চর্চায়: প্যাট কামিন্স ও মিচেল স্টার্কের আকাশছোঁয়া দর নিয়ে আলোচনা চলছে। —ফাইল চিত্র।
মিচেল স্টার্ক বা প্যাট কামিন্সের বড় দাঁও দেখে যদি কোনও ক্রিকেটার ভাবেন অদূর ভবিষ্যতে আইপিএল নিলামে এসে তিনিও ধনকুবের হবেন, দ্রুত দিবাস্বপ্ন দেখা বন্ধ করুন। তার কারণ ভারতীয় বোর্ড নিলাম-নীতিতে বড়সড় পরিবর্তন আনার কথা ভাবছে। বেলাগাম অর্থব্যয় যেমন জনতার দরবারে মোটেও প্রশংসিত হচ্ছে না, তেমনই বোর্ড কর্তাদের একাংশেরও মনে হচ্ছে, বাড়াবাড়ি হচ্ছে।
স্টার্ককে ২৪.৭৫ কোটি টাকা দিয়ে কিনেছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। কামিন্সকে ২০.৫০ কোটিতে কেনে সানরাইজ়ার্স হায়দরাবাদ। আইপিএলের ইতিহাসের সর্বাধিক মূল্যের সর্বকালীন রেকর্ড। এত টাকা কখনও মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, বিরাট কোহলি বা রোহিত শর্মা পাননি। ক্রিস গেল এত ছক্কা মেরেও চোখে দেখেননি। এ বি ডিভিলিয়ার্সের ভাগ্যে জোটেনি। সব চেয়ে আশ্চর্যের হচ্ছে, স্টার্ক ও কামিন্সের এমন রেকর্ড দর উঠেছে ছোট নিলামে। প্রধান যে বড় নিলাম হয়, তাতে তাঁরা অংশ নেননি। অনেকেই অবাক হচ্ছেন যে, বড় নিলামের চেয়ে ছোট নিলামে দর বেশি উঠল কী করে?
স্টার্ক বা কামিন্স যা নিয়ে গেলেন, নিয়ে গেলেন। তা তো আর সংশোধন করা যাবে না। কিন্তু ভবিষ্যতের রাস্তায় বোর্ড বাধ্যতামূলক করে দিতে পারে যে, তারকা ক্রিকেটার হলে তোমাকে বড় নিলাম হয়েই আসতে হবে। ছোট নিলামের খিড়কি দিয়ে ঢুকতে
পারবে না।
এমন নিয়ম আনতে চাওয়ার কারণ কী? কারও কারও মনে হচ্ছে, নিলাম নীতিতে মস্ত বড় ফাঁক থেকে গিয়েছে। যা এতকাল কারও চোখে পড়েনি। ধরা যাক, আমি মিচেল স্টার্ক। আইপিএল নিলামে বড় দাঁও মারতে চাই। আমি কী করলাম? না, বড় নিলামে নাম তুললাম না। সেখানে তো প্রধান সব ক্রিকেটারেরা যাবে। বড় বড় নামের ভিড় থাকবে। খুব ভাল দর পাব, সেই নিশ্চয়তা নেই। আমি তাই বুদ্ধি করে বড় নিলামে না গিয়ে ছোট নিলামে নাম লেখালাম। ওখানে তারকাদের ভিড় নেই কারণ বেশির ভাগ ক্রিকেটার তো আগেই বড় নিলামে বিক্রি হয়ে গিয়েছে। মোটামুটি ভাল ক্রিকেটার হলে ছোট নিলামে ভাল দর পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এখানে ৩০-৩৫ কোটির ব্যাঙ্ক ব্যালান্স নিয়ে অনেক দল আসে দু’তিনটে বিশেষ জায়গা ভরাট করার লক্ষ্য নিয়ে। সম্পূর্ণ ভাবে দল সাজানোর ঝক্কি থাকে না বলে একটা নির্দিষ্ট ধরনের বিশেষজ্ঞ ক্রিকেটারের জন্য অনেক দূর ঝাঁপাতে পারে কোনও দল। হয়তো কোনও দলের দরকার বিদেশি ওপেনার। আবার কেউ হয়তো ছোট নিলামের বাজারে এসেছে ডেথ ওভারের বোলার খুঁজতে। যেমন কলকাতা নাইট রাইডার্স বা সানরাইজ়ার্স হায়দরাবাদের বিদেশি ফাস্ট বোলারের অভাব ছিল বলে স্টার্ক আর কামিন্সকে নিয়ে এ রকম লোফালুফি চলল।
অবশ্যই বলা হচ্ছে না, স্টার্ক ও কামিন্স— দুই অস্ট্রেলীয় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভারতকে বিশ্বকাপ ফাইনালে হারানোর মতো আইপিএল নিলামেও পরিকল্পনা করে রোহিত-বিরাটদের গোল দিয়ে গেলেন। নিশ্চয়ই দাবি করা যায় না, জেনেবুঝে দাঁও মারতে তাঁরা ছোট নিলামে এসেছিলেন। কিন্তু সত্যিই করে থাকলে তো দুর্দান্ত বাণিজ্যিক রণনীতি যে, ভিড়ে ঠাসা বড় নিলামে গেলাম না। ছোট নিলামে নাম লিখিয়ে মোটা টাকা নিয়ে বেরিয়ে গেলাম। নিয়মভঙ্গও করেননি যে তাঁদের দোষ দেওয়া যাবে। ভারতীয় বোর্ডের ইন্টেলিজেন্স দফতর যে এত বড় ফাঁকটা ধরতে পারেনি, এটা ৩৬ অলআউটের মতোই বিপর্যয়। অ্যাডিলেডের সেই লজ্জার পরে রবি শাস্ত্রী-রাহানের ভারত যেমন ঘুরে দাঁড়িয়েছিল, ভারতীয় বোর্ডও এখন সেই চেষ্টা চালাচ্ছে। তাই তারা নিয়ম করে দিতে চাইছে যে, বড় ক্রিকেটার হলে ছোট নিলামে নয়, বড় নিলামেই অংশ নিতে হবে। যদি বড় নিলাম এবং ছোট নিলামের মধ্যবর্তী সময়ে কোনও নতুন ক্রিকেটার দারুণ ভাবে উঠে আসেন, তাঁর জন্যও সর্বোচ্চ দর বেঁধে দেওয়া হবে। সেই নির্ধারিত মূল্যের উপরে দিয়ে তাঁকে কেনা যাবে না।
বড় নিলামের সময় প্রত্যেকটা দল চার জন করে প্রধান ক্রিকেটারকে ধরে রাখতে পারে। বাকিদের ছেড়ে দিতে হয়। যেমন ধোনিকে ধরে রাখে চেন্নাই সুপার কিংস। বিরাট কোহলি বা রোহিত শর্মাকে ছাড়ে না আরসিবি বা মুম্বই ইন্ডিয়ানস। বড় নিলামের আগে কেকেআর ধরে রেখেছিল আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারাইন, বেঙ্কটেশ আয়ার ও রিঙ্কু সিংহকে। যাঁদের বলা হয় ‘রিটেন্ড প্লেয়ার’। এই চার জনের তালিকায় যিনি এক নম্বরে ছিলেন, সেই রাসেল পান ১২ কোটি টাকা। স্টার্ক নিলামে এসে নিয়ে গেলেন তার দ্বিগুণ। অথচ, কেকেআরকে জেতায় রাসেল-মাস্ল। তা হলে রাসেলের তো মনে হতে পারে, আমি ‘রিটেন্ড প্লেয়ার’ হতে যাব কোন দুঃখে? নিলামেই যাব, ওখানে অনেক বেশি টাকা পাব। রোহিত-বিরাটদেরও মনে হতে পারে, নিকুচি করেছে ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি-প্রেম আর আবেগের। একই দলে পড়ে থাকব কেন? নিলামে গিয়ে আরও কামাব। তখন কী ভাবে তাঁদের আটকানো হবে? সামনের বছরই বড় নিলামের আসর। তার আগেই নতুন বোর্ডের নিলাম-নীতি চলে এলে অবাক হওয়ার
থাকবে না।