ভারতে দাবার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল, দাবা অলিম্পিয়াডের সাফল্যের পর বিশ্বাস জোরদার আনন্দের। —ফাইল চিত্র।
ভারতের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার। দাবায় প্রাক্তন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। একবার নয়, বিশ্বনাথন আনন্দ পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। অনেকের মতে তিনি এই প্রজন্মের গ্রেটেস্ট র্যাপিড চেস প্লেয়ার। ‘খেলরত্ন’ পুরস্কার তিনিই প্রথম পেয়েছিলেন। প্রথম ক্রীড়াবিদ হিসেবে ‘পদ্মবিভূষণ’ও তিনি। ভারতীয় দাবা মানেই আনন্দ। তাঁকে দিয়ে শুরুর পর দেশে গ্র্যান্ডমাস্টারের মোট সংখ্যা এখন ৬৬। যাতে প্রতিফলিত ৫০ বছর বয়সি দাবাড়ু কী ভাবে অনুপ্রাণিত করেছেন পরবর্তী প্রজন্মকে। আনন্দ একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দবাজার ডিজিটালকে।
প্রশ্ন: কোভিডের কারণে খেলাধূলার জগতেও বদলের হাওয়া। মুখোমুখি বসে নয়, দাবা অলিম্পিয়াড হল অনলাইনে। উপভোগ করলেন?
আনন্দ: সত্যি বলতে, আমি অফলাইন চেস বা রেগুলার চেসই বেশি পছন্দ করি। যাতে প্রতিপক্ষকে সামনাসামনি দেখতে পাই। অন্য প্রতিযোগীদেরও দেখতে পাই। অনলাইন চেসে এই সামাজিক দিকটা একবারে উধাও। এটাই সবচেয়ে বেশি মিস করি। অনলাইন চেসের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট সংযোগও একটা সমস্যা। কখনও কখনও ব্যাপারটা যন্ত্রণাদায়ক হয়ে ওঠে। তবে আশা করা যায়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উন্নত হবে পরিকাঠামো। অনলাইনে খেলার অভিজ্ঞতাও বাড়বে।
প্রশ্ন: লকডাউনে কয়েক মাস ঘরবন্দি জীবনের পর প্রতিযোগিতায় নেমে ক্রীড়াবিদদের সমস্যা হতে পারে। তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
আনন্দ: যখন সবকিছু স্বাভাবিক হবে, তখন প্রথম প্রতিযোগিতায় নেমে যাঁরা ভাল করবেন, তাঁরা ভাগ্যকে ধন্যবাদ জানাতে পারেন। যাঁদের পারফরম্যান্স আশানুরূপ হবে না, তাঁদেরও হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কয়েক মাস খাটাখাটনি করলেই ছন্দে ফেরা যাবে। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাও তেমনই। সাধারণত, আমাদের মধ্যে যে সহজাত লড়াকু মানসিকতা থাকে, করোনা-কালে তার খানিকটা ছন্দপতন হয়েছে। ফর্মে ফিরতে সময় লাগার কথা।
আরও পড়ুন: টেস্টে গাওস্করের চেয়ে কোহালি এগিয়ে: দিলীপ বেঙ্গসরকর
প্রশ্ন: দাবা অলিম্পিয়াডে নাটকীয় ভাবে ফিডে যুগ্মজয়ী ঘোষণা করেছে ভারতকে। ভারতীয় দাবার প্রেক্ষিতে এর তাৎপর্য কী?
আনন্দ: নাটকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল অলিম্পিয়াডে। আমরা সেমিফাইনালে খুব ক্লোজ ম্যাচ জিতেছিলাম পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে। গ্রুপ পর্যায়ে আমাদের পারফরম্যান্সও দারুণ ছিল। ইন্টারনেট সমস্যা সত্ত্বেও আমরা জিতেছি। আমরা আগে কখনও অলিম্পিয়াডে সোনা জিতিনি। টিম ইভেন্টে সেরা হতে পেরে অন্য রকম একটা তৃপ্তি পাচ্ছি। ভারতীয় দাবার শক্তি আমরা মেলে ধরতে পেরেছি অলিম্পিয়াডে। দারুণ দল ছিল আমাদের।
প্রশ্ন: আপনার মুকুটে অনেক মণিমুক্তো। তার মধ্যে অলিম্পিয়াড সোনা কোথায় থাকবে?আনন্দ: ১০০-রও বেশি দল অংশ নিয়েছিল অলিম্পিয়াডে। প্রত্যেকটা দলের ৬টা বোর্ড ছিল। প্রতিযোগিতা চলেছিল এক মাসেরও বেশি। যা করতেই হতো। আমি বলব ভারতীয় দলের পক্ষে এটা একটা গ্রেট রেজাল্ট। ৬টা বোর্ডের প্রতিটাই বিপক্ষের কাছে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিল। অলিম্পিয়াডে আমাদের সবচেয়ে বড় সাফল্য আমার কাছেও একটা বিশেষ মোমেন্ট। কারণ, করোনা অতিমারির এই সময়ে আমরা এটা জিতেছি। তাই এটা খুবই স্পেশাল টাইটেল। দলের তরুণ দাবাড়ুদের কাছেও এটা স্মরণীয় মোমেন্ট। আশা করব, এটা ওদের জীবনের প্রথম সাফল্য। আগামী দিনে ওদের কাছ থেকে এমন পারফরম্যান্স আরও বহুবার দেখতে পাওয়া যাবে। এই ধরনের জয় অনেক ক্ষেত্রেই বড় অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে। আমি সেটাই চাইছি।
প্রশ্ন: করোনা অতিমারির কারণে জার্মানিতে তিন মাস আটকে থাকতে হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতাটা কেমন?
আনন্দ: নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। কারণ, ওই সময়ে কোথাও আটকে গেলে সেখানেই পড়ে থাকতে হতো। কারণ, হাতে তো কোনও বিকল্প নেই। কোথাও যাওয়ার পরিস্থিতি থাকে না। আমি খুব ভাগ্যবান যে জার্মানিতে বন্ধুদের সঙ্গে ছিলাম। ফলে সময়টা খুব খারাপ কাটেনি। নইলে দুর্বিসহ লাগত। সেই সময়টা দাবা নিয়েই কাটিয়েছি। আর টুকটাক কিছু কাজকর্ম করেছি। দাবা প্রতিযোগিতায় ধারাভাষ্যও দিয়েছিলাম।
প্রশ্ন: ক্রীড়াজগতে আপনি রোলমডেল। কিন্তু আপনার আদর্শ কে ছিলেন?
আনন্দ: মিখাইল তাল এবং ববি ফিশার। ওঁরাই ছিলেন আমার আদর্শ।
আরও পড়ুন: অলিম্পিকে সোনা জেতাই লক্ষ্য, এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে বললেন পিভি সিন্ধু
প্রশ্ন: ভারতে দাবার ভবিষ্যৎ কেমন? কাদের দিকে লক্ষ্য রাখা উচিত?
আনন্দ:এই প্রজন্মের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ভারতীয় দাবাড়ু প্রজ্ঞা নন্দা, নিহাল সারিন, সদবানি, মুকেশেরা। মেয়েদের মধ্যে বৈশালী, দিব্যা, বন্তিকা। আমাদের দেশে দাবার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। প্রচুর উঠতি প্রতিভা দেখতে পাচ্ছি। কচিকাঁচারা বেছে নিচ্ছে দাবা। আর বিশ্বদাবার নিরিখে বর্তমান প্রজন্মের দুবোভ আর ফিরোউজার নাম বলতেই হবে।
প্রশ্ন: অজস্র জয়ের মধ্যে আপনার হৃদয়ের খুব কাছের কোনটা?
আনন্দ: আমি কোনও জয়কেই আলাদা করে সেরা বেছে নিই না। অনেক মনে রাখার মতো জয় রয়েছে। সেগুলোর সঙ্গে দারুণ দারুণ সব স্মৃতি জড়িয়ে। সেগুলো নানা কারণে আমার খুব ভাল লাগার। প্রত্যেক জয়ের জন্যই আমি কৃতজ্ঞ। প্রতিটাই স্মরণীয়। তাই কোনও একটাকে সেরা বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।