তারকা: ব্যাটিং ও বোলিংয়ে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের দুই প্রধান মুখ। রোহিত শর্মা ও যশপ্রীত বুমরা (ডান দিকে)।
এমন কোনও আইপিএল নেই, যেখানে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ফেভারিট হিসেবে শুরু করে না। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির চেন্নাই সুপার কিংস এবং রোহিত শর্মার মুম্বই ইন্ডিয়ান্স আইপিএলের ইতিহাসে সব চেয়ে সফল দল। এখন রোহিতরা ছাপিয়ে যাচ্ছেন ধোনিদেরও। চেন্নাইয়ের সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তাদের প্রধান ক্রিকেটারদের বয়স বেড়ে যাওয়ায়। কিন্তু মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের জয়রথ চলছেই। টানা দু’বারের চ্যাম্পিয়ন তারা, মোট পাঁচ বারের বিজয়ী। এ বারও দাবিদার।
ব্যাটিং: রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের হাতে যতই বিরাট কোহালি, এবি ডিভিলিয়ার্স, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল থাকুক, স্বচ্ছন্দে বলে ফেলা যায়, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সব চেয়ে শক্তিশালী ব্যাটিং রয়েছে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের ঘরেই। এমন গোলাবারুদ কোনও দলের হাত নেই। শুরুতে রোহিত শর্মা, কুইন্টন ডি’কক। তিন নম্বরে ঈশান কিশান, যিনি সদ্য ভারতের জার্সিতে স্বপ্নের অভিষেক ঘটিয়েছেন। চারে সূর্যকুমার যাদব, দেশের নীল জার্সিতে যাঁর কিরণ দেখেছে ক্রিকেটবিশ্ব। গত বার ঈশান ও সূর্য মিলে প্রায় এক হাজারের কাছাকাছি রান করেছিলেন দেড়শোর কাছাকাছি স্ট্রাইক রেটে (প্রতি একশো বলে রানের হিসাব)। প্রতিপক্ষ বোলাররা যে এর পরে একটু আরাম করবেন, সে উপায় একদমই নেই। এর পরে ঝড় তোলার জন্য থাকছেন হার্দিক পাণ্ড্য, কায়রন পোলার্ড, ক্রুণাল পাণ্ড্যরা। এই ব্যাটিং বিভাগের দিকে তাকিয়েই সম্ভবত মাইকেল ভন বলেছিলেন, টি-টোয়েন্টিতে ভারতের চেয়েও কি শক্তিশালী দল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স?
অলরাউন্ডার: মুম্বইয়ের হাতে ভয় ধরানো সব ক্রিকেটার রয়েছে এই বিভাগে। কায়রন পোলার্ড এবং হার্দিক পাণ্ড্য কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে বিশ্বের যে কোনও দলে চোখ বুজে ঢুকে পড়বেন। সঙ্গে পাণ্ড্যদের বড় ভাই ক্রুণাল। সদ্য যিনি ভারতের জার্সিতে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। এতটাই শক্তিশালী মুম্বই ইন্ডিয়ান্স যে, নিউজ়িল্যান্ডের জিমি নিশামের মতো ক্রিকেটারকে প্রথম একাদশে জায়গা পাওয়ার জন্য লড়তে
হতে পারে।
বোলিং: যশপ্রীত বুমরা, ট্রেন্ট বোল্ট, অ্যাডাম মিলনে, নেথান কুল্টার-নাইল। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের পেস বোলিং বিভাগ অন্যতম সেরা। শুরুতে পাওয়ার প্লে-তে ভাল বল করেন বোল্ট। আবার শেষের ওভারে অপ্রতিরোধ্য বুম বুম বুমরা। নতুন যোগ দেওয়া অ্যাডাম মিলনে চোট সারিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেই ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার গতিতে বল করছেন। গতির আগুনে প্রতিপক্ষকে ঝলসে দেওয়ার রসদ রয়েছে মুম্বইয়ের হাতে। হার্দিক, ক্রুণাল এবং পোলার্ড গুরুত্বপূর্ণ কয়েক ওভার করে দিতে পারবেন। এ বারও স্পিন বিভাগের দায়িত্ব থাকবে লেগস্পিনার রাহুল চাহার ও বাঁ হাতি ক্রুণালের উপরে। স্পিন বিভাগে এ বারের সংযোজন পীযূষ চাওলা। আগে থেকে ছিলেন জয়ন্ত যাদবও। ভারতীয় পেসার লাগলে রয়েছেন ধবল কুলকার্নি এবং কোনও এক তেন্ডুলকর। ব্যাটিংয়ে বিশ্ববন্দিত সচিন-পুত্র, পেস বোলার অর্জুন তেন্ডুলকর। তবে বাঁ হাতি পেসার অর্জুনকে এখনই প্রথম একাদশে খেলতে দেখার সম্ভাবনা কম। বাঁ হাতি ফাস্ট বোলার হিসেবে আরও থাকছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ২০ বছরের, ৬ ফুট ৮ ইঞ্চি লম্বা মার্কো জ্যানসেন।
জুটি: কায়রন পোলার্ড ও হার্দিক পাণ্ড্যের (ডান দিকে) ঝোড়ো ব্যাটিং যে কোনও প্রতিপক্ষের কাছে আতঙ্কের।
শক্তি: দুর্ধর্ষ ব্যাটিং, দুরন্ত পেস বোলিং। ম্যাচ জেতানোর মতো একাধিক ক্রিকেটারের উপস্থিতি, যে কারণে যে কোনও পরিস্থিতি থেকে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারে মুম্বই। এত সব আগ্রাসী ব্যাটসম্যান রয়েছে যে, কেকেআরের প্রাক্তন ওপেনার ক্রিস লিনের মতো মারকুটে ব্যাটসম্যানের জায়গা হয় না। কোনও স্কোরই মুম্বইয়ের ঝোড়ো ব্যাটসম্যানদের সামনে নিরাপদ নয়। যেমন বিদেশি ক্রিকেটারদের দক্ষতা, তেমনই দুরন্ত সব ভারতীয় খেলোয়াড়। রোহিত, ঈশান, সূর্যকুমার, বুমরা, হার্দিক, ক্রুণাল, রাহুল চাহার। প্রথম একাদশে যে সাত জন ভারতীয় ক্রিকেটার খেলেন, তাঁরা প্রত্যেকেই উচ্চ মানের। সঙ্গে রোহিতের ঠান্ডা মাথা এবং মাহেলা জয়বর্ধনের পর্দার পিছন থেকে চাণক্যের ভূমিকা পালন করা অবশ্যই মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বড় অস্ত্র।
দুর্বলতা: এমন একটা ভারসাম্য থাকা দলের দুর্বলতা খুঁজে পাওয়া কঠিন। যদি কোথাও ঘাটতি থাকে রোহিতদের তো সেটা তাঁদের স্পিন বিভাগে। চাহার, ক্রুণাল, চাওলাদের রান দিয়ে ফেলার প্রবণতা রয়েছে। কোনও সন্দেহ নেই, যে কোনও প্রতিপক্ষ মুম্বইয়ের স্পিনারদেরই আক্রমণ করার নকশা তৈরি করবে। এবং, নিরপেক্ষ কেন্দ্রে খেলা মানে ঘরের মাঠ ওয়াংখেড়েতে নিজেদের শক্তি অনুযায়ী পিচও রোহিতরা বানাতে পারবেন না।
সম্ভাব্য প্রথম একাদশ: রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), কুইন্টন ডি’কক (উইকেটকিপার), ঈশান কিশান, সূর্যকুমার যাদব, হার্দিক পাণ্ড্য, কায়রন পোলার্ড, ক্রুণাল পাণ্ড্য, নেথান কুল্টার-নাইল/অ্যাডাম মিলনে, রাহুল চাহার/পীযূষ চাওলা, ট্রেন্ট বোল্ট এবং যশপ্রীত বুমরা।
পূর্বাভাস: এ বারও ফেভারিট। প্লে-অফ খেলবেই, ধরা যায়।