যে কোনও পরিস্থিতিতে তাঁকে শান্ত দেখতেই অভ্যস্ত দলের সদস্য থেকে সমর্থকরা। এ হেন কলকাতার কোচ ব্রেন্ডন ম্যাকালমকে পর্যন্ত শেষ ওভারে দেখা গেল চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়েছেন। উত্তেজনায় নখ কাটতেও দেখা গেল তাঁকে। রবিবার সন্ধ্যার ম্যাচে রাজস্থান রয়্যালসকে একেবারে উড়িয়ে দিয়ে চলতি আইপিএলে প্লে অফের সম্ভাবনা জিইয়ে রেখেছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। নেট রান রেট বাড়াতে প্রয়োজন ছিল যত বেশি সম্ভব রানে জেতা। আর তাই উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন ম্যাকালামও।
গতকাল একেবারে চমকে দেওয়া পারফরম্যন্সে স্টোকস-স্মিথ সম্বলিত শক্তিশালী ব্যাটিং অর্ডারকে উপড়ে ফেলেছেন প্যাট কামিন্স-শিভম মাভিরা। রাজস্থান ইনিংসের পাওয়ার প্লে-তেই মোটামুটি ম্যাচের ফয়সালা হয়ে যায়। এই জয়ের পিছনে প্রধান ভূমিকা কার?
এ দিন অবশ্য ব্যাটিংয়ে শুরুটা ভাল হয়নি নাইটদের। দিনের দ্বিতীয় বলেই আউট হয়ে ফিরে যান নীতীশ রানা। সেখান থেকে দলকে টানেন শুভমান গিল ও রাহুল ত্রিপাঠি। দু’জনে দ্বিতীয় উইকেটে ৮ ওভারে ৭২ রান যোগ করেন। ২৪ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন গিল।
কিন্তু রাহুল তেওয়াটিয়ার একই ওভারে শুভমান গিল ও সুনীল নারাইন আউট হওয়ায় কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যায় নাইট রাইডার্স।
রাহুল ত্রিপাঠীও এর পর বেশি ক্ষণ টেকেননি। তিনি এবং দীনেশ কার্তিক ৪ বলের ব্যবধানে আউট হন। রাহুল ৩৯ করলেও খাতায় খুলতে পারেননি দীনেশ।
এর পরেই অইন মর্গ্যান ও আন্দ্রে রাসেলের ব্যাটে ম্যাচে ফেরে নাইটরা। রাসেল ১১ বলে ২৫ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেন। আধা ফিট রাসেলের ক্যামিওতে অক্সিজেন পায় কলকাতা।
রাসেল আউট হতেই শুরু হয় মর্গ্যান ঝড়। আক্ষরিক অর্থেই অধিনায়কোচিত ইনিংস খেলেন ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক। তাঁর ৩৫ বলে ৬৮-র ইনিংসে ছিল ৫টি চার ৬টি ওভার বাউন্ডারি।
২০ ওভারে জয়ের জন্য রাজস্থানের সামনে ১৯২ রানের লক্ষ্য রাখেন নাইটরা। কিন্তু শুধু জিতলেই হত না নাইটদের। নেট রানরেট বাড়াতে জিততে হত বড় ব্যবধানে। ফলে মরগ্যান বাহিনী খেলতে নেমেছিল কার্যত ১৩০ বা ১৪০ রানের পুঁজি নিয়ে।
ব্যাটিংয়ের মতো বোলিংয়েও শুরুটা খুব খারাপ হয় নাইটদের। রবিন উথাপ্পা আউট হলেও কামিন্সের প্রথম ওভারে ওঠে ১৯ রান।
কিন্তু ‘ম্যাজিক’টা শুরু হয় এর পরে। ক্রমশ ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা বেন স্টোকসকে তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই ফিরিয়ে দেন কামিন্স। কিন্তু এই উইকেট যতটা না কামিন্সের, তার থেকেও অনেকটাই বেশি দীনেশ কার্তিকের। বাঁ-দিকে পাখির মতো উড়ে গিয়ে অবিশ্বাস্য একটি ক্যাচ নেন কলকাতার প্রাক্তন অধিনায়ক।
ওই একটি ক্যাচই উদ্বুদ্ধ করে গোটা দলকে। ওই ওভারেই কামিন্স ফিরিয়ে দেন তাঁর জাতীয় দলের অধিনায়ক স্টিভ স্মিথকে।
ঠিক তার পরের ওভারেই ফর্মে থাকা সঞ্জু স্যামসনকে ফিরিয়ে দেন শিবম মাভি। পরে ওভারে কামিন্সের বলে আউট হল রিয়ান পরাগ। পাওয়ার প্লে-র মধ্যেই ৫ উইকেট হারায় রাজস্থান রয়্যালস।
এই অবস্থা থেকে কলকাতার জয় নিয়ে খুব একটা সন্দেহ না থাকলেও তখন বড়টা হয়ে দাঁড়ায় কত রানে জয়। জস বাটলার, রাহুল তেওয়াটিয়ারা কিছু রান করে নাইটদের জয়কে কিছুটা দীর্ঘায়িত করেন।
রাজস্থানের ইনিংস শেষ হয় ১৩১ রানে। ৬০ রানে জয় পেয়ে পয়েন্ট টেবিলের ৮ নম্বর থেকে এক লাফে ৪ নম্বরে পৌঁছে যায় কলকাতা। নাইটদের হয়ে ম্যাচের সেরা কামিন্স ৪ উইকেট নেন। শিবম মাভি ও বরুণ চক্রবর্তীও ২টি করে উইকেট পান। শেষ ওভারে ১ রান দেওয়া কমলেশ নাগরকোটিও পান ১টি উইকেট।
এই জয়ের ফলে কলকাতা শেষ করল ১৪ পয়েন্টে। আজ ব্যাঙ্গালোর ও দিল্লির ম্যাচে যে কোনও দল বড় ব্যবধানে হারলে প্লে-অফের রাস্তা খুলে যেতে পারে নাইটদের সামনে। অন্যদিকে মঙ্গলবারের ম্যাচে সানরাইজার্স হারলেও সরাসরি প্লে অফে চলে যাবে কলকাতা নাইট রাইডার্স।