স্ত্রী সাক্ষী ও কন্যা জিভাকে নিয়ে ধোনি। এই ছবি দেখা যেতে পারে আমিরশাহিতে আইপিএল হলেও। ডান দিকে, বিরাটের সঙ্গে ট্যুরিস্ট ভিসায় আমিরশাহিতে যেতে পারবেন অনুষ্কা। — ফাইল চিত্র
আইপিএল সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে করা হবে ধরে নিয়ে নানা রকম নকশা রবিবারেই করে রাখল ভারতীয় বোর্ড। যদিও কেউ জানে না, আগামী দু’মাস দেশের এবং বিশ্বের করোনা পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে। তবু পরিকল্পনা করে রাখা হল যে, দশ দিন দু’টো করে ম্যাচ হবে। দুপুরের ম্যাচ শুরু হবে ভারতীয় সময় সাড়ে তিনটেতে। রাতের ম্যাচ শুরু হবে সাড়ে সাতটায়।।
বোর্ড কর্তারাও তা জানেন এবং ভাল মতোই মাথায় রাখছেন, সব আয়োজন করে রেখেও পিছিয়ে আসতে হতে পারে। তবু আয়োজন করে রাখা। যাতে যদি পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে আগামী দু’মাসে এবং আইপিএল আয়োজন করা সম্ভব হয়, সম্ভাব্য চার হাজার কোটি টাকা লোকসান থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
ঠিক হয়ে থাকল, মরুদেশে আইপিএল শুরু হবে ১৯ সেপ্টেম্বর। ফাইনাল হবে ১০ নভেম্বর। প্রথমে কথা ছিল, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই ফাইনাল করে ফেলা হবে। যেহেতু ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে বিরাট কোহালিদের অস্ট্রেলিয়া সফর শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। যদি ১৪ দিনের নিভৃতবাস পর্ব মানতে হয় তাঁদের, আগে-আগে বেরিয়েও পড়তে হবে। কিন্তু আইপিএলের টিভি সম্প্রচার স্বত্বের অধিকারী স্টার স্পোর্টস চেয়েছিল, বিজ্ঞাপনী বাজারকে আকৃষ্ট করার জন্য দীপাবলি সপ্তাহে ফাইনাল হোক। দীপাবলি ১৪ নভেম্বর। তার গায়ে-গায়ে ১০ নভেম্বর ফাইনাল। আইপিএলে থাকছে চিনা টাইটেল স্পনসরও। সরকারের অনুমতি ছাড়া তাদের রাখা হল, এমন ভাবার উপায় নেই। ঘটনা হল, অতিমারিতে তৈরি হওয়া এই মন্দার বাজারে লগ্নিকারীদের দূরে
ঠেলতে কে চায়!
যে বিষয়টি নিয়ে সব চেয়ে বেশি জলঘোলা চলছিল, তা হচ্ছে ক্রিকেটারেরা তাঁদের পরিবার নিয়ে যেতে পারবেন কি না। রবিবার বোর্ডের আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের বৈঠক হয় ভিডিয়ো সম্মেলনের মাধ্যমেই। বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, আইপিএল চেয়ারম্যান ব্রিজেশ পটেলরা ছিলেন। বোর্ড কর্তারা ঠিক করে রাখলেন, ক্রিকেটারেরা পরিবার নিয়ে যেতে পারবেন। আমিরশাহি সরকার জানিয়েছে, ট্যুরিস্টদের জন্য ফের দরজা খুলে দেওয়া হচ্ছে। স্ত্রী, পরিবার তাই ট্যুরিস্ট ভিসায় যেতে পারবেন। ধরা যাক, বিরাট কোহালির স্ত্রী অনুষ্কা শর্মা বা ধোনির স্ত্রী সাক্ষী যদি আইপিএলের সময়ে আমিরশাহিতে যেতে চান। তাঁদের ট্যুরিস্ট ভিসাতেই যেতে হবে। বোর্ড থেকে ‘এসওপি’ (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর) বানানো হচ্ছে সমস্ত কিছু মাথায় রেখে, বললেন সভায় অংশ নেওয়া এক প্রভাবশালী কর্তা। ৫৩ দিনের দীর্ঘ প্রতিযেগিতা বলেই স্ত্রী-পরিবারকে সঙ্গে রাখার অনুমতি দেবে বোর্ড।
তবে পরিবার নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ভার ফ্র্যাঞ্চাইজিদের উপরই ছাড়বে বোর্ড। দলই ঠিক করবে, কোন কোন ক্রিকেটার স্ত্রী, পরিবার নিয়ে যেতে পারবে। টিম হোটেলে কড়া নিয়মকানুন বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। হোটেল থেকে বেরিয়ে অন্য কোথাও লাঞ্চ বা ডিনারে যাওয়া যাবে না। হোটেলের মধ্যেই তা সারতে হবে। যদি ক্রিকেটারদের পরিবার টিম হোটেলে থাকে, তাঁদের এই নিয়মকানুন মানতে হবে। প্রত্যেক দলে ২৪ জনের বেশি ক্রিকেটার রাখার অনুমতি দেওয়া হবে না। তবে ক্রিকেটে চালু হওয়া ‘কোভিড পরিবর্ত’ এসে গেল আইপিএলেও। পাঁচ দিনের টেস্টের মতো ম্যাচ চলাকালীন পরিবর্ত এখানে দরকার পড়বে না। কিন্তু প্রতিযোগিতা চলাকালীন কেউ করোনা আক্রান্ত হলেই তাঁর পরিবর্ত আনা যাবে। এ ব্যাপারে কোনও বিধিনিষেধও রাখছে না বোর্ড। যত খুশি পরিবর্ত আনা যেতে পারে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য মূলত বিদেশি ফুটবল লিগগুলির নিয়মকানুনই খতিয়ে দেখছে বোর্ড। স্পেনে লা লিগা বা ইংল্যান্ডে ইপিএল কী ভাবে প্রতিযোগিতা চালিয়েছে। তবে এখানে তফাত হচ্ছে, আমিরশাহি বলছে, তারা মাঠে দর্শকও আনবে।
আইপিএল চলাকালীন যাবতীয় স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয় দেখাশোনা করার জন্য দুবাইয়ের একটি সংস্থার সঙ্গে কথা চলছে বোর্ডের। তেমনই একটি নামী ভারতীয় সংস্থার সঙ্গে কথা চলছে ‘বায়ো বাব্ল’ অর্থাৎ জৈব সুরক্ষা বলয় তৈরি করার জন্য। ঠিক যে ভাবে ইংল্যান্ড বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ হয়েছে, সেভাবে কঠোর নিয়মে এই বলয় পরিচালনা করা হবে। জোফ্রা আর্চারের মতো কেউ নিয়মভঙ্গ করলে কঠোর শাস্তির কথাও ভেবে রাখা হয়েছে এবং ফ্র্যাঞ্চাইজিদের পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যত বড় তারকাই হোক না কেন, জৈব সুরক্ষা বলয়ের নিয়ম শিথিল করা যাবে না। দীর্ঘ দিন ক্রিকেট থেকে দূরে থাকায় এক মাসের শিবির চেয়েছিল দলগুলি। সম্ভবত পনেরো-কুড়ি দিনের শিবিরের অনুমতি মিলবে। অগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে চার্টার্ড বিমানে দুবাই যেতে পারে সব দল।
দীপাবলি সপ্তাহে বিদেশে আইপিএল আয়োজনের পরিকল্পনা তাই সম্পূর্ণ। শোনা যাচ্ছে, সরকারের সবুজ সঙ্কেতও এসে যাবে। শুধু কেউ জানে না, ভাইরাস বিদায় নিয়ে তত দিনে দীপাবলির আলোর রোশনাই ফিরবে কি না।