আইপিএল ট্রফি নিয়ে কেকেআরের ক্রিকেটারেরা। ছবি: পিটিআই।
এ বারের আইপিএলের সব থেকে ধারাবাহিক দল কেকেআর। লিগ পর্বে শুরু থেকেই প্রথম তিন দলের মধ্যে থেকেছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। মাঝামাঝি সময় থেকে শীর্ষে উঠে এসেছে। শেষ পর্যন্ত সেই জায়গা ধরেও রেখেছে। দু’টি ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেস্তে গেলেও সমস্যা হয়নি। গৌতম গম্ভীর মেন্টর হওয়ায় এ বার কেকেআরকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী দেখিয়েছে। মেন্টর বা কোচেরা ভুল শুধরে দেন। ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস দেন। অনুপ্রাণিত করেন। কিন্তু মাঠে নেমে পারফর্ম করতে হয় ক্রিকেটারদেরই।
এ বার কলকাতার অনেক ক্রিকেটারই ভাল খেলেছেন। বিভিন্ন ম্যাচে দলের জয়ে বিভিন্ন জন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন। ব্যক্তিগত দক্ষতার থেকেও দলগত লড়াই অন্য দলের থেকে এগিয়ে দিয়েছে কেকেআরকে। তবু কয়েক জনের পারফরম্যান্স আলাদা করে উল্লেখ করতেই হয়। আনন্দবাজার অনলাইন বেছে নিয়েছে এ বার কেকেআরের সেরা পাঁচ পারফর্মারকে।
সুনীল নারাইন: প্রথমে নাম করতে হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের অভিজ্ঞ অলরাউন্ডারের। এ বার আইপিএলে তাঁর পারফরম্যান্স মনে করিয়ে দিয়েছে তরুণ নারাইনকে। দলের সব চেয়ে পুরনো সদস্য ব্যাট বা বল হাতে এ বার প্রায় সব ম্যাচেই পারফর্ম করেছেন। ইনিংস ওপেন করতে নেমে যেমন দলকে ভাল শুরু দিয়েছেন, তেমনই গুরুত্বপূর্ণ সময় উইকেট তুলে নিয়ে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলেছেন। একই সঙ্গে কমলা এবং বেগনি টুপির দৌড়ে থেকেছেন প্রতিযোগিতার শুরু থেকে। ১৫টি ম্যাচে তাঁর রান ৪৮৮। স্ট্রাইক রেট ১৮০.৭৪। একটি শতরান এবং তিনটি অর্ধশতরান করেছেন। আবার বল হাতে নিয়েছেন ১৭টি উইকেট। পাশাপাশি যথেষ্ট কৃপণ বোলিংও করেছেন। শুধু কেকেআর নয়, নারাইন এ বারের আইপিএলেরই অন্যতম সেরা ক্রিকেটার।
ফিল সল্ট: ইংল্যান্ডের উইকেটরক্ষক-ব্যাটার নিলামে দল পাননি। পরে জেসন রয়ের পরিবর্ত হিসাবে তাঁকে দলে নিয়েছিল কেকেআর। আইসিসির টি-টোয়েন্টি ব্যাটারদের ক্রমতালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা সল্ট উইকেটের পিছনে দলকে ভরসা দেওয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাতে ওপেনিং জুটির সমস্যারও সমাধান করে দিয়েছেন। গত দু’মরসুম কেকেআরের অন্যতম দুর্বল জায়গা ছিল উইকেটরক্ষা এবং ওপেনিং জুটি। সল্ট একাই জোড়া সমস্যার সমাধান করে দিয়েছেন। প্লে-অফে খেলতে না পারলেও কেকেআরের অন্যতম সেরা পারফর্মার সল্ট। ১২টি ম্যাচ খেলে করেছেন ৪৩৫ রান। চারটি অর্ধশতরানের ইনিংস খেলেছেন। স্ট্রাইট রেট ছিল ১৮২। এর থেকেই বোঝা যায় কতটা আগ্রাসী মেজাজে ব্যাট করেছেন ইংরেজ ক্রিকেটার।
আন্দ্রে রাসেল: কেকেআরের ভারসাম্যের ভরকেন্দ্র রাসেল। দলের অন্যতম সিনিয়র সদস্য। নীচের দিকে নেমে ব্যাট হাতে যেমন ঝড় তুলতে পারেন, তেমনই করতে পারেন কার্যকর মিডিয়াম পেস বোলিং। রাসেলকে সমীহ করে না এমন কোনও দল নেই। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার ধরা হয় রাসেলকে। এ বারের আইপিএলে কেকেআরের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ পারফর্ম করেছেন রাসেল। কখনও ব্যাট হাতে, আবার কখনও বল হাতে দলকে সাহায্য করেছেন। কোনও ম্যাচেই তিনি নিরাশ করেননি। ১৫টি ম্যাচে করেছেন ২২২ রান। স্ট্রাইক রেট ১৮৫। বল হাতে নিয়েছেন ১৯টি উইকেট। দলের অন্যতম ভরসা হয়ে উঠেছিলেন রাসেল। শুধু নামে নয়, ২২ গজের লড়াইয়ে পারফর্ম করে।
বরুণ চক্রবর্তী: তিন বিদেশি ক্রিকেটারের পর আসবে বরুণের নাম। ভারতীয় লেগ স্পিনারকে এ বার অনেক বেশি পরিণত এবং আত্মবিশ্বাসী দেখিয়েছে। তাঁর বল পড়তে সমস্যায় পড়েছেন প্রতিপক্ষ দলের ব্যাটারেরা। প্রায় প্রতি ম্যাচেই উইকেট পেয়েছেন। ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন গোটা প্রতিযোগিতায়। ১৫টি ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ২১টি উইকেট। ওভার প্রতি খরচ করেছেন ৮.০৪ রান। কেকেআরের এ বারের সাফল্যের অন্যতম প্রধান নায়ক নিঃসন্দেহে বরুণ।
হর্ষিত রানা: দিল্লির জোরে বোলারকে এ বার আইপিএলে কেকেআরের আবিষ্কার বলা যেতে পারে। আগ্রাসী মেজাজের জন্য ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের কাছে শাস্তি পেতে হলেও আত্মবিশ্বাস বজায় রেখেছেন। সাফল্যের উচ্ছ্বাসে নিজেকে ভাসিয়ে নিয়ে যাননি। ১৩টি ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ১৯টি উইকেট। হর্ষিতের বড় কৃতিত্ব কেকেআরের ডেথ (শেষ দিকের) ওভারে বোলিংয়ের সমস্যা মিটিয়ে দেওয়া। চোখ বন্ধ করে তাঁর হাতে বল তুলে দিতে পেরেছেন অধিনায়ক শ্রেয়স আয়ার। নিঃসন্দেহে এ বারের আইপিএলে কেকেআরের সেরা পাঁচ পারফর্মারের অন্যতম হর্ষিত।