আইপিএলে নিজেকে মেলে ধরার লক্ষ্যে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ইশান পোড়েল। ছবি টুইটার থেকে নেওয়া।
কেরিয়ারের প্রথম আইপিএল। আর সেই কারণেই রোমাঞ্চিত ঈশান পোড়েল। একই সঙ্গে রুক্ষ বাস্তবে থাকতে চাইছেন চন্দননগরের পেসার।
কেমন সেই ক্যাটকেটে ধূসর বাস্তব? না, রঞ্জি মরসুমের মতো সবুজ উইকেট পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। নেই সকালের কন্ডিশনে নতুন বল হাতে দৌড়ে আসার সুযোগও। বরং, তরুণ পেসারের আত্মবিশ্বাস তুবড়ে যাওয়ার আশঙ্কাই থাকছে যথেষ্ট। তার উপর আমিরশাহিতে যে হেতু মাত্র তিন মাঠে খেলা, তাই ক্রমাগত ব্যবহারে উইকেট মন্থর হয়ে ওঠার আশঙ্কা যথেষ্ট। আর সেই কারণেই আইপিএল যে বোলারদের জন্য ফুল-মালা সাজিয়ে অপেক্ষা করে না, মানসিক ভাবে এই বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে চাইছেন দ্রুত।
আইপিএলের শিবির শুরুর বেশ কিছুদিন আগে আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে কথায় ঈশান সেজন্যই পরিষ্কার বললেন, “দশ বছরেরও বেশি হয়ে গিয়েছে আইপিএল। এই এত বছরে এক নম্বর বোলার থেকে ৬০ নম্বরে থাকা বোলার পর্যন্ত সবাইকে মার খেতে দেখেছি। আলাদা করে তাই ভাবছি না। আমি জানি যে, মার খেতেই পারি। কারণ, বোলার হিসেবে মার খাওয়াই ভবিতব্য। ব্যাটসম্যানের ক্ষেত্রে যেমন আউট হওয়াই ভবিতব্য। এগুলো হবেই।”
আরও পড়ুন: ‘কলকাতা আমার, ইডেন আমার, কিন্তু কেকেআর কখনওই আমার নয়’
আর সেই কারণে মানসিক ভাবে শক্তপোক্ত থাকায় জোর দিচ্ছেন। ঈশানের কথায়, “মানসিক ভাবে শক্তিশালী থাকাই আইপিএলে তফাত গড়ে দেয়। একটা ওভার বাজে যেতেই পারে। তার পর কী ভাবে ফিরে আসছি, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। কামব্যাক করতে পারছি কিনা, আসল এটাই। কী ভাবে প্রয়োগ করতে পারছি পরিকল্পনা, সেদিকে মন দিতে হবে। আগের ওভারে রান দিয়ে ফেললে সেটা নিয়েই ভেবে গেলে চলবে না। ভুলটা মাথায় থাকবে ঠিকই, কিন্তু ঠিক করার দিকে নজর রাখতে হবে। যে পরিকল্পনা রয়েছে, সেটা মেলে ধরতে হবে নিখুঁত ভাবে। আর ভরসা রাখতেই হবে নিজের দক্ষতায়।”
আইপিএলে কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের নেটে তাঁর বোলিংয়ের ভিডিয়ো নজর কেড়েছে নেটদুনিয়ায়। জন্মদিনও পালন হয়েছে সব সতীর্থের উপস্থিতিতে। দ্রুত মানিয়ে নিয়েছেন শিবিরে। ক্রিকেটমহলের মনে রয়েছে, ইডেনে মাস কয়েক আগে রঞ্জি ট্রফির সেমিফাইনালে দুরন্ত কাটারে কিংস অধিনায়ক লোকেশ রাহুলকে তাঁর এলবিডব্লিউ করার কথা। পঞ্জাবে কোচ হিসেবে ঈশান পাচ্ছেন অনিল কুম্বলেকে। পাশে থাকছে একগাদা আন্তর্জাতিক তারকা। কী শিখতে চাইছেন তিনি? ঈশান বললেন. “ওই আবহে দ্রুত ঢুকে পড়তে চাইছিলাম প্রথমে। দলের সঙ্গে যত সময় কাটাব, যত একসঙ্গে থাকব, তত শিখব। আর এটা জানি যে আমি দ্রুত শিখতে পারি। সেই ক্ষমতা আমার রয়েছে। আমি ভাল করে শুনি। ভাল করে শিখতে চাই। কেউ তো সব শিখে বসে নেই। প্রত্যেক দিনই শিখতে হয় সবাইকে। আমিও সেই শেখার আগ্রহ নিয়ে এগোতে চাইছি। সঙ্গে থাকছে খিদে। যে, এই মঞ্চে এসে আমাকে কিছু করতেই হবে। এত বড় একটা প্ল্যাটফর্ম। আইপিএলে ভাল করলে তা লোকের চোখে পড়বেই। খেলাটা সবাই দেখে। শুধু ভারতেই নয়, ক্রিকেটবিশ্বের সর্বত্র আইপিএল গুরুত্ব পায়। তাই দ্রুত শিখতে পারলে তা কাজে আসবে।”
আরও পড়ুন: ‘নিলামে কেউ না নিলেও আমার কিছু যায় আসে না’
আইপিএল খেলার স্বপ্ন দেখেন সব ক্রিকেটার। গ্যালারি ভর্তি ক্রিকেটপ্রেমীর গর্জনের মধ্যে টানটান নাটকীয়তায় বল হাতে দৌড়ে আসার উন্মাদনাই আলাদা। কিন্তু, আমিরশাহিতে তো সেই আবহ থাকছে না। করোনার জেরে পাল্টে গিয়েছে দুনিয়া। কোয়রান্টিন, আইসোলেশন, স্যানিটাইজারের সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নিতে হয়েছে। তার পরও আইপিএল থেকে যাচ্ছে আগের মতোই রোমাঞ্চকর। ঈশান বললেন, “আইপিএলে খেলা অবশ্যই একটা স্বপ্নপূরণ। সবাই চায় আইপিএল খেলতে, দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে। ধাপে ধাপে এটা আমার জীবনে ঘটতে চলেছে। তাই রীতিমতো রোমাঞ্চিত। ভাল করতে হবে। টিকে থাকতে হবে, ধারাবাহিক থাকতে হবে। ভাল ট্রেনিং করতে হবে, শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে জীবনেও। এই সব ছোটখাট ব্যাপারগুলোই তফাত গড়ে দেয়।”
নিজের সামনে যেন অদৃশ্য নোটিশ বোর্ড টাঙিয়ে রেখেছেন তিনি। চোখের সামনে ভেসে উঠছে একের পর এক লক্ষ্য। কী করতে হবে, সেই লিস্ট। আর তা মনের গভীরে আত্মস্থ করে নিচ্ছেন তিনি। জলদি শিখতে চাইছেন। আত্মস্থ করতে চাইছেন এগিয়ে চলার মন্ত্র। জানেন আইপিএলে ভাল খেলা মানে জাতীয় দলের দরজায় কড়া নাড়ার পরিস্থিতি তৈরি করা।
মরুভূমির দেশে নিজেকে মেলে ধরতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ লাগছে ঈশানকে। মনে মনে যেন পঞ্জাবের হয়ে বল হাতে দৌড় শুরু করেই দিয়েছেন!