চর্চায়: রহস্য স্পিনার বরুণ এ বার খেলবেন কেকেআরে। ফাইল চিত্র
গত বারের নিলামই জীবন বদলে দিয়েছিল বরুণ চক্রবর্তীর। ৮ কোটি ৪০ লক্ষ টাকায় তাঁকে নিয়েছিল কিংস ইলেভেন পঞ্জাব। কিন্তু ইডেনে তাঁর অভিষেক ম্যাচে খলনায়ক হয়ে দাঁড়ান সুনীল নারাইন। প্রথম ওভারেই ২৫ রান দেন বিস্ময় স্পিনার বরুণ। তিন ওভারে ৩৫ রানে এক উইকেট নিয়ে প্রথম ম্যাচ শেষ করেন চেন্নাইয়ের ক্রিকেটার।
এর পরে আর কোনও ম্যাচে খেলার সুযোগ হয়নি। আইপিএলের মাঝে আঙুলে চোট পাওয়ায় চেন্নাইয়ের বাড়িতে ফিরে যেতে হয় বরুণকে। প্রথম মরসুমের পরে একেবারেই ভেঙে পড়েছিলেন। বিজয় হজারে ট্রফিতে (২০১৮) ২২ উইকেট পেয়েছিলেন। তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগে (২০১৮) মাদুরাই প্যান্থার্সের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নেপথ্য নায়ক তিনিই। তবুও কেন আইপিএলে তিনি সফল নন? উত্তর খুঁজে পাচ্ছিলেন না ২৮ বছর বয়সি ক্রিকেটার।
নাইট অধিনায়ক দীনেশ কার্তিকই তাঁর হারানো মনোবল ফেরাতে সাহায্য করেন। কেকেআর সূত্রে খবর, অধিনায়কের সুপারিশেই তাঁকে কিনেছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। ৩০ লক্ষ টাকার প্রাথমিক দর থেকে চার কোটি টাকায় বরুণকে নেয় কলকাতার ফ্র্যাঞ্চাইজি। তামিলনাড়ুর স্পিনার এ বারও বিস্মিত। আনন্দবাজারকে ফোনে বলছিলেন, ‘‘চলতি মরসুমে কাঁধের চোট থাকায় কোনও প্রতিযোগিতায় খেলা হয়নি। এমনকি তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগেও (টিএনপিএল) খেলতে পারিনি। তবুও কেকেআর আমার উপর ভরসা রাখায় আপ্লুত।’’
আরও পড়ুন: চোটে ছিটকে গেলেন চাহার, এলেন নবদীপ
ছোটবেলা থেকে ক্রিকেটের প্রতি আকর্ষণ থাকলেও কোনও দলে সুযোগ পেতেন না। শুরুতে উইকেটকিপিং করতেন। স্কুলের ক্রিকেট দলে সুযোগ পাওয়ার জন্য পেস বল করা শুরু করেন। তাতেও সাফল্য আসছিল না। তাই মূল স্তরের ক্রিকেট ছেড়ে ‘গলি ক্রিকেট’ খেলতে শুরু করেন বরুণ। নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করেন। দেখেন, ছ’টি ডেলিভারিই আলাদা রকম করতে পারছেন। লেগস্পিন, অফস্পিন তো রয়েইছে। সেই সঙ্গেই ফ্লিপার, ক্যারম বল, স্লাইডার ও টপস্পিন করতে পারছেন। স্পিনার হিসেবে তামিলনাড়ুর চতুর্থ ডিভিশনে খেলতে শুরু করেন বরুণ। হঠাৎই সিদ্ধান্ত নেন তিনি আর্কিটেক্ট হবেন। পাঁচ বছর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকার পরে আর্কিটেক্ট হিসেবে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতে শুরু করেন বরুণ। মাঠ ছেড়ে বেশি দিন থাকতে পারেননি। ২০১৬-এ চাকরি ছেড়ে তামিলনাড়ুর দ্বিতীয় ডিভিশনে খেলার সিদ্ধান্ত নেন। সেখান থেকেই নজর কাড়ে টিএনপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজির।
আরও পড়ুন: বোলারদের দাপটে সহজ জয় বাংলার
কিন্তু গত বছর আইপিএলের পরে তিনি ভেঙে পড়েন। কেন চাকরি ছেড়ে ক্রিকেটকে বেছে নিলেন, সেই প্রশ্নও আসে তাঁর মাথায়। নাইট অধিনায়ক দীনেশ কার্তিককে তাঁর অসুবিধার কথা খুলে বলেন বরুণ। তার পর থেকে কার্তিক ব্যক্তিগত অনুশীলনে বল করতে ডাকতেন বরুণকে।
তরুণ প্রতিভার কথায়, ‘‘কার্তিক চেয়েছিল আমি যেন ফের ক্রিকেট না ছাড়ি। কী করলে আমি উন্নতি করব, কোথায় পরিবর্তন প্রয়োজন, তা নিজের দাদার মতো বুঝিয়েছিলেন কার্তিক। তাঁর নেতৃত্বে খেলার সুযোগ পাব। সেটাই আমার অনুপ্রেরণা। নারাইনের পরামর্শও পাওয়া যাবে।’’
বরুণ যোগ করেন, ‘‘কার্তিককে জিজ্ঞাসা করতাম, কেন আইপিএলে সফল হতে পারলাম না। কোন জায়গায় অসুবিধা হচ্ছে আমার! ও তখন বলেছিল, বলের গতি বাড়াতে। ফ্লাইটও কমিয়ে বল করার পরামর্শ দিয়েছিল। গত বারের চেয়ে এ বার আমি অনেক পরিণত। গতির সঙ্গে বল ঘোরাতে পারছি। কয়েকটি বৈচিত্রও যোগ হয়েছে। আশা করি, এ বার আর খালি হাতে ফিরতে হবে না আমাকে।’’
কেকেআর বরাবরই বিস্ময় স্পিনারের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে। অজন্তা মেন্ডিস, সচিত্র সেনানায়েকে, কে সি কারিয়াপ্পা খেলে গিয়েছেন। ক্যারিবিয়ান তারকা সুনীল নারাইন এখনও নাইট শিবিরের সদস্য। তাঁর সঙ্গেই রয়েছেন কুলদীপ যাদব। এ বার বরুণ যোগ হওয়ায় নাইটদের স্পিন-শক্তি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে কি না দেখার। কিন্তু গত বারের মতো এ বারও বাংলার কোনও ক্রিকেটারকে নেওয়া হল না কেকেআরে। অথচ ৪৮ বছরের প্রবীণ তাম্বেকে দলে রাখা হয়েছে। ঈশান পোড়েল ও শাহবাজ আহমেদ যদিও দল পেয়েছেন। ২০ লক্ষ টাকায় ঈশানকে নিয়েছে কিংস ইলেভেন পঞ্জাব। যে দলের অধিনায়ক এ বার কে এল রাহুল। একই অর্থে বিরাট কোহালির দলে শাহবাজ।
ঈশানকে কেন নেওয়া হল তার ব্যাখ্যাও দিয়ে গেলেন প্রীতি জিন্টার দলের কোচ অনিল কুম্বলে। তাঁর কথায়, ‘‘ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফর্ম করেছে। তাই শামির বিকল্প হিসেবে দলে নেওয়া হয়েছে ঈশানকে।’’ সানরাইজার্স হায়দরাবাদের স্পিন বোলিং কোচ মুথাইয়া মুরলীধরনও খুশি। দু’বছর আগেও ভিশন ‘২০২০’-র স্পিন উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। ঈশানকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। মুরলী বলে গেলেন, ‘‘ঈশান প্রচুর উন্নতি করেছে। আশা করি, আইপিএলেও ওকে চেনা ছন্দে দেখতে পাব।’’