গেল-রাহুল জুটি জয়ের পথে নিয়ে গেল পঞ্জাবকে। ছবি: আইপিএল।
নাটকীয় ভাবে শেষ বলে জিতল কিংস ইলেভেন পঞ্জাব। বৃহস্পতিবার শারজায় যুজবেন্দ্র চহালকে ছয় মেরে জয় ছিনিয়ে আনলেন নিকোলাস পুরান। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরকে ৮ উইকেটে হারাল তারা। ১৭২ রানের জয়ের লক্ষ্য তাড়া করে দুই উইকেটে ১৭৭ তুলল পঞ্জাব। এ বারের আইপিএলে এটা লোকেশ রাহুলের দলের দ্বিতীয় জয়।
এই জয়ে বড় অবদান থাকল ক্রিস গেলের। এ দিনই প্রথম আইপিএলে ব্যাট করতে নেমে হাফ-সেঞ্চুরি করলেন তিনি। ৪৫ বলে ৫৩ করে হলেন রান আউট। অধিনায়ক রাহুল ৪৯ বলে অপরাজিত থাকলেন ৬১ রানে। তবে যত সহজে জেতার কথা ছিল, তত সহজে জয় এল না। শেষ ওভারে পঞ্জাবের দরকার ছিল ২ রান। কিন্তু, চহালের প্রথম চার বলে এসেছিল মাত্র ১ রান। পঞ্চম বলে রান আউট হন গেল। প্রচণ্ড উত্তেজনা তখন গ্রাস করেছিল দুই দলকেই। শেষ বলে রান না এলে ম্যাচ গড়াত সুপার ওভারে। কিন্তু, পুরান এগিয়ে এসে ফুলটস করে নেন চহালের ডেলিভারি। তাঁর শট লং অনে থাকা ক্রিস মরিসের বাড়ানো হাতের নাগাল পেরিয়ে ছয় হয়। জিতে যায় পঞ্জাব।
লোকেশ রাহুল ও ময়ঙ্ক আগরওয়াল দাপটের সঙ্গেই রান তাড়া শুরু করেছিলেন। প্রথম ছয় ওভারে বিনা উইকেটে উঠেছিল ৫৬ রান। ইনিংসের ৫০ রান এসেছিল ৩৫ বলে।
পঞ্জাবের প্রথম উইকেট পড়েছিল ৭৮ রানে। ২৫ বলে ৪৫ করে যুজবেন্দ্র চহালের বলে বোল্ড হয়েছিলেন ময়ঙ্ক। তাঁর ইনিংসে ছিল চারটি চার ও তিনটি ছয়। ময়ঙ্ক ফেরার পর তিন নম্বরে নেমেছিলেন ক্রিস গেল।
বন্ধু ময়ঙ্ক ফেরার পর গিয়ার পাল্টালেন রাহুল। ১২তম ওভারে মহম্মদ সিরাজকে পর পর দু’বার পাঠালেন সীমানার বাইরে। তার মধ্যে একবার তো বল উড়ে গেল স্টেডিয়ামের বাইরে। রাহুলের হাফ সেঞ্চুরি এল ৩৭ বলে, চারটি ছয় ও একটি চারের সুবাদে। অন্য প্রান্তে ধীরে ধীরে শুরু করে মারমুখী হয়ে উঠলেন গেলও। ১৩তম ওভারে ওয়াশিংটন সুন্দরকে ছয় মারলেন দু’বার। এলবিডব্লিউ হয়েও ডিসিশন রিভিউ সিস্টেমের সাহায্যে বেঁচে গেলেন ২০ রানে। ক্রিস মরিসের বলে এলবিডব্লিউ হয়েছিলেন। কিন্তু, রিভিউ দেখাল বল স্পর্শ করেছিল ব্যাট।
গেলের পঞ্চাশ এল ৩৬ বলে, একটা চার ও পাঁচটা ছয়ের সাহায্যে। আইপিএলে প্রথম বার নেমেই বাজিমাত করলেন ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি। দ্বিতীয় উইকেটে রাহুল ও গেল যোগ করলেন ৯৩ রান। সেই জুটিই জয়ের রাস্তা গড়ে দিয়েছিল। তবে শেষ বলের আগেই ম্যাচ জিতিয়ে ফেরা উচিত ছিল রাহুল-গেলের।
শারজায় প্রথম ইনিংসের গড় স্কোর হল ২০৯। পাওয়ারপ্লে-র ছয় ওভারে এক উইকেটে ৫৭ রান ওঠার পর মনে হচ্ছিল সেই ধারা মেনেই বড় রানের দিকে এগোচ্ছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর। কিন্তু তা হল না। দুশোর অনেক আগেই থেমে গেল তারা। শেষ পর্যন্ত ছয় উইকেটে ১৭১ তুলল তারা। অবশ্য শেষ ওভারে ২৪ রান এসেছিল বলেই কিংস ইলেভেন পঞ্জাবকে ১৭২ রানের জয়ের টার্গেট দিতে পেরেছিল আরসিবি।
১০ ওভার শেষে ব্যাঙ্গালোরের স্কোর দাঁড়িয়েছিল দুই উইকেটে ৮৩। কিন্তু, তার পর ক্রমাগত উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে গিয়েছিল ইনিংস। ১৩৬ রানে ছয় উইকেট ফেলে দিয়ে দারুণ ভাবে ম্যাচে ফিরেছিল পঞ্জাব। কিন্তু ক্রিস মরিস (৮ বলে অপরাজিত ২৫) ও ইসুরু উদানা (৫ বলে অপরাজিত ১০) অবিচ্ছিন্ন সপ্তম উইকেটে ১৩ বলে ৩৫ রান যোগ করে ভদ্রস্থ করলেন স্কোরকে। শেষ ওভারে শামির বলে উঠল ২৪ রান।
টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছিলেন আরসিবি অধিনায়ক বিরাট কোহালি। পঞ্চম ওভারে অর্শদীপ সিংহের বলে ফিরেছিলেন দেবদত্ত পাড়িকল (১২ বলে ১৮)। ৩৮ রানে পড়েছিল প্রথম উইকেট। দ্বিতীয় উইকেট পড়েছিল ৬২ রানে। অ্য়ারন ফিঞ্চ (১৮ বলে ২০) বোল্ড হয়েছিলেন মুরুগান অশ্বিনের দুরন্ত ডেলিভারিতে। তৃতীয় উইকেটের পতন হয়েছিল ৮৬ রানে। চারে নামা ওয়াশিংটন সুন্দর (১৪ বলে ১৩) মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলেছিলেন সেই মুরুগানের বলেই।
অন্য প্রান্তে বিরাট অবশ্য ছিলেন ছন্দে। আরসিবি-র হয়ে ২০০তম ম্যাচে ক্রিজে এসেই মেরেছিলেন কভার ড্রাইভ। ফর্মে আছেন, বোঝা যাচ্ছিল প্রত্যেক শটে। কিন্তু, অন্য দিকে ক্রমাগত পড়তে থাকল উইকেট। শিবম দুবে (১৯ বলে ২৩), এবি ডিভিলিয়ার্স (৫ বলে ২) ফিরেছিলেন পর পর। তার পরই হাফ-সেঞ্চুরির দোরগোড়া থেকে ফিরতে হয়েছিল বিরাটকে। ৩৯ বলে ৪৮ করেছিলেন তিনি। ১৩৬ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারিয়েছিল আরসিবি। একই ওভারে এবি ও বিরাটকে ফিরিয়ে ব্যাঙ্গালোরকে জোড়া ধাক্কা দিয়েছিলেন মহম্মদ শামি।
এদিন, ডিভিলিয়ার্সকে ছয়ে নামানোর সিদ্ধান্ত কাজে এল না একেবারেই। বরং তা জন্ম দিল প্রশ্নের। ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যান কেন এত পরে, সমর্থকদের তোপের মুখে পড়ল আরসিবি ম্যানেজমেন্ট।
টস জিতলে ব্যাটিংই নিতেন, জানিয়ে দিয়েছিলেন পঞ্জাব অধিনায়ক লোকেশ রাহুলও। এবং প্রত্যাশামাফিকই ক্রিস গেলের খেলার খবর শোনালেন তিনি। আর খেলা শুরুর আগে গেল জানিয়ে দিলেন, কোনও চাপে নেই তিনি। ফিল্ডিংয়েও গেলকে চনমনে দেখাল। তবে ওপেনিংয়ে দেখা গেল না তাঁকে।
আরও পড়ুন: আইপিএল থেকে বিরাট, ডিভিলিয়ার্সের নির্বাসন চান লোকেশ!
আরও পড়ুন: ‘বস মাঠে ফিরছে’, উত্তেজিত পঞ্জাব শিবির
পঞ্জাব দলে এদিন মোট পরিবর্তনের সংখ্যা ছিল তিন। গেল ছাড়াও দলে এসেছিলেন মুরুগান অশ্বিন ও দীপক হুদা। বাদ পড়েছিলেন প্রভসিমরন সিংহ ও মুরুগান অশ্বিন। চোটের জন্য খেলতে পারেননি মনদীপ সিংহ। যদিও এই ম্যাচে একই দল খেলিয়েছিল ব্যাঙ্গালোর।
আইপিএলে দুর্দান্ত শুরু করেছিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর। সাত ম্যাচের মধ্যে জিতেছিল পাঁচটিতে। আট ম্যাচে তৃতীয় পরাজয়ের পরও ১০ পয়েন্টে তিন নম্বরে থাকল তারা। অন্য দিকে, সাত ম্যাচে মাত্র এক জয়ে পয়েন্ট তালিকার তলানিতে পড়ে ছিল কিংস ইলেভেন পঞ্জাব। শারজায় এই ম্যাচ তাই লোকেশ রাহুলের দলের সামনে ছিল ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ। জয়ের পরেও সবার শেষে থাকল তারা। শুধু আট ম্যাচে পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়াল চারে।
ব্যাঙ্গালোর ও পঞ্জাব, দুই দলেরই বড় ভরসা ছিলেন দুই অধিনায়ক। বিরাট এই ম্যাচের আগে পর্যন্ত করে ফেলেছিলেন ২৫৬ রান। এদিনের পর তাঁর রান দাঁড়াল ৩০৪। মোট রানে চার নম্বরে উঠে এলেন তিনি। রান না পাওয়ায় এবি ডিভিলিয়ার্স থেমে থাকলেন ২৩০ রানে। অন্য দিকে, ৪৪৮ রান করে ফেললেন রাহুল। তিনিই অরেঞ্জ ক্যাপের মালিক। মোট রানের তালিকায় দুইয়ে আছেন তাঁরই সতীর্থ ওপেনার ময়াঙ্ক আগরওয়াল (৩৮২ রান)।