(বাঁ দিক থেকে) বিরাট কোহলি, সুনীল নারাইন এবং আন্দ্রে রাসেল। —ফাইল চিত্র।
এ বারের আইপিএলের সেরা একাদশ বেছে নিল আনন্দবাজার অনলাইন। সেই দলে চার বিদেশিকে জায়গা দেওয়া সম্ভব হল না। ভারতীয় ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স এতটাই ভাল যে, বিদেশিদের সরিয়ে জায়গা করে নিলেন তাঁরা। পয়েন্ট তালিকার শেষে থাকা মুম্বই ইন্ডিয়ানসের এক ক্রিকেটারও জায়গা পেলেন সেরা একাদশে।
সুনীল নারাইন (কলকাতা নাইট রাইডার্স): এ বারের আইপিএলে ওপেনার হিসাবে বড় চমক সুনীল নারাইন। নাইটদের হয়ে একের পর এক ম্যাচে ঝড় তুলেছেন ব্যাট হাতে। ১৫ ম্যাচে ৪৮৮ রান করেছেন। একটি শতরানও আছে। স্ট্রাইক রেট ১৮০.৭৪। আবার নারাইন দলে থাকা মানে এক জন স্পিনারও দলে রইল। ১৭টি উইকেট নিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে ওভারে ৬.৬৯ রানের বেশি দেননি। ফলে রান আটকে রেখে উইকেট নেওয়ায় বড় ভরসা নারাইন।
বিরাট কোহলি (রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু): আরও এক বার কমলা টুপি বিরাটের। ১৫ ম্যাচে ৭৪১ রান করেছেন। একটি শতরান এবং পাঁচটি অর্ধশতরানও করেছেন। তাঁর মতো ধারাবাহিক ক্রিকেটার এ বারের আইপিএলে খুব কমই ছিল। বিরাটের স্ট্রাইক রেট নিয়ে কথা হলেও তা ১৫০-র উপরে। ফলে সব সমালোচনাকে যে বিরাট মাঠের বাইরে ফেলেছেন তা বলাই যায়। নারাইনের সঙ্গে ওপেন করার দায়িত্ব থাকবে বিরাটের। পাওয়ার প্লে-তে ঝড় তোলা ছাড়াও প্রয়োজনে ইনিংস গড়তেও দক্ষ তিনি।
রুতুরাজ গায়কোয়াড় (চেন্নাই সুপার কিংস): এ বারের আইপিএলে আবির্ভাব হয়েছে অধিনায়ক রুতুরাজের। তাতে তাঁর ব্যাটিংয়ে কোনও প্রভাব পড়েনি। ১৪ ম্যাচে ৫৮৩ রান করেছেন তিনি। একটি শতরান এবং চারটি অর্ধশতরান করেছেন। তাঁর মতো দক্ষ ব্যাটার তিন নম্বরে ব্যাট করলে দলের টপ অর্ডার অনেক স্বস্তিতে থাকবে। চেন্নাইকে প্লে-অফে তুলতে না পারলেও সেরা একাদশের দল থেকে রুতুরাজকে বাদ দেওয়া যাবে না।
সঞ্জু স্যামসন (রাজস্থান রয়্যালস) (অধিনায়ক/ উইকেটরক্ষক): রাজস্থানকে ফাইনালে তুলতে পারেননি। কিন্তু সঞ্জুর ব্যাটে রান এসেছে প্রায় প্রতি ম্যাচেই। চার নম্বরে ব্যাট করার জন্য এ বারের আইপিএলের সেরা বাছাই সঞ্জুই। ১৬ ম্যাচে করেছেন ৫৩১ রান। পাঁচটি অর্ধশতরান আছে তাঁর। আনন্দবাজার অনলাইনের বেছে নেওয়া দলের অধিনায়ক এবং উইকেটরক্ষকও সঞ্জু।
সাই সুদর্শন (গুজরাত টাইটানস): সাধারণত তিন নম্বরে ব্যাট করেন সুদর্শন। তবে এ বারের আইপিএলে ১২ ম্যাচে ৫২৭ রান করা এই ক্রিকেটারকে পাঁচ নম্বরে নামতে হবে। একটি শতরান এবং দু’টি অর্ধশতরান করা এই ক্রিকেটার গত আইপিএলেও ভাল খেলেছিলেন। এ বারের আইপিএলেও রান করেছেন। তাঁর মতো বাঁহাতি ব্যাটারকে বাদ দেওয়া কঠিন।
রিয়ান পরাগ। —ফাইল চিত্র।
রিয়ান পরাগ (রাজস্থান রয়্যালস): বার বার নজর কেড়েছেন পরাগ। ব্যাট হাতে রাজস্থানের বড় ভরসা ছিলেন অসমের এই ক্রিকেটার। প্রয়োজনে বলও করতে পারেন। এ বারের আইপিএলে ১৬ ম্যাচে ৫৭৩ রান করেছেন পরাগ। চারটি অর্ধশতরানও আছে। পরাগ দলে থাকলে শেষ বেলায় রান তোলার কাজটা করতে পারবেন অনায়াসে। দলের ভারসাম্য রক্ষা করার কাজ থাকবে তাঁর মতো অলরাউন্ডারের কাঁধে।
আন্দ্রে রাসেল (কলকাতা নাইট রাইডার্স): বয়স ৩৬ বছর। কিন্তু ক্লান্তি নেই রাসেলের। এ বারের আইপিএলে ব্যাট হাতে ২২২ রান করেছেন। স্ট্রাইক রেট ১৮৫। সেই সঙ্গে বল হাতে রয়েছে ১৯টি উইকেট। ব্যাটে, বলে রাসেল যে বিধ্বংসী মেজাজে ছিলেন, তাতে তাঁকে বাদ দেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই।
নীতীশ কুমার রেড্ডী (সানরাইজার্স হায়দরাবাদ): এ বারের আইপিএলের সেরা প্রতিশ্রুতিমান ক্রিকেটার নীতীশ। গত আইপিএলে মাত্র দু’টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু এ বারে খেললেন ১৩টি ম্যাচ। করলেন ৩০৩ রান। শেষ বেলায় ব্যাট করতে নেমে দ্রুত রান করতে পারেন তিনি। বল হাতে তিনটি উইকেট নিয়েছেন। তবে হায়দরাবাদের বোলিং আক্রমণে তাঁকে বিশেষ প্রয়োজন হয়নি। তাই গোটা আইপিএলে ১৩ ওভারের বেশি করতে পারেননি। তাতেই বুঝিয়ে দিয়েছেন যে প্রয়োজনে অলরাউন্ডার হিসাবেও দলকে ভরসা দিতে পারেন নীতীশ।
হর্ষিত রানা (কলকাতা নাইট রাইডার্স): সেরা একাদশে থাকবেন হর্ষিত। তবে তাঁর লড়াই ছিল প্যাট কামিন্স এবং হর্ষল পটেলের সঙ্গে। কামিন্স এ বারের আইপিএলে ১৮টি উইকেট নিয়েছেন। সেই সঙ্গে অধিনায়কত্বের চাপ সামলেছেন। কিন্তু কামিন্স ১৬ ম্যাচে ৫৬৬ রানও দিয়েছেন। যা তাঁর বিপক্ষে গিয়েছে। হর্ষিত সেখানে দিয়েছেন মাত্র ৩৮৩ রান। নিয়েছেন ১৯টি উইকেট। দলকে ট্রফিও জিতিয়েছেন। হর্ষল এ বারের আইপিএলে বেগনি টুপি পেয়েছেন। ২৪টি উইকেট নিয়েছেন। কিন্তু রানও দিয়েছেন। ১৪ ম্যাচে ৪৭৭ রান দেওয়া হর্ষলকে সরিয়ে তাই সেরা একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন হর্ষিত।
যশপ্রীত বুমরা (মুম্বই ইন্ডিয়ানস): সেরা একাদশে থাকবেন বুমরা। তাঁর দল মুম্বই এ বারের আইপিএলে ১০ দলের মধ্যে দশম স্থানে শেষ করেছেন। কিন্তু বুমরা ১৩ ম্যাচে ২০টি উইকেট নিয়েছেন। ওভারপ্রতি ৬.৪৮ রানের বেশি দেননি। কৃপণ বোলিং এবং উইকেট তুলে নেওয়ার ক্ষমতার জন্য সেরা একাদশে জায়গা করে নিলেন বুমরা।
বরুণ চক্রবর্তী (কলকাতা নাইট রাইডার্স): নারাইনের সঙ্গে জুটি বেঁধে ম্যাচ জিতিয়েছেন বরুণ। তাঁদের সেই জুটি ভাঙা কঠিন। ১৫ ম্যাচে ২১টি উইকেট নিয়েছেন বরুণ। ৪০২ রানের বেশি দেননি। নারাইন এবং বরুণের স্পিনের ফাঁদে আটকে গিয়েছে একের পর এক দল। সেরা দলে তাই থাকবেন বরুণ।
ইমপ্যাক্ট ক্রিকেটার: টি নটরাজন (সানরাইজার্স হায়দরাবাদ): প্রথমে ব্যাট করতে নামলে এই দলে এক জন বোলার খেলবেন ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসাবে। সেই জায়গাটি নেবেন নটরাজন। বাঁহাতি পেসার এ বারের আইপিএলে ১৪ ম্যাচে ১৯টি উইকেট নিয়েছেন। বুমরা এবং হর্ষিতের সঙ্গে এই দলের পেস আক্রমণ সামলাবেন নটরাজন। বোলিং করার সময় তাই বসিয়ে দেওয়া হবে সুদর্শনকে। দল আগে বল করলে প্রথম একাদশে থাকবেন নটরাজন। তখন বাদ পড়বেন সুদর্শন। তিনি খেলবেন ইমপ্যাক্ট ক্রিকেটার হিসাবে।