জব্বর জুটি। আইপিএল উদ্বোধনে নজর কাড়লেন অনুষ্কা-হৃতিক। মঙ্গলবার। ছবি: বিসিসিআই
সদ্য কলেজে ঢুকে যদি আপনি প্রেমে পড়েন, বন্ধুবান্ধবের টিপ্পনি আপনার প্রাপ্য। একসঙ্গে ক্যান্টিনে যাচ্ছেন, কানের কাছে ছুটকো আওয়াজ। আড্ডায় বান্ধবীর নাম উঠলেই বন্ধুদের মুচকি হাসি।
কিন্তু আপনি যদি হন মহাতারকা, ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ যদি থাকে আপনার হাতে, আর আপনার বান্ধবী যদি হন বলিউড কাঁপানো মুখ, তা হলে ‘আওয়াজ’ তো একটু বেশি হবেই। একটা গোটা স্টেডিয়াম তখন আওয়াজ তুলবে!
বিরাট কোহলিকে দেখে মনে হল, একটু লজ্জাই পাচ্ছেন। ‘হিয়ার কাম্স অনুষ্কা শর্মা’ কথাটা নবাবপুত্র সঞ্চালক উচ্চারণ করামাত্র একযোগে যে ভাবে ‘বিরাট...বিরাট’ চেঁচিয়ে উঠল মঙ্গলবার সন্ধের বৃষ্টি-আক্রান্ত যুবভারতী, যে ভাবে কয়েক জন অতি-উৎসাহী তার সঙ্গে যোগ করলেন ‘ভাবি...ভাবি’ কোরাস— তাতে মুখচোখ লাল হয়ে যাওয়াই উচিত। ওটা তো দু’পাঁচ জনে চেঁচাচ্ছে না, একসঙ্গে তিরিশ হাজার! যারা বসার জায়গায় উপচে পড়া বৃষ্টির জল থোড়াই কেয়ার করে ঠায় দাঁড়িয়ে!
এত দিন বিরাট-অনুষ্কা মানে ছিল, বাইশ গজে কোহলি আর গ্যালারিতে অনুষ্কা। আর বিরাট কোনও মাইলস্টোন ছুঁলে মাঠ থেকে সোজা গ্যালারি তাক করে ফ্লাইং কিস! কিন্তু মঙ্গলবারের যুবভারতী অপেক্ষায় ছিল, এ বার যখন মাঠে অনুষ্কা আর চেয়ারে বিরাট— তা হলে কি ফ্লাইং কিসটা গ্যালারি থেকে মাঠের দিকে আসবে?
নাহ্। অনুষ্কা শর্মার শো দেখে চোখ চোরা চাউনি দিয়েছে, ঠোঁট মুচকি হেসেছে, মুখে ফুটে উঠেছে রঙিন অভিব্যক্তি। কিন্তু কানফাটা চিৎকার শুনেও বিরাট এ দিন যেন আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন গাম্ভীর্য অটুট রাখার। বোঝা গেল না এ রকম অ-বিরাটোচিত নিয়ন্ত্রণের কারণগুলো কী? মিডিয়া যে ভাবে তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে পিছনে লেগেছে, সেটা? নাকি দেশের একটা উগ্র অংশের সেই বিকৃত ব্যাখ্যা যে, ভারত বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গিয়েছে অনুষ্কার জন্য!
কিন্তু অনুষ্কা শর্মা নিঃসন্দেহে মনে রাখবেন, কাপ-বিদায়ের পনেরো দিনের মধ্যে এমন একটা শহরে তিনি বিরাটের সামনে স্টেজ শো করে গেলেন, যেখানে কেউ তাঁকে ‘ডিস্ট্র্যাকশন’ বলল না। বরং উষ্ণ আলিঙ্গনে হৃদয়ে রেখে দিল।
টিম আইপিএল— তারাও মঙ্গলবারের কলকাতাকে ভুলতে পারবে তো?
অনুষ্ঠান শুরুর কথা সন্ধে সাড়ে সাতটায়, বিকেল পাঁচটা থেকে স্টেডিয়ামে লোক ঢুকছে, ঢুকে দেখছে শো-টা আদৌ শুরু হবে কি না তারই নিশ্চয়তা নেই। মাইকে সমানে বলে যাওয়া হচ্ছিল, বৃষ্টি একটু কমলেই আধ ঘণ্টার মধ্যে অনুষ্ঠান শুরু হবে। কিন্তু বৃষ্টি সেই সুযোগ দিলে তো! শেষমেশ রাত ন’টায় যখন প্রোগ্রাম শুরু হল, তখনও বৃষ্টির ভ্রুকুটিতেই হয়তো মেজাজটা কোথাও গিয়ে কিছুটা ধাক্কা খেয়ে গেল। সময়াভাবে একশো চব্বিশ মিনিটের অনুষ্ঠান নামাতে হল এক ঘণ্টা পনেরো মিনিটে। ফারহান আখতারের জন্য চারটে গান ধরা থাকলেও গাইলেন তিনটে, অনুষ্কা তিনটের বদলে নাচলেন দু’টো, লেজার শো-টা বাদ রাখতে হল, রবি শাস্ত্রী যখন আইপিএল শপথবাক্য পাঠ করাতে উঠলেন, মাইক নিশ্চুপ। শাহিদ কপূর স্টেজে ওঠার আগে বাইক করে চক্কর দিতে গিয়ে প্রায় পিছলেই যাচ্ছিলেন। সইফ আলি খানের সঞ্চালনা— সেটা কোথাও গিয়ে বারবার মনে পড়িয়ে দিচ্ছিল কোনও এক শাহরুখ খানের অভাবকে। কে বলতে পারে, আজ তিনি থাকলে অনুষ্কার শো-র সময় বিরাটকে টেনে মঞ্চে তুলতেন না? আরব-রাজ্যে গত বারের উদ্বোধনে তো অনুষ্কার বিশাল এক ছবি এনে হাজির করেছিলেন বিরাটের সামনে!
বৃষ্টির এই খুচরো ঝঞ্ঝাটকে বোল্ড করে উদ্বোধনকে জীবন দিয়ে গেল শহরের প্রাণশক্তি। এক জন দর্শকও মাঠ ছাড়লেন না। এবং হৃতিক রোশন। আগেই টুইট করে রেখেছিলেন, ঝড়বৃষ্টি তাঁর নাচ থামাতে পারবে না। পারলও না। পনেরো বছর আগে যে মঞ্চে জীবনের প্রথম স্টেজ শো করেছিলেন, এ দিন সেখানে ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা েযন আর করতে পারছিলেন না।
আইপিএল ট্রফির দিকে দর্শকদের মনোযোগ ঘুরিয়ে হৃতিককে আচমকা মঞ্চে হাজির করানো অবশ্যই চমকপ্রদ। ঠিক ততটাই চমকপ্রদ তাঁর পরিষ্কার বাংলায় ‘কলকাতা কেমন আছ? ভাল তো?’ বলে যুবভারতীকে হতচকিত করে দেওয়া। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কেও দেখা গেল হৃতিকের নাচে মজে থাকতে। চোখে সানগ্লাস, কালো পোশাক, ঢেউ খেলানো পেশি, ঘাড় পর্যন্ত কোঁকাড়ানো চুল, গলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেওয়া হলুদ উত্তরীয়, মাধ্যাকর্ষণকে বুড়ো আঙুল দেখানো নাচ— মঞ্চে হৃতিকের প্রতিটা সেকেন্ড যেন নেশা ধরিয়ে দিল। যাতে আচ্ছন্ন হয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো যুবভারতী দুলল, নাচল, গাইল।
ধুনুচি নাচ, কর্পূরের গন্ধ, কাঁসর-ঘণ্টার আওয়াজে যে নেশার বোধন হল সবে। আজ ইডেনে কলকাতা-মুম্বই দিয়ে উৎসবে ঢুকে পড়বে ক্রিকেটও। যে উৎসব চার দিনের নয়, চলবে আজ থেকে দু’মাস।
ও হ্যাঁ, ইডেনে আজ আবার বাদশাও থাকছেন!