Cricket

নানা আশঙ্কা আর প্রশ্নের মধ্যে ফের কি কেকেহার

নাইটদের জন্য অবশ্য এমন কোনও উচ্ছ্বাসের ছবি অপেক্ষা করে ছিল না। যে রকম বিবর্ণ ক্রিকেট খেলে তাঁরা আট উইকেটে দুরমুশ হলেন, কে বলবে তাঁদের মালিকের ‘দিলওয়ালে’ বা ‘দিল তো পাগল’ হ্যায়’ নামে সুপারহিট ফিল্ম আছে!

Advertisement

সুমিত ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২০ ০৪:০৪
Share:

নায়ক: রানার স্টাম্প ছিটকে দিয়ে সিরাজের উল্লাস। ছবি: আইপিএল

হায়দরাবাদের রাস্তায় অটো চালিয়ে যখন সংসার চালাতেন ঘাউস মহম্মদ, একটাই স্বপ্ন সঙ্গী হত প্রত্যেক দিন। ক্লান্ত শরীরেও ভাবতেন, আরও দু’টো ট্রিপ করি। তা হলে আরও দু’টো পয়সা আয় করতে পারব আর ছেলের দামি বোলিং শ্যুট কিনে দিতে পারব। বুধবার আবু ধাবিতে মহম্মদ সিরাজের দুরন্ত ফাস্ট বোলিংয়ে যখন খড়কুটোর মতো উড়ে যাচ্ছে কেকেআর, কোথাও যেন বাবার সেই পরিশ্রম, লড়াইও স্বীকৃতি পাচ্ছিল।

Advertisement

তিন ওভার, দুই মেডেন, দুই রান, তিন উইকেট! আইপিএলের ইতিহাসে এমন বিধ্বংসী প্রথম স্পেল আর কখনও দেখা যায়নি। সিরাজ শেষ করলেন ৪-২-৮-৩ হিসাব নিয়ে। সারা জীবনের সংগ্রহশালায় রেখে দেওয়ার মতো একটা ছবি দেখা গেল ম্যাচের পরে। সিরাজকে নিয়ে আরসিবি ক্রিকেটারেরা আনন্দ করছেন। আর তিনি, সিরাজ ধরে আনলেন দলের কিংবদন্তি ফাস্ট বোলারকে। ডেল স্টেনকে জড়িয়ে ধরে তাঁর দিকে আঙুল দেখিয়ে যেন ইশারা করলেন— ইনিই আসল বস্‌।

নাইটদের জন্য অবশ্য এমন কোনও উচ্ছ্বাসের ছবি অপেক্ষা করে ছিল না। যে রকম বিবর্ণ ক্রিকেট খেলে তাঁরা আট উইকেটে দুরমুশ হলেন, কে বলবে তাঁদের মালিকের ‘দিলওয়ালে’ বা ‘দিল তো পাগল’ হ্যায়’ নামে সুপারহিট ফিল্ম আছে! বাদশার ‘দিল’-এর নামগন্ধও যে মাঠে দেখা যাচ্ছে না!

Advertisement

আরও পড়ুন: লজ্জার হার কলকাতার, ব্যাঙ্গালোর জিতল ৮ উইকেটে

আরও পড়ুন: চোটের জন্য ছিটকে গেলেন ডোয়েন ব্র্যাভো, আরও চাপে চেন্নাই

আট উইকেটে দুরমুশ হওয়ার পাশাপাশি একাধিক লজ্জার রেকর্ড সঙ্গী হল নাইটদের। কুড়ি ওভারে ৮৪-৮ আইপিএলের ইতিহাসে অলআউট না হয়ে সর্বনিম্ন স্কোর। এর আগেরটা ছিল ডারবানে। অবশ্য শুরুতে যে রকম আগুনে বোলিং করছিলেন সিরাজ যে, মনে হচ্ছিল আবু ধাবি নয়, ডারবানেই ম্যাচ হচ্ছে। সিরাজকে এত দিন সকলে ইনসুইং বোলার হিসেবে জানত। এ দিন তিনি দেখিয়ে দিয়ে গেলেন, আউটসুইংটাও দারুণ রপ্ত করে ফেলেছেন। কেকেআর ব্যাটসম্যানেরা চারটি মে়ডেন দিলেন। রেকর্ড। সিরাজ একা নিয়ে গেলেন দু’টি মেডেন। রেকর্ড। একটা সময়ে মনে হচ্ছিল, ২০১৭-তে কেকেআরের কাছে সেই ৪৯ অলআউটের জবাবই হয়তো এ দিন দিতে নেমেছে কোহালির আরসিবি।

দীনেশ কার্তিককে গুগলিতে ফেরালেন চহাল। এই নিয়ে ছ’বার তিনি চলতি আইপিএলে লেগস্পিনারের বলে আউট হলেন! শুভমন গিল আর এক জন। যে দিন দ্রুত রান তুলতে হবে, মন্থর খেলছেন। এ দিন তিন রানে দুই উইকেট, একটা দিক ধরার ছিল, তাঁর অ্যাডভেঞ্চারের শখ জাগল। পুল মারতে গিয়ে উইকেট দিয়ে এলেন! কেকেআর ডাগআউটে এত সব কোচ বসে সারাক্ষণ নোট নিয়ে কী করেন!

অধিনায়ক কোহালি এ দিন দু’টো মোক্ষম মগজাস্ত্র ছাড়লেন। এক) আবু ধাবি পিচে ক্রিস মরিসের প্রথম ওভারে বল নড়াচড়া করছে বুঝেই সিরাজের হাতে নতুন বল তুলে দিলেন। দুই) চহালকে দিয়ে ব্যাটসম্যানের নাগালের বাইরে ওয়াইড লেগস্পিন করিয়ে যাওয়া। এই ডেলিভারিটা এ বারে চহালের ব্রহ্মাস্ত্র হয়ে উঠেছে। ব্যাটসম্যানের শরীর থেকে দূরে অফস্টাম্পের বাইরে উঁচু করে ফ্লাইট দিচ্ছেন। মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলছেন ব্যাটসম্যানরা। সিরাজ-চহাল, দু’জনেই পরে বলে গেলেন, অধিনায়কই এই ভাবনার নেপথ্যে।

কেকেআরের ক্ষেত্রে এ রকম কোনও বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত চোখে পড়ছে না। উল্টে সুনীল নারাইন ও আন্দ্রে রাসেলকে বাইরে রেখে তারা খেলতে নামল! রোজই প্রথম একাদশ নিয়ে কোনও না কোনও বিস্ময় উপহার দিয়ে চলেছে তারা। নাইট শিবিরে অশান্তির কালো মেঘ দেখা দিল কি না, সেই আশঙ্কাও বাড়ছে। কিছু কিছু ছবি যে চোখ এড়ানোর নয়! এ দিন আরসিবি ইনিংস শুরুর আগে দেখা গেল হেড কোচ ব্রেন্ডন ম্যাকালাম কথা বলছেন নতুন অধিনায়ক অইন মর্গ্যানের সঙ্গে। কার্তিক সেখানে নেই। তিনি তখন ভারতীয় সহকারী কোচের সঙ্গে। পাশাপাশি দু’টো ছবি বার বার দেখানো হল টিভিতেও। দারুণ সুখী পরিবারের ছবি নয়।

এ বারের আইপিএলে নবজাগরণ ঘটেছে পেস বোলারদের। কাগিসো রাবাডা, নোখিয়া, মহম্মদ শামি, যশপ্রীত বুমরা, জফ্রা আর্চার। ম্যাচ জিতিয়ে নায়ক ফাস্ট বোলারেরা। ব্যতিক্রম কেকেআর। প্যাট কামিন্স নিষ্প্রভ। আর লকি ফার্গুসন থাকতেও শুরু থেকে বসিয়ে রাখা হচ্ছিল। নিলাম টেবলে মুখ দেখানো কর্তাদের ক্রিকেট বুদ্ধির অভাবও স্পষ্ট। উপরের দিকে কোনও পাকাপোক্ত, অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান নেওয়া হয়নি। এ দিন আবু ধাবিতে বল সুইং, সিম করতেই সামলানোর মতো কাউকে পাওয়া গেল না। ‘করব, লড়ব জিতব রে’ তাই ক্রমশ বিলীন হয়ে আশঙ্কা বাড়ছে, এ বারও কি কেকেহার?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement