World Chess Championship

ধোনিদের বিশ্বজয়ের নেপথ‍্য নায়কের মন্ত্রেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন গুকেশ, লিরেনের এক ভুল ধরে বাজিমাত

২০১১ সালে ভারতের ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ের নেপথ্যে ছিলেন তিনি। ডি গুকেশ দাবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলেন সেই প্যাডি আপটনের মন্ত্রেই। ১২তম গেমের পরেই কী ভাবে বদলে গেলেন ভারতীয় গ্র্যান্ডমাস্টার?

Advertisement

দেবার্ক ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ ২১:৫৯
Share:

জয়ের হাসি গুকেশের মুখে। ছবি: পিটিআই।

১২তম রাউন্ডে ডিং লিরেনকে ফিরে আসার সুযোগ করে দিয়েছিলেন ডি গুকেশ। সেই সময় তিনি এগিয়ে ছিলেন ৬-৫ ব্যবধানে। বাকি তিনটি ম্যাচ ড্র করলেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতেন তিনি। কিন্তু পারেননি গুকেশ। তাঁকে হারিয়ে সমতা ফেরান চিনের দাবাড়ু। তার পরেই গুকেশের রক্ষাকর্তা হয়ে দেখা দেন প্যাডি আপটন। ২০১১ সালে ভারতের ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ের নেপথ্যে ছিলেন এই মেন্টাল কন্ডিশনিং কোচ। ডি গুকেশ দাবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলেন সেই আপটনের মন্ত্রেই। ১২তম গেমের পরেই কী ভাবে বদলে গেলেন ভারতীয় গ্র্যান্ডমাস্টার?

Advertisement

১২তম রাউন্ডে হেরে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন গুকেশ। তার আগের কয়েক রাত ঠিক মতো ঘুমাতে পারেননি তিনি। গুকেশ বুঝতে পেরেছিলেন মানসিক ভাবে আরও শক্তিশালী হতে হবে তাঁকে। তিনি কথা বলেন আপটনের সঙ্গে। বৃহস্পতিবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেই আপটনের প্রসঙ্গ টেনে আনেন গুকেশ। তিনি বলেন, “আমার ঠিক মতো ঘুম হচ্ছিল না। ১২তম ম্যাচের পর বিশ্রামের দিন আপটনের সঙ্গে কথা বলি। উনি আমাকে কয়েকটা পরামর্শ দেন। সেগুলো কাজে লেগেছে। পরের দুটো ম্যাচে মানসিক ভাবে আমি অনেক বেশি তরতাজা হয়ে নেমেছি।”

আপটনের সঙ্গে অবশ্য বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ চলাকালীনই প্রথম কথা বলেননি গুকেশ। দু’জনের কাজ শুরু আরও কয়েক মাস আগে। গুকেশ বলেন, “আমি আপটনের সঙ্গে কাজ শুরু করেছিলাম মে-জুন মাস থেকে। কারণ, আমি জানতাম, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে গেলে মানসিক ভাবে শক্তিশালী হতে হবে। ওপেনিং নিয়ে আমার কিছু সমস্যা ছিল। আপটনের সঙ্গে সেই বিষয়েই আলোচনা করি। উনি দাবা খেলা জানেন না। কিন্তু এত বড় চ্যালেঞ্জ কী ভাবে সামলাতে হয় সেটা জানেন। আমরা খুব মজা করতাম। ২০১১ সালে ভারতকে ক্রিকেট বিশ্বকাপ জিততে সাহায্য করেছিলেন আপটন। এ বার আমাকেও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে সাহায্য করলেন।” সকল দাবাড়ুকেই মেন্টাল কন্ডিশনিং কোচ রাখার পরামর্শও দিয়েছেন গুকেশ।

Advertisement

আপটনের মন্ত্র তাঁর কতটা কাজে লেগেছে সেটা দেখা গিয়েছে গুকেশের শেষ ম্যাচে। এ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে দেখা গিয়েছে, বেশির ভাগ ম্যাচেই আক্রমণাত্মক খেলেছেন গুকেশ। অন্য দিকে লিরেন বরাবরই রক্ষণাত্মক খেলছিলেন। শেষ ম্যাচেও সেটাই দেখা গেল। সময়ের চাপে সমস্যায় পড়লেন লিরেন। প্রথম ৪০ চালের পর শেষ দিকে সময় কমছিল লিরেনের। তখন বোর্ডে গুকেশের রাজা ও দু’টি বোড়ে পড়েছিল। অন্য দিকে লিরেনের ছিল রাজা ও একটি বোড়ে। দেখে মনে হচ্ছিল, খেলা ড্র হবে। সেখানেই ভুল করলেন চিনের দাবাড়ু।

৫৫তম চালে বিরাট ভুল করে ফেলেন লিরেন। চাল দেওয়ার পরেই সেটা বুঝতে পারেন তিনি। ম্যাচ শেষে লিরেন বলেন, “চাপের মধ্যে একটা চালে ভুল করে ফেলি। তারপরেই গুকেশের মুখ দেখে বুঝতে পারছিলাম, ও কতটা আনন্দ পেয়েছে। তখন আর আমার কিছু করার ছিল না।” স্রেফ একটা অতিরিক্ত বোড়ে নিয়ে যে তিনি জিতে যাবেন সেটা ভাবতেই পারেননি গুকেশ। লিরেন যে ভুল চাল দিয়েছেন সেটা বুঝতেও কয়েক সেকেন্ড সময় লেগেছিল তাঁর। গুকেশ বলেন, “আমি বুঝতে পারিনি যে লিরেন এত বড় ভুল করেছে। কয়েক সেকেন্ড পরে বুঝতে পারি। সেটা কাজে লাগাই।”

সুযোগ কমলেও যে লড়াই ছাড়া উচিত নয় সেটা এই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে বাকি সকলকে শিখিয়েছেন গুকেশ। তিনি টাইব্রেকারে যেতে চাননি। কারণ, গুকেশ জানতেন টাইব্রেকারে যে কেউ জিততে পারে। সেখানে নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারেন লিরেন। তাই ১৪ ম্যাচেই খেলা শেষ করতে চেয়েছিলেন। সেটাই করেছেন গুকেশ। তার নেপথ্যে রয়েছেন আপটন। ঠিক যে ভাবে ১৩ বছর আগে সচিন, সহবাগকে হারিয়েও ভয় পায়নি ধোনির ভারত। কোহলি, গম্ভীর, ধোনির ব্যাটে হারিয়েছিল শ্রীলঙ্কাকে। ১৩ বছর পরে ঠিক সে ভাবেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম ম্যাচ হেরেও শেষ হাসি হাসলেন ভারতের গুকেশ। সর্বকনিষ্ঠ হিসাবে হলেন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement