লক্ষ্মীরতন শুক্ল, মনোজ তিওয়ারি ও দেবব্রত দাস ফিরে গেলেন আমিরশাহিতে আইপিএল খেলার দিনগুলোয়।
ডেল স্টেনকে মারা ল্যাপ শট। পাগল করে দেওয়ার মতো গরম। তুলনায় ছোট মাঠ, কম দর্শক।
টুকরো টুকরো স্মৃতি। যা জোড়া লাগালে এক ঝলক ফুটে উঠছে পূর্ণাঙ্গ ছবি। ছয় বছর আগে মরুভূমির দেশে হওয়া আইপিএল এ ভাবেই উঠে আসছে বঙ্গবিগ্রেডের কথায়।
নাম ইন্ডিয়াম প্রিমিয়ার লিগ তো কী, এ বারের আইপিএলও করোনার দাপটে চলে গিয়েছে ভারতেরই বাইরে। সে বার ছিল নির্বাচন। তাই সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে হয়েছিল আইপিএল। কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব মেলে ধরতে লড়াইয়ে নেমেছিল আট ফ্র্যাঞ্চাইজি। তবে তা ছিল শুধুই প্রথম পর্ব। দ্বিতীয় পর্বের আইপিএল হয়েছিল দেশেই। যাতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স।
এ বার অবশ্য পূর্ণাঙ্গ আইপিএলের আসরই বসতে চলেছে আমিরশাহিতে। সেপ্টেম্বরের ১৯ থেকে নভেম্বরের গোড়া পর্যন্ত কুড়ি ওভারের লড়াই ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠবেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। ফলে, ঘুরে-ফিরে ভেসে আসছে আগের আইপিএলের কথা।
আরও পড়ুন: ‘এ বারের আইপিএল দেখবেন সবচেয়ে বেশি মানুষ’
দেশের মাঠের সঙ্গে ওখানে খেলার মধ্যে পার্থক্য কী? ২০১৪ সালের সেই আইপিএলে দিল্লি ডেয়ারডেভিলস দলের সদস্য মনোজ তিওয়ারি আনন্দবাজার ডিজিটালকে বললেন, “পার্থক্য আসলে পরিবেশে। ওখানকার মাঠে দর্শক কম থাকে। অত ভিড় হয় না। একটু খালি খালি লাগে। এখানের মতো পাগল করা আবহ থাকে না। আবু ধাবির মাঠ আবার ওপেন। শারজার মাঠ তো আবার তুলনায় অনেকটা ছোট। এটা ঠিক যে, দেশে খেলার চেয়ে সে বার অনেকটাই আলাদা লেগেছিল। এটা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই।”
দুবাইকে আবার অনেকটা ভারতের মতোই লেগেছিল লক্ষ্মীরতন শুক্লর। অধুনা মন্ত্রী পুরনো দিনে ফিরে গিয়ে বললেন, “ওখানে অনেক ভারতীয়, অনেক বাঙালিও। খুব ভাল লেগেছিল। আমি কেকেআরের চারটি ম্যাচেই খেলেছিলাম। তবে ওখানের গরম ছিল মারাত্মক। একেবারে পুড়িয়ে দেওয়ার মতো গরম ছিল।”
সে বার কলকাতা নাইট রাইডার্স দলে ছিলেন দেবব্রত দাসও। ময়দানে ‘রাজা’ নামে পরিচিত মারকুটে ব্যাটসম্যানের কথায়, “আমি তো ২০১২ সালে চ্যাম্পিয়ন কেকেআরের হয়েও খেলেছি। দেশের মাঠের সঙ্গে পরিকাঠামোয় তফাত পাইনি। এখানেও যেমন থাকে, ওখানেও তেমন ছিল। আয়োজনে কোনও তফাত বুঝতে পারিনি। আর ওখানেও তো ক্রিকেট হয়। ফলে ব্যবস্থাপনার দিক দিয়ে একই লেগেছিল। তবে হ্যাঁ, দর্শকের সংখ্যা দিয়ে বিচার করলে অবশ্যই ফারাক ছিল। তখন আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিরা নিজেদের অনেক লোকজন নিয়ে গিয়ে মাঠ ভরিয়ে দিয়েছিল। অনেক বন্ধু-বান্ধবরাও গিয়েছিল। তবু নিজের দেশে খেলার উন্মাদনাই আলাদা। সেটা মিস করেছিলাম।”
২০১৪ সালের আইপিএল জয়ী কেকেআর। আছেন দেবব্রতও। ছবি: পিটিআই।
লক্ষ্মীর মতো দেবব্রত দাসেরও মনে আছে গরমের কথা। এপ্রিলের গরমে আমিরশাহিতে খেলার কথা ভুলতে পারেন না তিনি। বললেন, “এপ্রিল মাসে খেলেছিলাম আমরা। কড়া গরম ছিল। এপ্রিলে দেশে খেললেও কষ্ট অত হয় না। এখানেই জন্ম, বেড়ে ওঠা। অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি আমরা। কিন্তু ওখানে আর্দ্রতা একেবারে কম। ফলে গরমটা ছিল শুকনো। পুরো শুষে নেওয়ার মতো লাগত।” সেই গরম কী ভাবে সামলাতেন? লক্ষ্মী বললেন, “প্রচুর জল খেতাম। ডিহাইড্রেট করতাম। নিজের শরীরে জলের মাত্রা বাড়ানোর চেষ্টা করতাম। আরও অনেক নির্দেশ ছিল আমাদের উপর। ওই গরমে ম্যাচ খেলতে কষ্ট না হয়, সে দিকে লক্ষ্য রাখা হত সব সময়। সেটা আমাদের প্রস্তুতির অংশই হয়ে গিয়েছিল।” তবে সেই গরম এ বার থাকবে না বলে আশ্বস্ত করছেন মনোজ। তিনি বলেছেন, “সেপ্টেম্বরে আইপিএল শুরু। চলবে অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্ত। ফলে ভয় পাওয়ার মতো গরম থাকছে না। এটা কিছুটা স্বস্তির।”
মরুভূমির দেশের বাইশ গজ কেমন ছিল? লক্ষ্মী বললেন, “খুব ভাল উইকেট। যাকে বলা যায়, ফ্রেন্ডলি উইকেট। পেসাররা সাহায্য পেত, স্পিনাররাও বল ঘোরাত। একদম ভারতের মতো।” দেবব্রতর মত অবশ্য কিছুটা আলাদা। তাঁর কথায়, “দেশের উইকেট অবশ্যই বেটার। দেশে আইপিএলে কুড়ি ওভারে ১৭০-৮০-৯০ রান ওঠে। দুশো রানও হয়। কিন্তু ওখানে তত রান উঠছিল না।”
আরও পড়ুন: ‘আইপিএলে ভাল খেলতে না পারলে ধোনির আন্তর্জাতিক কেরিয়ার শেষ’
উইকেট নিয়ে মনোজের আবার একটা ব্যাখ্যা রয়েছে। তাঁর মতে, “যখনই কোনও মাঠে প্রচুর ম্যাচ হয়, তখন উইকেট চাঙ্গা বানাতেই হবে। প্রথম থেকেই এটা করতে হবে। না হলে একটা পিচের উপর খেলা হতে হতে সেটা খারাপ হয়ে পড়ে। তাড়াতাড়ি যেন খারাপ না হয় পিচ, তার জন্য উইকেট তৈরিতে খেয়াল রাখতে হয়। শুরুর দিকে উইকেট তাই শক্ত থাকে। যাতে বল যায়। বাউন্স থাকে। না হলে উইকেট তো ভেঙে যাবে। আমার তাই মনে হয় যে, প্রথমের দিকে এ বার বোলারদের জন্য একটু হেল্প থাকবে। তার পর ব্যাটসম্যানরা দাপট দেখাবে।”
আমিরশাহিতে ছয় বছর আগের সেই আইপিএলের একটা ইনিংস মনে আছে মনোজের। যা এসেছিল ডেকান চার্জার্সের বিরুদ্ধে। পুরনো দিনে ফিরে গিয়ে মনোজ বললেন, “ডেকানের বিরুদ্ধে ওটা ছিল ঝোড়ো একটা ইনিংস। কম বলে ১৫-১৬ করেছিলাম। তার মধ্যে ডেল স্টেনকে ল্যাপ শট মেরেছিলাম। অমিত মিশ্রকে ছক্কা মেরেছিলাম।” ২০০৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় হওয়া আইপিএলেও খেলেছিলেন মনোজ। চোট পেয়ে দেশে ফিরেও আসতে হয়েছিল মাঝপথে। বললেন, “দক্ষিণ আফ্রিকায় অতিরিক্ত উচ্চতায় খেলতে হয়। বল অনেক ফ্লাই করে। ফলে ব্যাটসম্যানের পক্ষে কাজটা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের থাকে। আমিরশাহিতে তা থাকে না। ওখানে ভারত, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, পাকিস্তানের মতোই উইকেট থাকে।”
লক্ষ্মী, দেবব্রতর কাছে অবশ্য আমিরশাহিতে আইপিএলের স্মৃতি মধুর। লক্ষ্মী মনে করিয়ে দিলেন, “সে বার কিন্তু আমরাই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। ফাইনালে হারিয়েছিলাম পঞ্জাবকে।” নাইট ভক্তরা তার পুনরাবৃত্তির স্বপ্ন দেখছেন এখন থেকেই। ক্রিকেট যতই অনিশ্চয়তার খেলা হোক, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি বলেও যে একটা শব্দ রয়েছে!