মগজাস্ত্রের খেলায় আবার প্রতিপক্ষকে হারিয়ে দিলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। ঘরের মাঠে জিতল চেন্নাই সুপার কিংস। ছবি: আইপিএল
একেই বোধহয় বলে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মগজাস্ত্র। ২১৭ রান করার পরেও মনে হচ্ছিল ম্যাচ হাতের বাইরে বেরিয়ে যাবে। কিন্তু সেটা হতে দিলেন না মাহি। তাঁর এক চালে ম্যাচে ফিরল চেন্নাই। পেসাররা যখন মার খাচ্ছিলেন, তখন তিন স্পিনারকে লেলিয়ে দিলেন ধোনি। তাঁর এই এক সিদ্ধান্ত খেলার ছবিটা বদলে দিল। লখনউয়ের একের পর এক উইকেট পড়ে যাওয়ায় ম্যাচ জিততে পারলেন না লোকেশ রাহুলরা। শেষ পর্যন্ত ১২ রানে ম্যাচ জিতল চেন্নাই।
১৪২৭ দিন পরে ঘরের মাঠে খেলতে নেমে বদলে গেল চেন্নাই সুপার কিংসের খেলা। প্রথম বল থেকে ব্যাট হাতে দাপট দেখালেন হলুদ জার্সিধারীরা। পর পর দু’ম্যাচে অর্ধশতরান করলেন রুতুরাজ গায়কোয়াড়। অন্য ওপেনার ডেভন কনওয়েও রান করলেন। চার-ছক্কার ফুলঝুরি দেখা গেল চিপকে। টসে হেরে ব্যাট করতে নামলেও প্রথম বল থেকে আক্রমণাত্মক ছিলেন চেন্নাইয়ের দুই ওপেনার। বেশি আক্রমণাত্মক দেখাচ্ছিল রুতুরাজকে। গত ম্যাচে যেখানে শেষ করেছিলেন এই ম্যাচে সেখান থেকেই শুরু করলেন। অবলীলায় বড় শট মারলেন তিনি। শুরুতে কিছুটা সামলে খেললেও যত সময় এগোল তত ভয়ঙ্কর দেখাল কনওয়েকেও।
মাত্র ২৮ বলে অর্ধশতরান করেন রুতুরাজ। আগের ম্যাচে লখনউয়ের সেরা অস্ত্র মার্ক উডকে দাঁড়াতে দিলেন না তিনি। মাত্র ৮ ওভারে ১০০ রান পার হয়ে যায় চেন্নাইয়ের। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না লখনউয়ের অধিনায়ক রাহুল। শেষ তাস হিসাবে রবি বিষ্ণোইকে বলে আনেন তিনি। বিষ্ণোই দলকে খেলায় ফেরালেন। ৫৭ রানের মাথায় রুতুরাজকে আউট করলেন তিনি। প্রথম উইকেটে মাত্র ৯ ওভারে ১১০ রান করেন দুই ওপেনার।
কনওয়ে ৪৭ রান করে উডের বলে আউট হলেন। শিবম দুবে, মইন আলিরা শুরু ভাল করেছিলেন। কিন্তু তাঁরা খুব বড় রান করতে পারলেন না। শিবম ২৭ ও মইন ১৯ রান করে আউট হন। উইকেট পড়লেও রানের গতি কমেনি। যে ব্যাটারই নামছিলেন, শুরু থেকে মারমুখী মেজাজে ছিলেন। ধোনির সঙ্গে পেয়েছিলেন চিপকের দর্শকদের। গোটা ইনিংস জুড়ে সমর্থন করে গেলেন তাঁরা।
শেষ ওভারে ব্যাট করতে নামেন ধোনি। পর পর দু’বলে দু’টি ছক্কা মারেন তিনি। তৃতীয় বলে আবার ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হন চেন্নাই অধিনায়ক। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ২১৭ রানে শেষ হয় চেন্নাইয়ের ইনিংস।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে ঝোড়ো ব্যাটিং শুরু করেন লখনউয়ের ওপেনার কাইল মায়ের্স। আগের ম্যাচে দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে অর্ধশতরান করেছিলেন তিনি। এই ম্যাচেও মাত্র ২১ বলে অর্ধশতরান করলেন তিনি। চেন্নাইয়ের পেসারদের রেয়াত করেননি তিনি। দীপক চাহার, বেন স্টোকস, তুষার দেশপান্ডে সবাই রান দেন।
যখন দেখে মনে হচ্ছে চেন্নাইয়ের হাত থেকে খেলা বেরিয়ে যাচ্ছে, তখনই মোক্ষম চাল দেন ধোনি। বাঁ হাতি মায়ের্সের বিরুদ্ধে ডান হাতি অফ স্পিনার মইনকে বলে আনেন তিনি। ৫৩ রানের মাথায় মায়ের্সকে আউট করেন মইন। অধিনায়ক রাহুল ও ক্রুণাল পাণ্ড্যরও উইকেট নেন তিনি। ভয়ঙ্কর দেখানো মার্কাস স্টোইনিসও মইনের শিকার। ৪ উইকেট নিয়ে খেলার রাশ নিজেদের হাতে নেন ইংল্যান্ডের এই অলরাউন্ডার। দীপক হুডাকে আউট করেন আর এক স্পিনার মিচেল স্যান্টনার। লখনউয়ের প্রথম ৫ উইকেটের সবগুলিই নেন স্পিনাররা।
খেলার ভাগ্য নির্ভর করছিল নিকোলাস পুরানের হাতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের এই ব্যাটার ভাল খেলছিলেন। কিন্তু ৩২ রানের মাথায় ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হন তিনি। পুরান আউট হওয়ার পরে আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি লখনউ। আয়ুষ বাদোনি ও কৃষ্ণাপ্পা গৌতম অনেক চেষ্টা করলেও দলকে জেতাতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ২০৫ রানে শেষ হয় লখনউয়ের ইনিংস।