IPL 2024

৫ কারণ: গুজরাতকে চ্যাম্পিয়ন করা হার্দিক মুম্বইয়ের অধিনায়ক হয়ে কেন ব্যর্থ?

হার্দিক সাফল্য এনে দিতে পারেননি। তিনি এ বারের আইপিএলে একের পর এক ম্যাচ হেরেছেন। তাঁর দলের সমর্থকেরাই ব্যঙ্গ করেছেন। কিন্তু হার্দিকের এই ব্যর্থতার কারণ কী?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২৪ ১৯:২০
Share:

হার্দিক পাণ্ড্য। —ফাইল চিত্র।

২০২২ সালে গুজরাত টাইটান্সকে আইপিএল জিতিয়েছিলেন হার্দিক পাণ্ড্য। পরের বছর ফাইনালেও তুলেছিলেন। অধিনায়ক হিসাবে তাঁর সেই সাফল্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কাজে লাগাতে চেয়েছে ভারতও। হার্দিককে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অধিনায়ক করা হয়েছে রোহিত শর্মার অনুপস্থিতিতে। এ বারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও হার্দিককে সহ-অধিনায়ক করা হয়েছে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সও অধিনায়ক হার্দিকের উপর বেশি ভরসা করেছিল। রোহিতকে সরিয়ে তাঁকে অধিনায়ক করেছিল মুম্বই। যে রোহিত দলকে পাঁচটি আইপিএল ট্রফি জিতিয়েছিল, তাঁকেই সরিয়ে দেয় তারা।

Advertisement

হার্দিক যদিও সাফল্য এনে দিতে পারেননি। তিনি এ বারের আইপিএলে একের পর এক ম্যাচ হেরেছেন। তাঁর দলের সমর্থকেরাই ব্যঙ্গ করেছেন। কিন্তু হার্দিকের এই ব্যর্থতার কারণ কী?

সমর্থকদের পাশে না পাওয়া

Advertisement

গুজরাত টাইটান্সের অধিনায়ক হঠাৎ করে দলে ফেরায় মুম্বই। তার পরেই ঘোষণা করে দেয় রোহিতের জায়গায় হার্দিককে অধিনায়ক করা হচ্ছে। যা সমর্থকেরা ভাল ভাবে নেননি। অধিনায়ক হিসাবে হার্দিকের নাম ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই সমালোচনা শুরু হয়ে যায়। মুম্বইয়ের সমর্থকেরাই চাননি অধিনায়ক হার্দিককে। মুম্বই মাঠে নামলে হার্দিককে কটাক্ষ করা হত। গোটা মাঠ জুড়ে সেই ব্যঙ্গাত্মক শব্দ হার্দিকের কানে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক। তার প্রভাব যে ভারতীয় অলরাউন্ডারের উপর পড়েছে, সেটা স্পষ্ট। ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় কেভিন পিটারসেন বলেন, “এটা মুম্বইয়ের ঘরের মাঠ। সেখানে ওকে টিটকিরি দেওয়া হচ্ছে। এখানে গোটা মাঠ চেন্নাইয়ের জন্য চিৎকার করছে। এটা মেনে নেওয়া কঠিন। ও তো মানুষ। ওর আবেগ আছে। আমি জানি এমন পরিস্থিতিতে কেমন লাগে।” বিরাট মানসিক চাপ নিয়ে খেলতে নেমে হার্দিক ব্যর্থ হয়েছেন।

স্বাধীনতার অভাব

গুজরাত টাইটান্স যখন হার্দিককে নিয়েছিল, তখন বড় নিলাম হয়নি। অধিনায়ক হার্দিক নিজের মতো করে দল গুছিয়েছিলেন। নতুন দলকে তৈরি করেছিলেন। কিন্তু মুম্বইয়ের দলটি তৈরি রোহিতের হাতে। এত বছর ধরে তিনি দলের অধিনায়ক ছিলেন। সেই দলে হঠাৎ অধিনায়ক হয়ে গেলেন হার্দিক। ফলে স্বাধীন ভাবে তাঁর পক্ষে দল গড়া কঠিন হল। মুম্বই দলের মধ্যেই নাকি দু’টি পক্ষ তৈরি হয়ে গিয়েছে। রোহিত এবং হার্দিকের সমর্থনে দু’টি আলাদা শিবির রয়েছে বলেও মনে করেন অনেকে। ফলে হার্দিক খুব স্বচ্ছন্দে দল চালাতে পারছেন বলে মনে করছেন না অনেকে।

নেতৃত্বে অনভিজ্ঞতা

আইপিএলে দু’টি মরসুম এবং ভারতীয় দলকে কিছু ম্যাচে নেতৃত্ব দিলেও হার্দিক এখনও অধিনায়ক হিসাবে যথেষ্ট অপরিণত। গত মরসুমে যশপ্রীত বুমরাকে ছাড়া আইপিএলের প্লে-অফে উঠেছিল মুম্বই। এ বারে তাঁকে পেয়েও লিগের শেষে দল। এর নেপথ্যে হার্দিকের নেতৃত্বকেই দায়ী করছেন ইরফান পাঠান। তিনি বলেন, “মাঠে নেমে একের পর এক ভুল করে চলেছে হার্দিক। সেই কারণেই সাফল্য পাচ্ছে না মুম্বই।” চেন্নাই সুপার কিংস বনাম মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের ম্যাচের পর হার্দিকের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন সুনীল গাওস্কর। তিনি বলেছিলেন, “আগের ম্যাচে যে (যশপ্রীত) বুমরা এত ভাল বল করল, তাকে নতুন বলটাই দিল না। এটাকে নেতৃত্ব বলে না। শ্রেয়স গোপাল মাত্র এক ওভার বল করল। কেন? ও তো বোলার। তাকে দিয়ে আমি মাত্র এক ওভার করাব? এটা নেতৃত্ব! ভয়াবহ নেতৃত্ব।”

বোলার হার্দিকও বার বার ব্যর্থ হয়েছেন। —ফাইল চিত্র।

বোলার হার্দিকের ব্যর্থতা

হার্দিক অলরাউন্ডার। ব্যাটিংয়ের সঙ্গে বল হাতে তাঁর দক্ষতাই বাকি অলরাউন্ডারদের থেকে এগিয়ে রাখে। কিন্তু এ বারের আইপিএলে সেই বোলিংটাই করতে ব্যর্থ হলেন হার্দিক। নতুন বলে বল করতে এসে রান দিলেন। মাঝে বল করতে এসে রান দিলেন। ডেথ ওভারে বল করতে এসেও রান দিলেন। ১১ ম্যাচে মাত্র ৮ উইকেট নিয়েছেন। দিয়েছেন ২৯৭ রান। ওভার প্রতি ১১ রান করে দিচ্ছেন হার্দিক। তাঁর বোলিং দেখে আঁতকে উঠেছিলেন গাওস্কর। তিনি বলেন, “ধোনি অপেক্ষা করছিল ওর পায়ের কাছে বল আসার। সেটাই করল হার্দিক। ছক্কা মারতে দিল। খুব সাধারণ মানের বোলিং এটা।” হার্দিক বল করতে এলেই ওয়াংখেড়ে জুড়ে কটাক্ষ শোনা যায়। তার প্রভাব যে হার্দিকের বোলিংয়ে পড়ছে, সেটা স্পষ্ট।

ব্যাটিংয়ে স্থানচ্যুত

গুজরাতের হয়ে হার্দিক চার নম্বরে ব্যাট করতেন। ভারতের হয়েও সাধারণত তাই করতে দেখা যায়। কিন্তু মুম্বইয়ে একাধিক ভাল ব্যাটার রয়েছেন। ফলে হার্দিককে নীচের দিকে নামতে হয়। ফিনিশারের কাজ করতে হচ্ছে তাঁকে। সেই কাজে স্বচ্ছন্দ দেখাচ্ছে না হার্দিককে। ১১ ম্যাচে করেছেন মাত্র ১৯৮ রান। খেলেছেন ১৩৪টি বল। গড় ১৯.৮০। তাঁর স্ট্রাইক রেট ১৪৭.৭৬। ফিনিশার হিসাবে যা মেনে নেওয়া কঠিন। ম্যাচ জেতানো ইনিংস এখনও তাঁর ব্যাট থেকে দেখা যায়নি।

মুম্বইয়ের হয়ে ব্যর্থ হলেও ভারতের হয়ে হার্দিক সফল হবেন বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ সেখানে নেতৃত্বের চাপ তাঁর উপর থাকবে না। দর্শক হার্দিকের বিপক্ষে থাকবে না। এই চাপ কেটে গেলেই অলরাউন্ডার হার্দিককে পুরনো মেজাজে পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন গাওস্কর। তিনি বলেন, “আইপিএলে খেলা আর দেশের হয়ে খেলার মধ্যে তফাত আছে। দেশের হয়ে খেলতে নামলেই হার্দিক বদলে যাবে। মানসিকতায় বদলে যাবে তখন। আইপিএলে অনেক কিছু সামলাতে হচ্ছে হার্দিককে। ভারতের হয়ে সেটা থাকবে না। আশা করি খুব ইতিবাচক মনোভাব নিয়েই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলতে নামবে হার্দিক। সেখানে সাফল্য পাবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement