দুরন্ত ব্যাটিং সঞ্জু স্যামসনের।
প্রায় হাতের বাইরে চলে যাওয়া ম্যাচ জিতে নিল রাজস্থান রয়্যালস। রুদ্ধশ্বাস এই ম্যাচ যে স্টিভ স্মিথের দল জিতে নেবে, তা হয়তো অতি বড় রাজস্থান সমর্থকরাও ভাবেননি। প্রথমে স্টিভ স্মিথ (২৭ বলে ৫০), পরে সঞ্জু স্যামসন (৪২ বলে ৮৫), রাহুল তেওয়াটিয়া (৩১ বলে ৫৩) ও জোফ্রা আর্চারের (৩ বলে ১৩) ঝড়ে পঞ্জাবকে মাটি ধরাল রাজস্থান।
পঞ্জাবের পাহাড়প্রমাণ ২২৩ রান তাড়া করতে নেমে ১৫ ওভারে রাজস্থানের রান ছিল ২ উইকেটে ১৪০। জেতার জন্য আস্কিং রেট বাড়তে বাড়তে আকাশ ছোঁয়ার উপক্রম হয়েছিল। ৩০ বলে দরকার ৮৪ রান। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থা থেকে পাল্টা মারের খেলা শুরু করে রাজস্থান। স্টিভ স্মিথের দলের ব্যাটসম্যানদের মারকুটে ব্যাটিংয়ে কটরেল-শামিদের মতো আন্তর্জাতিক মানের বোলাররা করতে থাকেন একের পর এক ভুল। রান আটকানোর পরিবর্তে একগাদা রান দিয়ে রাজস্থানের জয়ের রাস্তা প্রশস্ত করে দেন তাঁরা।
চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে আগের ম্যাচে ৩২ বলে ৭৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন সঞ্জু। সচিন তেন্ডুলকর, সুনীল গাওস্করের মতো কিংবদন্তিরা উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন সেই ইনিংসের। গৌতম গম্ভীর তো বলেই দিয়েছিলেন, একমাত্র জাতীয় দল ছাড়া সর্বত্রই স্বাগত সঞ্জু! এ দিনও কথা বলল সঞ্জুর ব্যাট। রবিবাসরীয় ম্যাচের সেরাও তিনি।কিন্তু এই ম্যাচের গেম চেঞ্জার আসলে রাহুল তেওয়াটিয়া। এক সময়ে ১৯ বলে ৮ রানে ছিলেন তিনি। তাঁকে আগে ব্যাট করতে পাঠানোর সিদ্ধান্তের সমালোচনা শুরু হয়ে যায়। চাপ ক্রমশ বাড়ছিল তাঁর উপরে। এই অবস্থায় মরিয়া তেওয়াটিয়া ক্যারিবিয়ান পেসার শেলডন কটরেলের (১৮ তম) ওভারে পাঁচটা ছক্কা হাঁকিয়ে ৩০ রান নেন। তাঁর এই মহা বিস্ফোরণ ম্যাচের রং বদলে দেয়। জয়ের গন্ধ পেতে শুরু করে রাজস্থান শিবির।
শেষ ২ ওভারে রাজস্থানের দরকার ছিল ২১ রান। লোকেশ রাহুল বল তুলে দেন মহম্মদ শামির হাতে। দারুণ ইয়র্কার দিতে পারেন বঙ্গ পেসার। এ দিন মোক্ষম সময়ে ইয়র্কারের বদলে লেন্থ বল ফেলতে থাকেন শামি। আর সেই সুযোগ নিয়ে তাঁর ওভারে ১৯ রান নেয় রাজস্থান। সেই ওভারেই শামি রাজস্থানের দুই ব্যাটসম্যান রবিন উথাপ্পা ও তেওয়াটিয়াকে ফেরান।কিন্তু তত ক্ষণে ম্যাচ বেরিয়ে যায় পঞ্জাবের হাত থেকে। শেষ ওভারে মুরুগান অশ্বিনের বলে রিয়ান পরাগ আউট হলেও তিন বল বাকি থাকতে চার উইকেটে ম্যাচ জিততে সমস্যা হয়নি স্মিথের দলের।
আইপিএলের ইতিহাসে রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড গড়ল রাজস্থান। এর আগে এই রেকর্ড ছিল তাদেরই দখলে। ২০০৮ সালে ডেকান চার্জার্সের ২১৪ রান তাড়া করে ম্যাচ জিতে নিয়েছিল রাজস্থান। তখন অবশ্য রাজস্থানে শেন ওয়ার্ন জমানা। এ দিন নিজেদের রেকর্ড নিজেরাই ভাঙল।টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে ২২৩ রানও যে নিরাপদ নয়, তা দেখিয়ে দিল এদিনের ম্যাচ। কাজে এল না ময়ঙ্ক আগরওয়ালের দুরন্ত সেঞ্চুরিও।
আরও পড়ুন: পাখি হয়ে ছয় বাঁচালেন পুরান, ফিরিয়ে আনলেন জন্টির স্মৃতি
দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে ‘গ্লোরি শট’ মারতে গিয়ে দলকে ডুবিয়েছিলেন ময়ঙ্ক। ছয় মেরে ম্যাচ শেষ করার চেষ্টায় ফুলটস জমা দিয়েছিলেন ফিল্ডারের হাতে। মুহূর্তের ভুলে ম্যাচ জিতিয়ে ফিরতে পারেননি তিনি। ৬০ বলে ৮৯ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলে সেই ম্যাচে ট্র্যাজিক হিরো হতে হয়েছিল তাঁকে।
রবিবার শারজায় ময়ঙ্ক ধরা দিলেন অন্য অবতারে। মাত্র ৫০ বলে ১০৬ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেললেন। মারলেন ১০টি বাউন্ডারি ও ৭টি ওভার বাউন্ডারি। তাঁর অধিনায়ক লোকেশ রাহুলও ৫৪ বলে ৬৯ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেললেন। ওপেনিং পার্টনারশিপে ময়ঙ্ক ও রাহুল করলেন ১৮৩ রান। অল্পের জন্য ভাঙতে পারলেন না ডেভিড ওয়ার্নার ও জনি বেয়ারস্টোর রেকর্ড। হায়দরাবাদের দুই ওপেনার গত বারের আইপিএলে ১৮৫ রানের পার্টনারশিপ গড়েছিলেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের বিরুদ্ধে। এ দিন সেই রেকর্ডও প্রায় ভাঙতে বসেছিল। টম কারেনের বলে ময়ঙ্ক আউট হয়ে যাওয়ায় ওয়ার্নার-বেয়ারস্টোর রেকর্ড অক্ষত থেকে যায়।
এ দিন টসের আগে সবাই বলছিলেন, শারজার পিচে রান আছে। যে দল টস জিতবে, সেই দলই প্রথমে ব্যাট করবে। রাজস্থান অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ অন্য পথে হাঁটলেন। টস জিতে পঞ্জাবকে প্রথমে ব্যাট করতে পাঠান অজি তারকা।
শুরু থেকেই ময়ঙ্ক ও রাহুল এক্সপ্রেস গতিতে ছুটতে শুরু করলেন। একটা সময়ে দুই ওপেনারই প্রায় একই গতিতে রান তুলছিলেন। কিন্তু খেলা যত গড়াতে থাকে ময়ঙ্ক ছাপিয়ে যান রাহুলকে। পঞ্জাব অধিনায়কও তখন ময়ঙ্ককে স্ট্রাইক দিচ্ছিলেন। আর ময়ঙ্ক ঠাণ্ডা মাথায় রাজস্থান বোলারদের মাঠের বাইরে পাঠাচ্ছিলেন। কোন লেন্থে ময়ঙ্ককে বল করবেন তাই বুঝে উঠতে পারছিলেন না জয়দেব উনাদকাট, টম কারেন, জোফ্রা আর্চাররা। ২৬ বলে ময়ঙ্ক করেন ৫৪ রান। পরে আরও নির্দয় হয়ে ওঠেন তিনি। সেঞ্চুরি করেন ৪৫ বলে। প্রতিটি শটে ছিল ক্রিকেট। তাঁর ‘ক্লিন হিট’-এর জবাব ছিল না রাজস্থান বোলারদের কাছে।
আরও পড়ুন: মাঠে রাহুল-ময়ঙ্কের ব্যাটিং তাণ্ডব, সোশ্যাল মিডিয়ায় টুইট যুদ্ধে ওয়ার্ন-হর্ষ
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে রাহুল একাই গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন বিরাট কোহালিদের। আগের দিন যেখানে তিনি শেষ করেছিলেন, এ দিন সেখান থেকেই যেন শুরু করেন রাহুল। পঞ্জাব অধিনায়ক ৩৫ বলে ৫০ করেন। অঙ্কিত রাজপুতের বলে ৬৯ রানে ফেরার আগে সাতটি বাউন্ডারি ও একটি ছক্কা হাঁকান তিনি। এ বারের আইপিএলে পঞ্জাবের দুই ওপেনারই সেঞ্চুরি পেলেন। অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজির কেউ এখনও তিন অঙ্কের স্কোরে পৌঁছতে পারেননি। পরের দিকে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (৯ বলে ১৩) ও নিকোলাস পুরান (৮ বলে ২৫)-এর বিস্ফোরণে পঞ্জাব হৃষ্টপুষ্ট রান তোলে স্কোরবোর্ডে। সেই রানও টপকে যায় রাজস্থান।