ডেভিড শেফার্ড থেকে ডিকি বার্ড বা হালের বিলি বাউডেন। ক্রিকেটারদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বিভিন্ন কারণে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন আম্পায়াররাও। সেই ধারা এ বার আইপিএল-এও। সেই ট্রেন্ডে গা ভাসিয়ে সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার কেন্দ্রে পশ্চিম পাঠক।
সানরাইজার্স হায়দরাবাদ এবং কলকাতা নাইট রাইডার্সের ম্যাচে তাঁকে দেখে তো সোশ্যাল মিডিয়া উচ্ছ্বসিত। কাঁধ ছাপানো কোঁকড়া চুল দেখে অনেকে ধরেই নিয়েছিলেন তিনি মহিলা।
মহিলা আম্পায়ারকে ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ায় নেটাগরিকদের একাংশ তো সোশ্যাল মিডিয়ায় আইসিসি-কে ধন্যবাদ জানাতেও শুরু করে দিল। কিন্তু পরে জানা গেল, লম্বা চুলের আম্পায়ার মহিলা নন। তিনি পুরুষ। নাম, পশ্চিম পাঠক।
৪৩ বছর বয়সি পশ্চিম মুম্বইবাসী। আম্পায়ারিং করছেন বহু বছর ধরে। অভিজ্ঞ এই আম্পায়ারকে ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটের মাঠে দেখা গিয়েছে ২০০৯ সাল থেকে। ভারতের দু’টি টেস্ট এবং তিনটি ওয়ান ডে-এর জন্য তিনি ছিলেন রিজার্ভ আম্পায়ার।
২০১২ সালে মহিলাদের আন্তর্জাতিক ওয়ান ডে ম্যাচেও আম্পায়ারিংয়ের দায়িত্বে ছিলেন। ২০১৫ সালে তিনি নজর কাড়েন অন্য দিকে। সে বার আর হেয়ারস্টাইল নয়। আইসিসি-র ওয়ার্ল্ড টি-২০-র প্রস্তুতি ম্যাচে হেলমেটে মাথা ঢেকে মাঠে নেমেছিলেন তিনি।
সেই সিদ্ধান্তের পিছনে যে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার ফিল হিউজের মর্মান্তিক স্মৃতি রয়েছে, তা-ও জানিয়েছিলেন পশ্চিম। ২০১৪ সালে শেফিল্ড শিল্ডে সিডনিতে সাউথ অস্ট্রেলিয়া বনাম নিউ সাউথ ওয়েলসের ম্যাচে শন অ্যাবটের বাউন্সারে মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন হিউজ।
ঘটনার দু’দিন পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় তরুণ হিউজের। অনেকের মতো সেই অভিশপ্ত দিনের কথা ভুলতে পারেননি পশ্চিম। তাঁর কথায়, ‘‘ফিল হিউজ এবং ইজরায়েলের এক আম্পায়ারের মৃত্যুর ঘটনার পরই প্রোটেক্টিভ গিয়ার পরে মাঠে নামার কথা চিন্তা করছিলাম। তবে নিশ্চিত ছিলাম না হেলমেট পরে আম্পায়ারিং করলে কী রকম লাগবে!’’
আইপিএল-এ অবশ্য হেলমেট পরেননি তিনি। এখানে তাঁর স্টাইল স্টেটমেন্ট কোঁকড়া চুলের উপর ক্যাপ এবং রোদচশমা। সঙ্গী আম্পায়ার সুন্দরম রবিকে নিয়ে মাঠে নামতেই ক্যামেরা ঘুরে গিয়েছে পশ্চিমের দিকে।
‘স্টাইলভাই’ থেকে ‘রকস্টার’। পশ্চিমের নামের পাশে এখন নেটাগরিকদের দেওয়া রকমারি বিশেষণ। তাঁকে দেখে অনেকেই ভেবেছেন এটা হয়তো তাঁর প্রথম আইপিএল অভিযান।
কিন্তু সেটা ঠিক নয়। এর আগে ২০১৪ ও ২০১৫-র মরসুমেও তিনি ছিলেন আইপিএল-এ। কিন্তু সে সময় তাঁর লম্বা চুল ছিল না।
তবে খেলার মাঠে পুরুষদের লম্বা চুল সব সময় স্বাগত হয় না। আশির দশকে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল হকি খেলোয়াড় আর পি সিংহের। তাঁর লম্বা চুল মেনে নেননি তৎকালীন জাতীয় দলের কোচ এম পি গণেশ।
কিন্তু কোচের কথায় চুল কাটেননি আর পি সিংহ। ২০ বছর পরে এখনও তাঁর চুল একইরকম লম্বা। তিনি এখন উত্তরপ্রদেশে স্পোর্টস ডিরেক্টরেটের একজন অধিকর্তা। কর্মরত লখনউয়ে।
তবে পশ্চিমকে এই ধরনের তিক্ততার মুখোমুখি হতে হয়নি। কেউ কেউ ধরে নিয়েছেন ধোনিকে দেখেই তাঁর এই রকস্টার হেয়ারস্টাইল। আবার অনেকেই তুলনা করছেন পাকিস্তানি গায়ক তাহের শাহের সঙ্গে।
পশ্চিমের কণ্ঠস্বর ভরাট নয়। অনেকেই তাঁর কণ্ঠস্বরের সঙ্গে সচিন তেন্ডুলকরের বাচনভঙ্গির সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন।
বোলারের বোলিং অ্যাকশন ঝুঁকে পড়ে খুব মন দিয়ে দেখেন পশ্চিম। তাঁর আম্পায়ারিংয়ের ধরনকে অবশ্য পুরনো ঘরানার বলে মনে করা হচ্ছে। ক্রিকেটপ্রেমীদের মতে, আধুনিক হেয়ারস্টাইল নিয়ে পুরনো ঘরানায় আম্পায়ারিং করেন পশ্চিম পাঠক।
কিন্তু লম্বা চুলের কারণ কী? নিছকই কেতা নাকি এর পিছনে অন্য কারণও আছে? সে বিষয়ে এখনও কিছু বলেননি ক্রিকেট মাঠের নতুন সেনসেশন।