কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের জার্সিতে ২০১৮ সালে শেষবার আইপিএলে দেখা গিয়েছে মনোজকে। ছবি ফেসবুক থেকে নেওয়া।
একটু অভিমানী। একটু বিষণ্ণ। বাস্তবকে মেনে নেওয়ার, মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় অক্লান্ত।
চুম্বকে, আইপিএল এ ভাবেই হাজির হচ্ছে মনোজ তিওয়ারির মননে!
থাকছে প্রবল অভিমান। আইপিএলে যখন যে দলের হয়েই খেলুন না কেন, নিজের কথা ভাবেননি। দলের স্বার্থই প্রাধান্য দিয়েছেন। কিন্তু ফ্র্যাঞ্চাইজি দুনিয়ায় তার মূল্য পাননি। আইপিএলের নিলামে এখন উপেক্ষিত থাকাই হয়ে উঠেছে নিয়ম। যা হজম করা কঠিনই শুধু নয়, রীতিমতো মুশকিল। কিন্তু না করে তো উপায়ও নেই!
যত যন্ত্রণারই হোক, বাস্তবকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা তাই করতেই হয়। ডিসেম্বরের নিলামের পর মনোজ একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছিলেন টুইটারে। যাতে দেখা গিয়েছিল সমুদ্রের ধারে তিনি অবসর কাটাচ্ছেন। ক্যাপশনে লিখেছিলেন, “জীবন শুধু বেঁচে থাকার জন্য নয়। জীবনকে উদযাপন করতে হয়। আইপিএলের নিলাম থেকে বাদ পড়াকে এ ভাবেই উদযাপন করছি।” বোঝা গিয়েছিল, আইপিএলে সুযোগ না-পাওয়াকে এ ভাবেই সাগরের জলে আছড়ে ফেলতে চাইছেন যেন!
আরও পড়ুন: ‘শাহরুখ নিয়ে আমার ভাল স্মৃতি নেই’, প্রথম আইপিএলের বিস্ফোরক স্মৃতিচারণে প্রাক্তন সিএবি প্রেসিডেন্ট
সেই কষ্ট-যন্ত্রণা এখনও মনের মধ্যে রয়ে গিয়েছে। আনন্দবাজার ডিজিটালকে বললেন, “ওই ছবিটা ইচ্ছাকৃতই দিয়েছিলাম। নিলামে না নিলেও যে আমার কিছু এসে-যায় না, সেটাই বলতে চেয়েছিলাম। আসলে কষ্ট তো হয়ই। দলের জন্য খেলেও তার দাম না পেলে কষ্ট হয় খুব। যখন বাড়িতে বসে আইপিএলের খেলাগুলো দেখতে হবে, তখন কাউকে ছোট না করেই মনে প্রশ্ন উঠবে। মনে হবে, আমি কেন খেলছি না? ভাববই যে, এর চেয়ে ভাল তো আমি করতে পারতাম। চাপের মুখে, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে অনেকের চেয়েই বেটার খেলতে পারি। এটা মাথায় যখনই আসে, তখনই সঙ্গী হয় হতাশা।”
আইপিএলে মনে রাখার মতো বেশ কিছু ইনিংস, অজস্র মুহূর্ত রয়েছে মনোজের। তার মধ্যে সেরা অবশ্যই ফাইনালে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে শেষ ওভারে ম্যাচ জেতানো। সেটাও ছিল প্রবল চাপের মুখে জয়ের পতাকা ওড়ানো। মনোজের বিশ্বাস, আগের মতো এখনও প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে নিজেকে মেলে ধরার ক্ষমতা তাঁর যথেষ্টই রয়েছে। আর এখানেই জন্ম নিচ্ছে যন্ত্রণা!
২০০৮ সালের আইপিএলে দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের হয়ে খেলেছিলেন মনোজ। পরবর্তীকালে খেলেছেন কেকেআরের হয়েও। আবার কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের জার্সিতেও কয়েক মরসুমে দেখা গিয়েছে তাঁকে। এখন অবশ্য কোনও জার্সিই আলাদা করে টানে না মনোজকে। না, কলকাতার প্রতিও নেই আলাদা আবেগ। বললেন, “এখন আর কোনও আবেগ টের পাই না। আর ওরা তো কয়েক বছর ধরেই বাংলার কোনও ক্রিকেটারকে নেয় না। তো এখন আশাও করি না যে স্থানীয় কোনও ক্রিকেটারকে ওরা রাখবে। সেই আশাটা নেই। তাই ভাবিও না।”
আরও পড়ুন: ‘আইপিএলে সব বোলারকে মার খেতে দেখেছি, আমিও মার খেতেই পারি’
আইপিএলের ঢাকে কাঠি পড়ার সময়টা মনোজের কাছে আর এক কষ্টের। যখন খেলতেন, তখন এই সময় ডুবে থাকতেন অনুশীলনে। একটা ঘোরের মধ্যে কেটে যেত দেড়-দুই মাস। তাই এখন আইপিএলের রণদামামা বাজতে শুরু করলে অশান্ত হয়ে ওঠে মন। বললেন, “এমনিতে আইপিএল নিয়ে কিছু টের পাই না। কিন্তু যখন থেকে আইপিএলের আলোচনা শুরু হয়, তখন সমস্যা হয়। এমনিতে আমার কাছে এসব নিয়ে ভাবার মতো অত সময় নেই।”
কিন্তু অভাবিত সুযোগ তো আসতেও পারে। কারও চোট খুলে দিতে পারে সম্ভাবনার দরজা। মনোজ যদিও সেই ভাবনায় আগ্রহী নন একেবারেই। বললেন, “কোনও ক্রিকেটার চোট পাক, এটা একেবারেই চাই না। নিজেও চোট-আঘাতের মধ্যে দিয়ে গিয়েছি। জানি এটা কতটা কষ্টের। তাই কেউ চোট পেয়ে আমার আসার জায়গা তৈরি হল, এটা চাই না। অবশ্য আমি ভাগ্যে বিশ্বাস করি। ভাগ্যে যা থাকবে, তাই হবে। তাই কখনও হাল ছাড়ি না। আশা রাখি সবসময়। না হলে বাঁচা যায় না। প্রস্তুত রাখি নিজেকেও।”
অর্থাৎ, যতই হতাশা-যন্ত্রণা থাক, মনোজের আইপিএল আকাশে থাকছে আশাও। দল থাক আর নাই থাক, নিলামে কেউ নিক বা না-নিক, নিজেকে যে কোনও পরিস্থিতির জন্য রাখেন প্রস্তুত। একান্তে নিজেকেই বলেন, চাপের মুখে দলকে জেতানোর ক্ষমতা রয়েছে এখনও।
হতাশার মধ্যে এই বিশ্বাসই বুনে দেয় আশা। মানেন, ভাগ্যে থাকলে আইপিএলে ঠিক ফের নামবেন ব্যাট হাতে!