হরভজন সিংহ। ছবি টুইটার।
চল্লিশ বছর বয়সে হরভজন সিংহের পরিশ্রম করার তাগিদ দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন দীনেশ কার্তিক। অভিজ্ঞ অফস্পিনারের উন্নতি করার তাগিদ, দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে ওঠার ইচ্ছা নাইট শিবিরের তরুণদের অনুপ্রাণিত করতে শুরু করেছে।
নাইটদের প্রথম ম্যাচ চেন্নাইয়ে সানরাইজ়ার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে। এমএ চিদম্বরম স্টেডিয়ামের পিচ স্পিনারদের সাহায্য করে। তাই প্রথম একাদশে জায়গা করে নেওয়ার জেদ ফুটে উঠছে হরভজনের প্রস্তুতির ভঙ্গিতে। প্রত্যেক দিন সময়ের আগে অনুশীলনে আসছেন। প্রস্তুতি ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে নেটে নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটজীবনে সাতশোর বেশি উইকেট প্রাপ্তির পরেও কী করে কারও মধ্যে উন্নতি করার এতটা অদম্য ইচ্ছে থাকতে পারে, তা ভাবতে গিয়ে বিস্মিত নাইটদের সহ-অধিনায়ক।
মুম্বইয়ের ডিওয়াই পাটিল স্টেডিয়ামে অনুশীলন শুরু হওয়ার আগে কেকেআর ওয়েবসাইটে কার্তিক বলেছেন, “প্রত্যেক দিন অনুশীলন শুরু হওয়ার বেশ কিছুক্ষণ আগে মাঠে চলে আসছে ভাজ্জি। এটা ধারাবাহিক ভাবেই করে চলেছে। এই একটি সপ্তাহ ভাজ্জিকে দেখার পরে মনে হচ্ছে, আগের চেয়ে অনেক পরিবর্তন এসেছে ওর মধ্যে।”
এ বারের নিলামে শুরুতে কোনও দল হরভজনকে নিতে আগ্রহ দেখায়নি।পরে অবিক্রিত ক্রিকেটারদের তালিকা থেকে তাঁকে দু’কোটি টাকায় নেয় কেকেআর। হরভজনকে নেওয়ার পরে বহু প্রশ্ন উঠেছিল সমর্থকদের মধ্যে। অনেকেই বলেছিলেন, সিনিয়র ক্রিকেটারের সম্মান রক্ষার জন্য এই সিদ্ধান্ত। কারও মত, দলে নিলেও এ যুগের ফিটনেস মাপকাঠির সঙ্গে হয়তো নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবেন না হরভজন। কিন্তু মানিয়ে ওঠার চেষ্টা বজায় রেখেছেন প্রাক্তন সিএসকে তারকা। কার্তিকের কথায়, “হরভজনকে দলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত সহজ ছিল না। তবে এই কয়েক দিনে ও যা পরিশ্রম করেছে, তা দেখে বাকিদের মধ্যেও কিছু করে দেখানোর ইচ্ছে তৈরি হয়েছে।”
টানা ২৩ বছর ক্রিকেট খেলছেন হরভজন। তার মধ্যেও নিজেকে প্রমাণ করার এতটা ইচ্ছেশক্তি দেখে অবাক প্রত্যেকে। কার্তিকের কথায়, “আমাদের অনুশীলন ম্যাচ শুরু হয় সন্ধে সাতটা থেকে। হরভজন মাঠে চলে আসে বিকেল চারটের সময়। শাকিব-আল-হাসান, অইন মর্গ্যানদের বল করার পরে ফের গা ঘামিয়ে ম্যাচ খেলতে নামে। ম্যাচ না থাকলে দীর্ঘক্ষণ নেটে ব্যাটও করে।” যোগ করেন, “ম্যাচেও বল করার পরে ২০ ওভার ফিল্ডিং করছে। এর চেয়ে বেশি কী-ই বা আশা করা যায়! জীবনে সব কিছুই পাওয়া হয়ে গিয়েছে। তবুও ভাল কিছু করে দেখানোর এতটা আগ্রহ কিন্তু ওর পরিশ্রমী চরিত্রের উদাহরণ দেয়। আমি নিশ্চিত, নাইট জার্সিতে ভাল কিছু করে দেখাবে ও।”
বুধবার তৃতীয় প্রস্তুতি ম্যাচ খেলছে নাইটরা। বেন কাটিং ও নীতীশ রানাকে দু’দলের অধিনায়ক করা হয়েছে। রানার দলে রয়েছেন শাকিব, আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারাইন, কার্তিকরা। কাটিংয়ের দলে খেলছেন, হরভজন, টিম সাইফার্ট, রাহুল ত্রিপাঠী, শেল্ডন জ্যাকসনরা।
ম্যাচ খেলতে যাওয়ার আগে ভক্তদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্বে বসেছিলেন কার্তিক। টুইটারে তিনি জানিয়েছেন, ইডেনে খেলতে না পারার অভাব তিনি অনুভব করবেন। তবে চেন্নাইয়ের ঘরের মাঠে খেলার জন্যও মুখিয়ে তিনি। আইপিএলে ভাল ছন্দে থেকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে প্রবেশ করার ইচ্ছেও প্রকাশ করেছেন তিনি। কার্তিক বলেছেন, “বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়ার জন্য ভাল খেলতে হবে। সেই লক্ষ্যেই এগোচ্ছি।” কিন্তু ভারতীয় দলে ঋষভ পন্থ ও কে এল রাহুল রয়েছেন। কার্তিক সেই দলে আদৌ জায়গা করে নিতে পারেন কি না দেখার।
নাইটদের সহ-অধিনায়কের কাছে জানতে চাওয়া হয়, নেতৃত্বের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার পরে তিনি কি আদৌ স্বস্তিবোধ করছেন? কার্তিকের উত্তর, “নিজের প্রতি অনেক বেশি সময় দিতে পারছি। কোথায় উন্নতি করা প্রয়োজন তা খুঁজতে সমস্যা হচ্ছে না। মর্গ্যানকে সাহায্য করছি। সহ-অধিনায়কের ভূমিকা বেশ উপভোগ করছি।”
নাইট পরিবারের সব চেয়ে কাছের বন্ধু হিসেবে মর্গ্যানকেই বেছে নিয়েছেন কার্তিক। তাঁর কথায়, “মর্গ্যানের সঙ্গে গল্প করতে খুব ভাল লাগে। ও সব সময় ক্রিকেটের বাইরের কোনও বিষয়ে কথা বলে। যা আমার খুব পছন্দ।”