুডি বলেন, “কী দেখলাম শুক্রবার ফ্রেজ়ারের থেকে! আমি চাই পাওয়ার প্লে-তে সব ক’টা বল ও খেলুক। ও থামতে জানে না। আমি জানি দিল্লির ওপেনারেরা অভিজ্ঞ। কিন্তু দিল্লিকে এখন ম্যাচ জিততে হবে। তাই রিস্ক নিতেই হবে।”
শুক্রবার ফ্রেজ়ারের যে মূর্তি আইপিএলে দেখা গেল, তাতে সত্যিই আগামী দিনে তাঁকে ওপেন করতে দেখা যেতে পারে। বিশেষ করে ওয়ার্নারেরা যখন ফর্মে নেই। আর আইপিএল খেলতে এসে ফ্রেজ়ারও আপ্লুত। তিনি বলেন, “আইপিএল খেলতে এসে দারুণ লাগছে। এ যেন এক অন্য দুনিয়া। আগে কখনও এমন দেখিনি। আইপিএলের কথা আগে শুনেছি। এখানে এসে এই প্রথম দেখলাম। দারুণ অনুভূতি। আরও উপভোগ করার ইচ্ছা আছে। ভারতে এসে দারুণ লাগছে।”
দিল্লি প্রথম ম্যাচ থেকে খেলায়নি ফ্রেজ়ারকে। মাঠের ধারে ডাগআউটে বসে খেলা দেখছিলেন তিনি। একের পর এক ম্যাচ দিল্লি হারছিল। আর ফ্রেজ়ার মাঠের ধারে বসে দেখছিলেন। শুক্রবার ম্যাচ জিতিয়ে তিনি বলেন, “শেষ পাঁচ, ছ’টা ম্যাচ সাইডলাইনে বসে দেখেছি। হাত কামড়াচ্ছিলাম। মাঠে নামার জন্য ছটফট করছিলাম। তাই মাঠে নেমে ম্যাচ জিততে পেরে দারুণ লাগছে। আমি ব্যাটের মাঝে বল খেলতে চাইছিলাম। শুধু ব্যাট ঘুরিয়ে উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসতে চাইনি। বল দেখে খেলছিলাম। গত এক বছর ধরে তো আমি এটাই করছি। এখন কেন বদলাব?”
দিল্লির অধিনায়ক পন্থও খুশি ফ্রেজ়ারের খেলায়। তাঁদের জুটিই লখনউয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচ জিতিয়েছে। সেই পন্থ বলেন, “আমরা মনে হয় এ বার ঠিক প্রথম একাদশ বেছে নিতে পেরেছি। তবে দলে কয়েক জনের চোট রয়েছে। কিন্তু সেটা নিয়ে অভিযোগ করে তো লাভ নেই। আশা করি আমরা তিন নম্বরে খেলার লোক পেয়ে গিয়েছি। ভাবিনি ফ্রেজ়ার এই দায়িত্বটা এত ভাল ভাবে পালন করতে পারবে। আশা করি আগামী দিনেও পারবে।”
২২ বছরের ফ্রেজ়ার এখন শুধু দিল্লির ভরসা নন, অস্ট্রেলিয়ারও আশা। সামনেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সেখানে ফ্রেজ়ারের মতো এক জন ব্যাটারকে দলে পেলে লাভ হবে তাদেরও। ওয়ার্নার পরবর্তী যুগে ফ্রেজ়ার হতে পারেন অস্ট্রেলিয়ার নতুন নায়ক।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।