ভারতীয় দল তখনও কোটলা ড্রেসিংরুম ছাড়েনি। টেস্ট যতই শেষ হয়ে যাক দু’ঘণ্টা আগে। এটা টিম ইন্ডিয়ার নতুন দিশা— সেলিব্রেশনটা মাঠেই করে নেয়। যেমন করে থাকে অস্ট্রেলিয়া। ভারতীয় টিম ডিরেক্টর যখন এবিপি-কে ড্রেসিংরুমের বাইরের ব্যালকনি থেকে শাণিত ব্যঙ্গে ভরা ফোন-সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন তখনও পিছন থেকে উচ্ছ্বসিত তাঁর প্লেয়ারদের টুকরোটাকরা কথা ভেসে আসছে। রাতে আর একপ্রস্থ পার্টি। ভারতীয় দলের মগজাস্ত্র রবি শাস্ত্রী দাবি করলেন পার্টির রূপরেখাও নাকি তাঁর স্ট্র্যাটেজি অনুযায়ী...
প্রশ্ন: একটা জিনিস দেখে সবার চমৎকৃত লেগেছে যে, ২-০ এগিয়ে থাকা অবস্থায় এত ঝাঁপাঝাঁপির দরকারই ছিল না। তবু আজও সারা দিন কোহলিদের মনোভাব দেখে মনে হচ্ছিল এই টেস্ট ম্যাচটা মানরক্ষার জন্য তাঁদের জিততেই হবে। যেন ভারতই ০-২ পিছিয়ে। এই মনোভাব তো যে কোনও ড্রেসিংরুমের স্বপ্ন!
শাস্ত্রী: আমাদের টিম এ ভাবে দেখে না। ওরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছে উইনিং একটা হ্যাবিট। সিরিজের ফল যা ইচ্ছে হোক, ওদের একমাত্র মন্ত্র জেতা।
প্র: এ বার তো আর পিচ নিয়ে কারও কিছু বলার নেই। বাকি বিশ্ব এবং আরও বেশি করে ম্যাথু হেডেনকে কী বলবেন?
শাস্ত্রী: বলার আর কী আছে ভাই। আমার এখন কথা বলতে ইচ্ছেই করছে না। যে যা বলতে চায় নীরবে স্কোরকার্ডটা দেখিয়ে দাও। হেডেনও তার মধ্যে পড়ে।
প্র: জগমোহন ডালমিয়া তো আজহারের আমলে তিন বার আপনাকে ভারতীয় কোচ হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সচিন ক্যাপ্টেন হওয়ার পরেও আপনার সঙ্গে ওঁর কথা হয়েছিল। পিছন ফিরে কি মনে হচ্ছে সেই সময় ক্রিকেট ম্যানেজারের দায়িত্বটা নিয়ে নিলেই হত?
শাস্ত্রী: মনে হচ্ছে না। তবে এটা বলতে চাই যে মিস্টার ডালমিয়া আজ বেঁচে থাকলে দারুণ খুশি হতেন। ওঁর নিশ্চয়ই মনে হত সেই কবে আমিই তো প্রথম ভেবেছিলাম!
প্র: একটা টিম ইংল্যান্ড সিরিজে হারের পর মাত্র দেড় বছর আগে তলানিতে ছিল। তাদের কী করে রূপান্তরিত করলেন সম্পূর্ণ জঙ্গি আউটফিটে?
শাস্ত্রী: সবার আগে দরকার ছিল, ড্রেসিংরুমে নিজেদের সম্পর্কে নিজেদের বিশ্বাসটা ফিরিয়ে আনা। সেটা এক বার তৈরি হয়ে গেলে ওটাই জ্বালানির মতো চালায়।
প্র: এই টিমের প্লেয়াররা বলে আপনার সবচেয়ে বড় অস্ত্র দু’টো। মোটিভেট করতে পারা আর কমিউনিকেশন। পুরনো ফ্লেচার জমানাতে এই সংযোগ ব্যাপারটাই ছিল না।
শাস্ত্রী: কমিউনিকেশন তো দরকারই। স্বচ্ছতা দরকার। ছেলেরা যেন জানে ব্যাপারটা ঠিক কী এবং ওদের থেকে লুকনো হয়নি।
প্র: অশ্বিন সম্পর্কে কী বলবেন? পরপর দু’টো ম্যান অব দ্য সিরিজ। তিন বছর পর কোথায় দেখছেন ওঁকে?
শাস্ত্রী: আমি তো বেঙ্গালুরুতেই আপনাকে বললাম বিশ্বের এক নম্বর স্পিনার। সে দিন লেখেননি?
প্র: লিখেছি কিন্তু আমার প্রশ্ন তার পরেও আইসিসির সেরা টেস্ট দলে আপনার টিমের কেউ নেই কেন? অশ্বিনকে রাখা হয়েছে টুয়েলফথ্ ম্যান।
শাস্ত্রী: আইসিসি নিয়ে আমি চিন্তিত নই। আমার টিমের কী হচ্ছে সেটা মনে করিয়ে দিতে পারি। বেঙ্গালুরুতে বৃষ্টির জন্য ওরা বেঁচে গেল। নইলে সিরিজ ৪-০ হওয়ার কথা।
প্র: স্টিভ ওয়র টিমকে সেই ২০০১ সালে হারানোর পর হোমে ভারতীয় ক্রিকেটের কি এটাই সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব?
শাস্ত্রী: নিঃসন্দেহে। বিশ্বের এক নম্বর টিম এ ভাবে হামাগুড়ি দিয়ে হেরেছে। ভারতীয় ক্রিকেটের সব সেরা সিরিজ জয়ের মধ্যে থাকবে।
বিজয়ী। সোমবার ফিরোজ শাহ কোটলা স্টেডিয়ামে প্রেম সিংহের তোলা ছবি।
প্র: দক্ষিণ আফ্রিকানদের ব্লকাথন দেখে আশ্চর্য লাগেনি?
শাস্ত্রী: ওরা করেছে, করেছে। অ্যায়াম নট বদার্ড। স্কোরকার্ড দেখুন ভাই, স্কোরকার্ড।
প্র: কিছু বলবেন না, এই টার্নারে জেতা নিয়ে এত কথা হচ্ছিল। কোটলা তো দেখিয়ে দিল সাধারণ পিচেও কী ফল হয়।
শাস্ত্রী: না না, নো টক। এখন শুধু এক্সপার্টরাই কথা বলুক। আমরা সাহায্যের জন্য বড়জোর স্কোরকার্ড এগিয়ে দিতে পারি।
প্র: ডে’ভিলিয়ার্সের আউটটার পর টিভি ক্যামেরা আপনাকে ধরল। উত্তেজনায় উঠে দাঁড়িয়েছেন। ওই একবারই আপনাকে উঠতে দেখলাম।
শাস্ত্রী: ইয়েস, ওটাই তো বিগ উইকেট না।
প্র: ডে’ভিলিয়ার্সের ইনিংসটা সম্পর্কে কী বলবেন? দয়া করে বলবেন না স্কোরকার্ড দেখুন।
শাস্ত্রী: পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেকে বদলাতে জানে বলেই তো ও এত বড় ব্যাটসম্যান।
প্র: আর আপনার রাহানে এক শব্দে?
শাস্ত্রী: এক শব্দে? চাবুক।
প্র: গাওস্কর আর কোহলি দু’জনেই আপনার টিমের বেঁটে উইকেটকিপারটার খুব প্রশংসা করছিলেন।
শাস্ত্রী: ওহ! ঋদ্ধি আউটস্ট্যান্ডিং। কী ক্যাচটাই না নিল। এ ভাবে চললে কিছু দিনের মধ্যে আমার দেখা সেরাদের মধ্যে ওকে রাখতে হবে। এই সিরিজে যেন আরও বোঝা গেল কেন টিমের ছেলেরা ঋদ্ধিকে নিয়ে এত আশাবাদী থাকে।
প্র: ইন্ডিয়া টিমের এক সূত্র জানাচ্ছে, আপনি নাকি বলেছেন শুধু স্পিনে নয় বিদেশে পেস সহায়ক উইকেট দিলেও তোমরা তৈরি। ঘণ্টায় ১৪০ কিমির বেশি রাখতে পারে এমন তিনজন আমার টিমে রয়েছে। উমেশ, ইশান্ত আর বরুণ অ্যারন।
শাস্ত্রী: অবশ্যই। উমেশ আজ একটা স্পেলে কী বল করল দেখেছেন? তবে আপনি তিন জনের নাম করলেন কেন?
প্র: তিন জনই তো! ইশান্ত, উমেশ, বরুণ!
শাস্ত্রী: আমার নবাব অব ক্যালকাটাকে ভুলে গেলে হবে! মহম্মদ শামি— তাকে বাদ দিয়ে কী করে হয়!