সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে নাইটদের জয়ের বিশ্লেষণ করলেন সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
রবিবার সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে ১০ রানে হারিয়ে প্রথম যুদ্ধ জেতা হয়ে গিয়েছে। কলকাতা নাইট রাইডার্সের শরীরী ভাষায় মুগ্ধ সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও বাংলার রঞ্জি জয়ী প্রাক্তন অধিনায়ক মনে করেন এ বারও নাইটদের সামনে অনেক বাধা আসবে। ডেভিড ওয়ার্নারের দলকে হারানোর পর এ বার সামনে রোহিত শর্মার মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। যাদের বিরুদ্ধে নাইটদের রেকর্ড মোটেও ভাল নয়। প্রথম ম্যাচের ফল ও নাইটদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ কয়েকটি দিক তুলে ধরলেন বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ক।
সুনীল নারাইন নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসা: সমস্ত ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ সুনীল নারাইনকে দলে রেখে প্রথম একাদশ সাজিয়েছিল। কিন্তু মর্গ্যানের মাথায় ঘুরছিল অন্য পরিকল্পনা। নারাইন গত দশ বছর ধরে আইপিএল খেলছে। এই দশ বছরে ওর বোলিং অ্যাকশন নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। এর ফলে ওকে বারবার বোলিং অ্যাকশন ঠিক করার জন্য পরীক্ষা দিতে হয়েছে। এতে ওর ধার অনেক কমে গিয়েছে। ওর বলে ব্যাটসম্যানরা আগের মতো বিভ্রান্ত হয় না। ওর ব্যাটিংয়ের মধ্যেও একটা ফাটকা ব্যাপার আছে। সেটা দিয়ে এক কিংবা দুই মরসুম চালানো যায়। প্রতি বছর এই নীতি মেনে বিপক্ষকে জব্দ করা সম্ভব নয়। কারণ আধুনিক ক্রিকেটে মাঠের বাইরেও একটা খেলা হয়। প্রতিটি খেলোয়াড়ের ভুলত্রুটি নিখুঁত ভাবে লেখা থাকে। সেগুলো নিয়ে সবাই চুলচেরা বিশ্লেষণ করে। তাই আমার মতে নারাইনকে বসিয়ে শাকিবকে খেলানোর সিদ্ধান্ত একেবারে সঠিক। তবে নারাইনও খেলবে। কিন্তু এখনই এই দলে ওর জায়গা দেখতে পাচ্ছি না।
কঠিন বোলিংয়ের সামনে নীতীশ রানার আসল পরীক্ষা: নীতীশ রানা দারুণ ব্যাট করেছে। সেটা আমার বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে সমস্যা হল ছেলেটার পায়ের কাজ একেবারে নেই। দৃষ্টি সজাগ রেখে হাতের জোরে ব্যাট চালায়। তাছাড়া বেশির ভাগ শট মিড উইকেটের উপর দিয়ে খেলছে। এ ভাবে হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে খেলে সফল হলেও মুম্বই, দিল্লি, চেন্নাইয়ের মতো শক্তিশালী বোলিংয়ের বিরুদ্ধে ওকে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। পায়ের ব্যবহার না করলে যশপ্রীত বুমরা, কাগিসো রাবাডা, দীপক চাহারদের বিরুদ্ধে খেলা কিন্তু সহজ নয়।
প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ লম্বা রেসের ঘোড়া। মনে করেন বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ক। ছবি - টুইটার।
দলের সম্পদ শাকিব: শাকিব আল হাসানের মতো ক্রিকেটারকে সব ম্যাচ খেলানো উচিত। এই ধরনের ক্রিকেটে শাকিব হল সম্পদ। ব্যাটিং, ফিল্ডিং দারুণ করলেও শাকিবের প্রধান অস্ত্র কিন্তু বোলিং। ওর সাইড আর্ম বোলিংয়ের বিরুদ্ধে রান করা মোটেও সোজা নয়। ঋদ্ধিমান সাহা দারুণ স্পিন খেললেও শাকিবের জোরের উপর নিচু হয়ে যাওয়া বল বুঝতে পারেনি। এর সঙ্গে যোগ হবে ওর ব্যাটিং। সবে একটা ম্যাচ হয়েছে। শাকিব প্রতি ম্যাচে ১০-১৫ বল বল পেলে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
মর্গ্যান ও শুভমন নাইটদের প্রাণ ভোমরা: প্রথম ম্যাচে দুজন ব্যাট হাতে সফল না হলেও আগামী দিনে মর্গ্যান ও শুভমন অনেক ম্যাচ জেতাবে। তাছাড়া অধিনায়ক হিসেবেও মর্গ্যান অসাধারণ। প্রথম ম্যাচে বোলিং ও ফিল্ডিং বদল দেখে সেটা ফের বোঝা গিয়েছে। আমার মতে কেকেআর এতদিনে সঠিক অধিনায়ক পেয়েছে।
প্রথম ম্যাচে রান পেলেও নীতীশ রানাকে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। মন করেন সম্বরণ।
প্রসিদ্ধ ভবিষ্যতে টেস্ট খেলবে: প্যাট কামিন্সের অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। তাই ওর ভাল ফল করা খুবই স্বাভাবিক। তবে প্রসিদ্ধকে দেখে আমি একেবারে মুগ্ধ। গত একদিনের সিরিজে ভাল খেলে ওর মধ্যে যে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে সেটা এই ম্যাচে দেখা গেল। ডেভিড ওয়ার্নারকে ও যে বলে আউট করেছে সেটাকে ক্রিকেটের ভাষায় ‘টেস্ট বল’ বলে। আমার ধারণা ও ভবিষ্যতে টেস্ট খেলবে।
হরভজন ফ্যাক্টর, কিন্তু কটা ম্যাচ খেলবে: চেন্নাইয়ের পিচে হরভজন সিংহ ভাল বল করে। অতীত সেটা বলছে। তবে মর্গ্যান কিন্তু ওকে দিয়ে মাত্র ১ ওভার বোলিং করাল। এখন ৪১ বছরের ভাজ্জিকে কটা ম্যাচ খেলানো হয় সেটা দেখতে চাই।