সফর: মুম্বই থেকে আমদাবাদে পৌঁছল কেকেআর। প্রতিপক্ষ পঞ্জাব। টুইটার
বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ, সোমবার কে এল রাহুলের পঞ্জাব কিংসের মুখোমুখি অইন মর্গ্যানের কলকাতা নাইট রাইডার্স। প্রত্যেক বছর সমর্থকদের কাছে এই ম্যাচ আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে ওঠে বীর ও জ়ারার দ্বৈরথ হিসেবে। পঞ্জাব কিংসের অন্যতম কর্ণধার প্রীতি জ়িন্টার সঙ্গে নাইটদের অন্যতম মালিক শাহরুখ খানের সম্মানের দ্বৈরথ।
বর্তমানে যদিও শাহরুখ-প্রীতি দ্বৈরথকে ছাপিয়ে গিয়েছে ক্রিস গেল ও আন্দ্রে রাসেলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা। গত ম্যাচেই ছন্দে ফিরেছেন গেল। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে ছন্দে ফিরলেও রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে ফের ব্যর্থ রাসেল। সোমবার মোতেরায় ছক্কার আতসবাজি দেখা যায় কি না, তা
সময়ই বলবে।
পাঁচ ম্যাচের শেষ চারটিতে হেরে প্রতিযোগিতার শুরুর দিকেই ধুঁকছে কেকেআর। তার উপরে পঞ্জাব কিংস শেষ ম্যাচে গত বারের চ্যাম্পিয়ন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে হারিয়ে নাইটদের সামনে আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে।
অইন মর্গ্যানের দলের সব চেয়ে বড় সমস্যা উপরের সারির ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা। ওপেনার শুভমন গিল শেষ পাঁচ ম্যাচে মোট ৮০ রান করেছেন। নীতীশ রানা প্রথম ম্যাচে হাফসেঞ্চুরি করার পর থেকে রান করতে ব্যর্থ। অনভিজ্ঞ রাহুল ত্রিপাঠীও ভাল শুরু করে বড় ইনিংস উপহার দিতে পারছেন না। অধিনায়ক অইন মর্গ্যান হয়তো জীবনের সব চেয়ে খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। বিশ্বকাপ জিতে আসা অধিনায়ক এমন সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, যা দেখেই বলে দেওয়া যায়, এতটা চাপ নিতে হবে আশা করেননি।
ভাগ্যও সঙ্গ দিচ্ছে না মর্গ্যানের। রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে একটি বলও খেলতে না পেরে রান আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরতে হয় তাঁকে। এখনও পর্যন্ত চলতি মরসুমে তিরিশের গণ্ডিও পেরোতে পারেননি। সুনীল নারাইন ও আন্দ্রে রাসেল গত বারের মতোই ছন্দহীন। চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে ‘মাস্ল রাসেল’-এর কিছু দৃশ্য ফুটে উঠলেও রাজস্থানের বিরুদ্ধে ফের ব্যর্থ। একমাত্র ধাবাহিকতার সঙ্গে রান করে চলেছেন সহ-অধিনায়ক দীনেশ কার্তিক। তাঁর ছন্দের উপরেই অনেকটা নির্ভর করছে নাইটদের ব্যাটিং।
নাইটদের ব্যাটিং বিভাগে এতটা সমস্যা তৈরি হওয়ার কথা নয়। কারণ, ব্যাট হাতে ম্যাচ পাল্টে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে আট নম্বর উইকেট পর্যন্ত। যদিও প্রথম ছয় ওভারে রানের খরা সব চেয়ে বড় কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে নাইটদের কাছে। যে ক’টি দল বড় রান করছে, সেখানে ওপেনাররা সফল। যেমন রবিবারের ম্যাচ বাদ দিলে বিরাট কোহালি ও দেবদত্ত পাড়িকল শুরু থেকেই বিপক্ষের উপরে চাপ সৃষ্টি করছেন। চেন্নাই সুপার কিংসের ঋতুরাজ গায়কোয়াড় ও ফ্যাফ ডুপ্লেসি আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে শুরু করছেন। দিল্লি ক্যাপিটালসের শিখর ধওয়ন ও পৃথ্বী শ জুটির উপরেই নির্ভর করছে দলের রান। এ দিকে নাইটদের শুভমন গিল এখনও মরসুমে একটিও হাফসেঞ্চুরি করতে পারেননি। পাঁচ ম্যাচ শেষে টেবলের সব চেয়ে শেষে স্থান হয়েছে নাইটদের।
শুভমনের উপর থেকে যদিও ভরসা হারাচ্ছেন না নাইটদের মেন্টর ডেভিড হাসি। বরং তিনি মনে করেন, আইপিএল শেষে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় সেরাদের মধ্যেই থাকবে শুভমন গিলের নাম। শনিবার ম্যাচ শেষে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেছেন, ‘‘ছন্দ আসবে যাবে, কিন্তু মানের কোনও হেরফের হয় না। শুভমন উঁচু মানের ব্যাটসম্যান। কঠোর পরিশ্রম করতে পারে। মিলিয়ে নেবেন, আইপিএল শেষে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় উপরের দিকেই থাকবে ওর নাম।’’ যোগ করেন, ‘‘টেস্ট জীবন যে এত ভাল শুরু করে, তাও অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে, সে কখনও খারাপ ব্যাটসম্যান হতে পারে না।’’ নাইটদের দল নির্বাচন নিয়েও উঠছে একাধিক প্রশ্ন। নারাইনকে খেলানো হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু তাঁকে মাঝের দিকে ব্যাট করতে পাঠানো হচ্ছে কোন যুক্তিতে, তা জানা নেই। বল হাতেও আগের মতো সক্রিয়তা হারিয়েছেন। তাঁর ঘূর্ণিকে কেউ আর সমীহ করছে না। তাই বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত, কেন লকি ফার্গুসনের মতো জোরে বোলারকে বসিয়ে রাখা হয়েছে?
গত বার সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে লকিকে দলে নিতেই জয়ের সরণিতে ফিরে এসেছিল কেকেআর। এ বারও তাঁকে নিয়ে পরীক্ষা করে দেখা যেতেই পারে? ডেভিড হাসি যদিও ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন লকিকে খেলানোর। তাঁর কথায়, ‘‘আগামী ম্যাচগুলোয় লকির কথা অবশ্যই ভাবা হবে। নেটে দারুণ বল করছে। ফিটনেসের চূড়ায় রয়েছে ও। গতিও অনেকটাই বেড়েছে। গত বার আমিরশাহিতেও লকির ছন্দে মুগ্ধ প্রত্যেকে।’’
কে এল রাহুলদের বিরুদ্ধে নিউজ়িল্যান্ডের বিধ্বংসী পেসারের জায়গা হয় কি না সেটাই দেখার।