কাঠগড়ায়: গ্রেফতার হওয়া সুশীলকে নিয়ে বাড়ছে রহস্য। খুনের ঘটনা এখন অপরাধ দমন শাখার অধীনে। ফাইল চিত্র।
তরুণ কুস্তিগিরকে খুনের ঘটনায় গ্রেফতার সুশীল কুমারের সঙ্গে অপরাধ জগতের যোগাযোগের বিষয় ক্রমশ প্রকাশ্যে আসছে। উঠে আসছে দুবাইয়ে বসবাসকারী অপরাধজগতের এক ব্যক্তির নামও। এ ছাড়াও তিহাড় জেলে বন্দি অন্ধকার জগতের এক কুথ্যাত ব্যক্তির নামও উঠে আসছে এই ঘটনায়।
নীরজ বাভানা নামের সেই ‘আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন’ জেলের মধ্য থেকেই অপরাধমূলক কাজ পরিচালনা করে দিল্লি ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায়। গোয়েন্দারা এখন খতিয়ে দেখছেন ধৃত সুশীলের সঙ্গে এই ব্যক্তির কোনও সম্পর্ক আদৌ রয়েছে বা তরুণ কুস্তিগির খুনের ঘটনায় নীরজের হাতও রয়েছে কি না। কারণ, ইদানীং নীরজের অনুচরদের বেশ কয়েক জনের সঙ্গে সুশীলের ঘনিষ্ঠতা বেড়েছিল বলে জানতে পেরেছেন তাঁরা। ৪ মে সাগর ধনখড়ের খুনের দিনও নাকি সেই সব কুখ্যাত ব্যক্তিরা ছিল সুশীলের সঙ্গে। তদন্তকারীরা ঘটনাস্থল থেকে যে স্করপিয়ো গাড়িটি বাজেয়াপ্ত করেছেন, সেই গাড়ির মালিক বাভানার মামাবাড়ির গ্রামের বাসিন্দা। ওই গাড়ি থেকেই পুলিশ আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলিও উদ্ধার করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, গত ১৮ দিনে কেবল তাদের এড়িয়েই গা ঢাকা দেননি সুশীল। একই সঙ্গে তিনি থাকতে চাইছিলেন উত্তর ভারতের কুখ্যাত অপরাধী সন্দীপ কালা ওরফে কালা জাঠেড়ি-র নজরের বাইরে। জাঠেড়ি এখন রয়েছে দুবাইয়ে। ঘটনার দিন সুশীলের দলবলের হাতে প্রহৃত সোনু মাহাল হলেন এই কুখ্যাত ব্যক্তির ভাইপো। দিল্লির অন্ধকার দুনিয়ার ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে জাঠেড়ি এবং নীরজ একে অপরের প্রতিপক্ষ। এই জাঠেড়ির সঙ্গে সুশীলের সম্পর্ক আগে ভাল থাকলেও ৪ মে-র পরে তা তিক্ত হয়েছে। কাদের সঙ্গে সুশীলের ঘনিষ্ঠতায় জাঠেড়ির ভাইপো মার খেয়েছে, সেটাই জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। তাঁদের ভাবাচ্ছে, কেনই বা জাঠেড়ি হঠাৎ সুশীলের উপরে রেগে গিয়েছেন? তা হলে কি সুশীল সম্প্রতি নীরজ গোষ্ঠীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছিলেন? এই প্রশ্নের উত্তর এখন গুরুত্ব দিয়ে খোঁজার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।
শোনা গিয়েছে, পুলিশ হেফাজতে জাঠেড়ির লোকেরা তাঁর কাছে যেন ঘেঁষতে না পারে, সে ব্যাপারে অনুরোধ করেছেন সুশীল। কারণ, সোনুকে দলবল নিয়ে সুশীল মারধর করেছেন, তা জানার পরে চটে রয়ে্ছেন জাঠেড়ি। উত্তর ভারতের এই কুখ্যাত অপরাধী সে কারণেই নাকি গত কয়েক দিন খুঁজছিল সুশীলকে।
এ দিকে, সোমবারেই দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, তাদের অপরাধ দমন শাখা (ক্রাইম ব্রাঞ্চ) ছত্রশাল স্টেডিয়ামে ২৩ বছরের উঠতি কুস্তিগিরের হত্যার তদন্ত করবে। এত দিন এই খুনের ঘটনার তদন্তের দায়িত্বে ছিল উত্তর-পশ্চিম জেলা পুলিশ।
তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা জেনেছেন, জাঠেড়ির সঙ্গে হাত মিলিয়েই সুশীল মডেল টাউন এলাকায় ফ্ল্যাট কিনেছিলেন, যেখানে ওই ব্যক্তি এবং আর এক কুখ্যাত অপরাধী লরেন্স বিষ্ণোইয়ের দলের ছেলেদের আশ্রয় দেওয়া হত। পুলিশ জানিয়েছে, সম্প্রতি জাঠেড়ি ওই ফ্ল্যাট বিক্রি করে তাঁকে টাকা দেওয়ার কথা বলে। এর পরেই সোনুদের ফ্ল্যাট থেকে উঠতে বলেন সুশীল। যা এই কুখ্যাত অপরাধীর পছন্দ ছিল না।
যদিও তাকে আমল না দিয়ে সুশীল এর পরেই জাঠেড়ির প্রতিপক্ষ দলের সাহায্য নিয়ে সোনু, সাগরদের মারধর করেন। এই জাঠেড়ি-বিরোধী দলের পিছনে নীরজের হাত রয়েছে কি না, সেটাই জানতে চান গোয়েন্দারা।
দিল্লির অন্ধকার জগতের একটা বড় অংশ নিয়ন্ত্রণকারী নীরজের ৫০ জন সশস্ত্র অনুচর ছড়িয়ে রয়েছে পার্শ্ববর্তী রাজ্য পঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশে। খুন, ডাকাতি, তোলা আদায়, সম্পত্তি আত্মসাতের মতো বিভিন্ন অপরাধে নীরজের ছেলেদের নাম পুলিশের খাতায় ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’-এর তালিকায়। ফলে কুস্তিগির ও অন্ধকার জগতের ঘনিষ্ঠতা এই ঘটনার পিছনে কতটা জড়িত, তা বুঝতে সুশীলকে জেরা করছে পুলিশ।
এরই মধ্যে সোমবার জাতীয় কুস্তি সংস্থাও জানিয়ে দিয়েছে, আদালত সুশীলকে নির্দোষ ঘোষণা না করা পর্যন্ত তাঁকে নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। পাশাপাশি, তাঁর কর্মস্থল ভারতীয় রেলের তরফেও সুশীলকে সাময়িক বরখাস্ত করার কথা ভাবা হচ্ছে।
এ দিকে, গ্রেফতার হওয়ার পরে সুশীলের ফাঁসি চাইলেন প্রয়াত গ্রেকো রোমান কুস্তিগির সাগরের বাবা-মা। তাঁদের মতে, নিজের রাজনৈতিক যোগাযোগকে কাজে লাগিয়ে সুশীল এই তদন্তকে প্রভাবিত করতে পারেন।
সাগরের মা সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন, ‘‘যে আমার ছেলেকে খুন করেছে, তাঁকে গুরু বলা যায় না। সুশীলের জেতা সব পদক কেড়ে নেওয়া দরকার। রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে ও তদন্তকে অন্য পথে চালিত করতে পারে। আশা করি আদালত আমাদের ন্যায়বিচার দেবে।’’