খোলামেলা: বিমানবন্দরে, উড়ানের মধ্যে, প্র্যাক্টিস থেকে বেরিয়ে। মুখাবরণ পর্যন্ত ছিল না।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনির চেন্নাই সুপার কিংসের অন্দরমহলে কোভিড-১৯ বিস্ফোরণের পরে একাধিক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সব চেয়ে বেশি করে নজরে এখন দুবাই রওনা হওয়ার আগে ধোনিদের শিবির এবং উড়ানের মধ্যে, বিমানবন্দরের ভিতরে তাঁদের খোলামেলা পদচারণা।
এমন অনেক ছবিই পাওয়া গিয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে উড়ানের মধ্যে সিএসকে ক্রিকেটারেরা পাশাপাশি সিটে বসে আছেন। দূরত্ববিধি মানার ব্যাপার তো নেই-ই, এমনকি ন্যূনতম সতর্কতা হিসেবে সেই সময়ে তাঁরা ‘মাস্ক’ পর্যন্ত পরেননি। অথচ বোর্ডের এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর) বা কোভিড-১৯ নিয়ে নির্দেশিকায় পরিষ্কার উল্লেখ করা ছিল যে, উড়ানে দূরত্ব বিধি মেনে একটা সিট ছেড়ে সকলকে বসাতে হবে। মাঠে থাকার সময়টুকু বাদ দিয়ে বাকি সব সময়ে ‘মাস্ক’ পরাও ছিল বাধ্যতামূলক। টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই সিএসকে যে সেই সব নিয়মের ধার ধারেনি, তাদেরই টুইটার বা ওয়েবসাইটে দুবাই যাত্রার নানা ছবি থেকে তা পরিষ্কার।
দুবাইগামী চেন্নাই সুপার কিংসের উড়ানের মধ্যে এমন ছবিও রয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে, এক জন খেলোয়াড় আর এক জনকে কিছু একটা খাবার এগিয়ে দিচ্ছেন (পাশের ছবিতে)। দু’জনের কারও মুখে না আছে ‘মাস্ক’, না তাঁরা হাতে পরেছিলেন গ্লাভস। সেখানে অন্যান্য অনেক দল বিমানবন্দরে তাঁদের ক্রিকেটার বা সদস্যদের এনেছিল পুরো ‘পিপিই কিট’ পরিয়ে। রাজস্থান রয়্যালস বা মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অনেক ছবিতেই দেখা যাচ্ছে, সুরক্ষা নিয়ে কোনও রকম সমঝোতা না করে তাঁদের দুবাই পাঠানো হয়েছে। উড়ানের মধ্যে নিজস্বী তোলার জন্য একত্রিত হওয়া ছাড়া দূরত্ব বিধি মেনে বসেছেন তাঁরা। কলকাতা নাইট রাইডার্সের ক্ষেত্রেও বিমানবন্দরে বা উড়ানের মধ্যে ছবিতে দেখা গিয়েছে চূড়ান্ত সতর্কতা। প্রশ্ন উঠছে, এতটা উদাসীন মনোভাবের জন্যই কি বিপদ ডেকে আনল চেন্নাই সুপার কিংস? ছবি মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, দুবাই যাওয়ার জন্য বিমাবনবন্দরে যখন পৌঁছন সিএসকে সদস্যরা, সকলে ‘মাস্ক’ পরে ছিলেন। কিন্তু শুধু ওইটুকুই। সকলের হাতে ছিল না ‘গ্লাভস’ বা নিদেনপক্ষে ‘ফেস শিল্ড’। এর পর বিমানবন্দরের লাউঞ্জে বসে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে আড্ডা দেওয়ার সময়ে বা উড়ানের মধ্যে এমনকি ‘মাস্ক’হীন ছবিও রয়েছে। শ্রীনিবাসনের মতো প্রাক্তন সর্বময় কর্তা বকলমে যে দলের প্রধান, যাদের সেনাপতির নাম মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, তারা ভ্রমণের সময়ে এ ভাবে সতর্কতার প্রশ্নকে উপেক্ষা করল কেন? সদা সজাগ ক্যাপ্টেন কুলের দলকেই অতিমারির মধ্যে সব চেয়ে অন্যমনস্ক দেখিয়েছে। কারও কারও প্রশ্ন, সুরক্ষা বিধিকে এতটা হাল্কা ভাবে নেওয়ার জন্য ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড কি সিএসকে দলকে কড়া বার্তা পাঠাবে?
আরও পড়ুন: ব্যালকনিতে কফি হাতেই ঋদ্ধিদের সঙ্গে চলে আড্ডা
তেমনই সকলের নজরে এখন সিএসকে-র পাঁচ দিনের শিবির। চেন্নাই কোভিড-১৯ অতিমারিতে ভারতের সব চেয়ে আক্রান্ত শহরগুলির একটি। এম এ চিদম্বরম স্টেডিয়াম (পুরনো চিপক) যেখানে অবস্থিত, সেই ট্রিপলিকেন অঞ্চল অন্যতম ‘হট স্পট’। সেখানেই হয় শিবির। ২৬ অগস্ট ইউটিউবে তাদের চ্যানেলে সিএসকে সিইও কাশী বিশ্বনাথন বলেন, ধোনির ইচ্ছাতে তাঁরা এই শিবির আয়োজন করেছিলেন। ওই ভিডিয়োতে তিনি বলেছিলেন, ধোনিই তাঁকে অনুরোধ করেন, ‘‘স্যর, আমরা চার-পাঁচ মাস ক্রিকেট খেলিনি। চেন্নাইয়ে সুরক্ষা বলয় তৈরি করে প্র্যাক্টিস করলেই ভাল হবে।’’
শিবির থেকে সংক্রমণ ছড়িয়েছে, নিশ্চিত করে এখনই বলা যায় না। কিন্তু প্রতি পদে প্রবল ঝুঁকি নিয়ে যে সিএসকে চলছিল, তা পরিষ্কার। জুলাই মাসেই ট্রিপলিকেন কনটেনমেন্ট জ়োন ছিল। সেখানেই শিবির হবে কেন? যাত্রাপথে সতর্ক হব না কেন? বিপর্যস্ত সিএসকে ঘিরে
উত্তর কম, প্রশ্ন বেশি।