ইয়ারা নদীর ধারে ভারতীয় সমর্থকের সঙ্গে জিওফ মার্শ। ছবি গৌতম ভট্টাচার্য
বক্তা রোববার এক অভিনব বিশ্বরেকর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে। তিনি কোচ ও প্লেয়ার দু’ভাবেই অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বিশ্বকাপ জিতেছেন। যা কাল ডারেন লেম্যান সমান করে দিতে পারেন যদি অজিরা কাপ পায়! কিন্তু তা হলেও লেম্যান আর তিনি এক জায়গায় থাকবেন না। কারণ এটা তাঁর তা হলে তিন নম্বর কাপ হবে। এ বারেরটা গর্বিত বাবা হিসেবে। মিচেল মার্শের বাবা প্রাক্তন শ্রীলঙ্কা ও পুণে ওয়ারিয়র্স কোচ জিওফ মার্শ শনিবার ইয়ারার ধারে সাক্ষাৎকার দিলেন এবিপি-কে। বেছে দিলেন এ বারের বিশ্বকাপে তাঁর দেখা সেরা তিন অধিনায়ককে!
১. মাইকেল ক্লার্ক: অনবদ্য অধিনায়ক। এটা খুব দুঃখের, যে ভাবে মিডিয়া ওর পিছনে নাগাড়ে প্রচার চালিয়ে গেল। যার মধ্যে প্রাক্তন কিছু ক্রিকেটারও রয়েছে। অথচ কী রেকর্ড ক্লার্কের। যেমন নিজে রান করেছে। তেমনই ক্যাপ্টেন্সি করেছে। ওর একটা অদ্ভুত ক্ষমতা হল, খেলাটা সবার আগে বুঝে নিতে পারে। বুঝে সেই অনুযায়ী ও ছকটা করে নেয়। ইন্ডিয়ার দিন ওর বোলিং চেঞ্জগুলো আমার দারুণ লেগেছে। তার পর শুধু তো মাঠের মধ্যে ক্যাপ্টেন্সি নয়, মাঠের বাইরেও ক্যাপ্টেন্সি করতে হয়। বাংলাদেশ ম্যাচটা যখন বৃষ্টির জন্য খেলা হল না, অস্ট্রেলিয়ার মাঝে দশ দিন মতো গ্যাপ ছিল। ওই দিনগুলোকে কী ভাবে প্র্যাকটিসে ঠিকমতো ম্যানেজ করে টিমকে চাঙ্গা রাখতে হবে, সেই প্ল্যানিংগুলোও মাইকেল দারুণ করেছিল। আশা করব টেস্ট ক্রিকেটে ও আরও অন্তত তিন বছর ক্যাপ্টেন্সি করবে। আর একটা কথা বলি, মাইকেল দারুণ কুশলী লিডার। এই সিদ্ধান্তের আবেগ-টাবেগ কিছু মাঠে টিমের ওপর কাল পড়তে দেবে না। আমি অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে এত বছর কাটানোর মধ্যে মাইকেলের মতো ক্যাপ্টেন কম দেখেছি। একটা কথা মনে রাখবেন, টুর্নামেন্টের এক সপ্তাহ আগে যে লোকটা হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটের জন্য বিশ্বকাপ খেলবে কি না ঠিক ছিল না, সে কিনা টিমকে গুছিয়ে ফাইনাল নিয়ে চলে গেল! আর কিছু বলার নেই! নেট খুলে শুধু সব ধরনের ক্রিকেটে ওর রেকর্ডটা দেখবেন।
২. মহেন্দ্র সিংহ ধোনি: খুব ভাল ক্যাপ্টেন। এত বেশি খেলা হচ্ছে এখন যে ক্যাপ্টেনকে ভেতরে ভেতরে ঠান্ডা, নৈর্ব্যক্তিক থাকতেই হয়। ধোনির এই সব কিছুকে রিমোটের মতো একটা টেম্পারেচারে রেখে দিতে পারাটা আমায় খুব টানে। অনেক বছর ইন্ডিয়ান ক্যাপ্টেন্সি করছে। কত চাপ নিয়েছে। কিন্তু সেগুলো সামলে এ বারের বিশ্বকাপে কী দারুণ ক্যাপ্টেন্সিটাই না করল। সবাই বলছে ইন্ডিয়া তেমন ফাইট দিতে পারল না সিডনিতে। আমি অন্য ভাবে দেখছি। বিশ্বকাপ জিততে হলে আপনাকে বড় ম্যাচে বড় মুহূর্তগুলো জিততে হবে। যেটা ভারত সে দিন পারেনি। একে তো টস হারল, তার পর মিচেল জনসনের দু’টো দারুণ ডেলিভারিতে দু’টো উইকেট চলে গেল। ওখানেই ম্যাচটা ঘুরে যায়। ওই বিশেষ দিনটা অস্ট্রেলিয়ার ছিল। তবু ধোনিরা লড়াই করেছে।
৩. ব্রেন্ডন ম্যাকালাম: নিউজিল্যান্ড টিমটাকে শুধু ব্যাট হাতে টানছেই না— অধিনায়কত্ব করছেও খুব ভাল। গত এক বছর নিউজিল্যান্ড টিমের যে খেলার ভঙ্গি পুরো বদলে গিয়েছে। ওরা যে আজকের দিনে এত অসমসাহসী, তার পুরো কৃতিত্ব ব্রেন্ডনের। ক্লার্ক আর ধোনি ওর এক ধাপ আগে থাকবে নেট হিসেবে। কিন্তু ব্রেন্ডনের হাতে এখনও অনেক সময়। ও আরও উন্নতি করবে। তখন না হয় ওর রেটিংটা আবার নতুন করে দেব।
কিছুটা হতাশ করেছে
এবি ডে’ভিলিয়ার্স: ডে’ভিলিয়ার্স আমার মতে বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটসম্যান। ভাবাই যায় না একটা ব্যাটসম্যানের মধ্যে এত সব শট খেলার ক্ষমতা থাকতে পারে। ফ্রিক বলা যায়। ওর ব্যাটিং দেখার জন্য আমি মাইলের পর মাইল হাঁটতে রাজি আছি। ও খুব বেশি দিন এই পদে আসেনি। তবে ব্যাটিংয়ে যতটা ধারালো, ক্যাপ্টেন্সিতে ততটা এখনও নয়। প্রতিশ্রুতি নিশ্চয়ই আছে, তবে আরও যেতে হবে। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ইডেন পার্কে সে দিন ওদের জেতা ম্যাচ ছিল। ডে’ভিলিয়ার্সের কাছে আমি চাপের মুখে আরও ভাল ক্যাপ্টেন্সি আশা করেছিলাম।
ভবিষ্যতের তারা
১. বিরাট কোহলি: শুনলাম ইন্ডিয়ায় এই মুহূর্তে কোহলি বাজে প্রেস ফেস করছে। যারা ওর সম্পর্কে নেগেটিভ লিখছে। আমার মনোভাব তাতে বদলাবে না। ওর সম্পর্কে অস্ট্রেলিয়ারও না। হি ইজ টু গুড! অ্যাডিলেড টেস্টে ওর ব্যাটিং আর ক্যাপ্টেন্সি দেখে আমি ফিদা হয়ে গিয়েছি। সিডনিতে হয়তো রান পায়নি। তার আগের অস্ট্রেলিয়া ম্যাচেও না। তার কারণ অস্ট্রেলিয়া না পেরে অন্য ভাবে ওর ওপর এমন প্রেশার তৈরি করেছে যে, কোহলির অসুবিধে হওয়াটা বাধ্য ছিল। আমি আপনাকে বলছি অ্যাডিলেডের পর থেকে অস্ট্রেলীয় ড্রেসিংরুমে ওকে নিয়েই সবচেয়ে আলোচনা আর রিসার্চ হয়েছে। তাতে সাময়িক ফল পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু ও যে রেঞ্জের প্লেয়ার, ঠিক আবার একটা রাস্তা বার করে নেবে। শুনলাম ওর অভিনেত্রী গার্লফ্রেন্ডের সিডনিতে ম্যাচ দেখতে আসা নিয়েও ইন্ডিয়ায় প্রচুর বিতর্ক চলছে। এটা শুনে আমি হেসেছি। আমাদের দেশে এটা কোনও ইস্যুই হত না। স্ত্রী আর বান্ধবীরা টিমের কাছাকাছি থাকলে আমরা বরং স্বাগত জানাই। এখনকার দিনে প্লেয়ারদের এত লম্বা ট্যুরে ঘনঘন থাকতে হয় যে কাছের মানুষদের পাশে না পেলে ওদের অসুবিধে হতে বাধ্য।
২. স্টিভ স্মিথ: বলতে পারেন অনেকটাই আমার হাতে তৈরি। আমার খুব অনুগতও। পুণে ওয়ারিয়র্স টিমে ওকে যে দিন লেগস্পিনার হিসেবে ট্রায়াল দেওয়ার পর দলে নিলাম, তখনও ভাবিনি এই ছেলে এত ওপরে উঠবে। ক’দিন প্র্যাকটিস করিয়েই অবশ্য শিওর হয়ে যাই, এ ছেলে জ্বালিয়ে দেবে। ও যে ভাল ক্যাপ্টেন হবে এর মধ্যে দেখিয়ে দিয়েছে। স্টিভের মধ্যে একটা অদ্ভুত কম্বিনেশন আছে। মার্ক টেলরের কিছু। মাইকেল ক্লার্কের কিছু। এবং অবশ্যই যার সঙ্গে ওর নামটা এক— সেই স্টিভ ওয়র কিছু। এমন কম্বিনেশন সাধারণ মানে থেকে যাওয়ার জন্য আসেনি।