সংগৃহীত চিত্র।
বিখ্যাত সাহিত্যিক চার্লস ডিকেন্সের ‘টেল অব টু সিটিজ’-এর শুরুটা হচ্ছে এ রকম ভাবে: ‘‘সেটা ছিল সেরা সময়, সেটা ছিল খারাপ সময়, সেটা ছিল জ্ঞানীদের যুগ, সেটা ছিল মূর্খদের যুগ...সেটা ছিল আলোর মরসুম, সেটা ছিল অন্ধকারের মরসুম।’’২০২০ সালের আইপিএল নিয়েও এই কথাগুলো লিখতে পারতেন তিনি। বিশ্বজুড়ে দুঃসময়ের মধ্যে এই প্রতিযোগিতা চলছে। অতিমারি, আর্থিক মন্দা, বিপর্যয়ের ছাপ এখন প্রতিটা মহাদেশের প্রতিটা দেশে। এই অন্ধকার সময়ে আইপিএল হয়তো কিছুটা আলোর রেখা নিয়ে এসেছে। কিছুটা উত্তেজনা, কিছুটা খুশি এনে দিতে পেরেছে। দুঃখের মধ্যেও হাসি ফোটাতে পারছে। এই রকম এক সময়ে এ বারের আইপিএল হয়তো প্রতিযোগিতার ইতিহাসে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করতে চলেছে।
আমাকে ভুল বুঝবেন না। আমি কখনওই বলছি না শুধু ক্রিকেট এই দুঃসময় ভুলিয়ে দিতে পারবে, পরিস্থিতি ভাল করতে পারবে। কিন্তু খারাপ খবরের মাঝেও ক্রিকেট কিছু ভাল খবর নিয়ে আসতে পারে। যে কারণে এই খেলাটারও একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকছে এই পরিস্থিতিতে।সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে ক্রিকেটার, কোচ, সাপোর্ট স্টাফ সবাই নিজেদের জৈব সুরক্ষা বলয়ে থাকছে। নিজেদের দলের বাইরে খুব কম লোকেরই সঙ্গে আমরা কথা বলার সুযোগ পাচ্ছি। একসঙ্গে চারটে দল একটা মাঠে অনুশীলন করলেও এক দলের ক্রিকেটারদের অন্য দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে মেলামেশা করার সুযোগ নেই। যা কিছু মেলামেশা তা নিজের, নিজের দলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে হয়। তাই আমরা এখন দলের একে অপরকে খুব ভাল করে চিনছি। নিজেদের জীবন, নিজেদের পরিবার নিয়ে কথা বলছি।
অবশ্যই আমরা দর্শকদের অভাবটা টের পাচ্ছি। ভারতের মাটিতে আইপিএলের উত্তেজনার অভাবটা বুঝতে পারছি। চিন্নাস্বামীর সেই গর্জনটা এখনও কানে বাজছে। কিন্তু বৃহত্তর দিক দিয়ে দেখলে বলব, আমরা নিরাপদে আছি। দারুণ ভাবে এই প্রতিযোগিতা পরিচালিত হচ্ছে আর সে জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।যখন মাঠে নামি, তখন আমাদের মাথায় থাকে সে সব লক্ষ, লক্ষ মানুষের কথা যাঁরা ভারতে বা বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তে নিজেদের বাড়িতে বসে টিভিতে ম্যাচ দেখছেন। এঁদের মধ্যে অনেককেই হয়তো তীব্র আর্থিক বা স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে। আর ক্রিকেটার হিসেবে এই অন্ধকারের মধ্যে কিছুটা আলোর রেখা, কিছুটা উত্তেজনা, কিছুটা আনন্দ এনে দিতে পেরে আমরা গর্বিত। আমাদের সবার জীবন এক অদ্ভুত সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। আর যে কারণে এই আইপিএলটা একটা বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে গিয়েছে। (টিসিএম)