প্যারিসে জ্যাভলিনের ফাইনালে নবদীপ সিংহ। ছবি: রয়টার্স।
জীবনটা বদলে গিয়েছে নবদীপ সিংহের। প্যারিসে প্যারালিম্পিক্সে সোনা জিতেছেন তিনি। প্যারিস থেকে ফিরে সাক্ষাৎ হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে। কিন্তু অতীতটা আনন্দের ছিল না নবদীপের। উচ্চতা কম হওয়ায় অনেক কথা শুনতে হয়েছে তাঁকে। অনেকে তাঁকে আত্মহত্যা করারও পরামর্শ দিতেন।
একটি সাক্ষাৎকারে ২৩ বছরের নবদীপ জানিয়েছেন, পরিবার ছাড়া কাউকে পাশে পাননি তিনি। জীবনে চলার পথে যে কটূ কথা তাঁকে শুনতে হয়েছে তাকেই নিজের অস্ত্র বানিয়েছেন নবদীপ। আরও জেদ বেড়েছে তাঁর। নবদীপ বলেন, “আপনাদের কী মনে হয়, লড়াই করার জেদ কোথা থেকে পেয়েছি? সকলে বলত, কিছু করতে পারবি না। এ ভাবে বেঁচে থেকে কী করবি? তার থেকে আত্মহত্যা করে নে। সেই সব কথা জেদ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সব কথার জবাব দিয়েছি।”
নবদীপ অবশ্য প্যারিসে প্রথমে রুপো পেয়েছিলেন। তিনি নিজের তৃতীয় থ্রোয়ে ৪৭.৩২ মিটার দূরে জ্যাভলিন ছোড়েন এফ৪১ বিভাগে। প্রথম স্থানে ছিলেন ইরানের সাদেঘ বেইত সায়াহ। কিন্তু সোনা জয়ের পরের মুহূর্তেই প্রতিযোগিতা থেকে বাতিল করে দেওয়া হয় তাঁকে। জানানো হয় অখেলোয়াড় সুলভ আচরণের জন্য তাঁকে বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু সাদেঘ কী করেছিলেন তা বলা হয়নি। সম্প্রচারকারী চ্যানেলে দেখা যায় সোনা জয়ের পর কালো পতাকা বার করেছিলেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে সরিয়ে দেওয়া হয় ক্যামেরা।
নবদীপ জানিয়েছেন তিনি সাদেঘের পাশে বসেছিলেন। সেই সময়ই ঘোষণা করা হয় যে, সাদেঘকে বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। নবদীপ বলেন, “ইরানের খেলোয়াড়ের সঙ্গেই বসেছিলাম আমি। সেই সময় জানিয়ে দেওয়া হয় যে, তাঁকে বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। আমি চেষ্টা করেছিলাম তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার। কিন্তু ও কী বলছিল বুঝতে পারিনি। সাদেঘ ইংরেজি জানে না। ও ইরানের ভাষায় কথা বলছিল। আমি বুঝতে পারিনি ও কী বলেছে।”
নবদীপের অনুপ্রেরণা নীরজ চোপড়া। তাঁকে দেখেই ২০১৬ সালে জ্যাভলিন শুরু করেন নবদীপ। তাঁর প্রধান বাধা শারীরিক কাঠামো। ৪ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতার নবদীপ তবু বেছে নেন শারীরিক শক্তি নির্ভর ইভেন্টকে। শুরুতে অবশ্য অ্যাথলিট ছিলেন না নবদীপ। ছিলেন কুস্তিগির। তাঁর বাবা দলবীর সিংহ ছিলেন জাতীয় স্তরের কুস্তিগির। বাবার কাছেই তালিম শুরু নবদীপের। পরে প্যারা অ্যাথলিট সন্দীপ চৌধুরি বদলে দেন নবদীপের জীবনের গতি পথ। ২০১৭ সালে এশিয়ান প্যারা অ্যাথলিট চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জেতেন। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। টোকিয়ো প্যারালিম্পিক্সে চতুর্থ হলেও হাল ছাড়েননি। বরং আরও বেশি উৎসাহ নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করেন প্যারিসের জন্য। এ বছরের শুরুতে জাপানের কোবেতে আয়োজিত বিশ্ব প্যারা অ্যাথলেটিক্সে ব্রোঞ্জ পদক পান। একই সঙ্গে প্যারিস গেমসের যোগ্যতা অর্জন করেন।
জাপানের প্রতিযোগিতার কিছু দিন আগে নবদীপের বাবা মারা যান। বাবার মৃত্যুতে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। আবার বাবার স্বপ্ন সফল করতেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের প্রস্ততিতে নিজেকে ডুবিয়ে দেন। ফলও পান। জাপানে বছরের সেরা ৪২.৮২ মিটার দূরত্বে জ্যাভলিন ছোড়েন হরিয়ানার প্যারা অ্যাথলিট। তার পর প্যারিসে সোনা জিতলেন নতুন প্যারালিম্পিক্স রেকর্ড গড়ে। এত দিন যা যা শুনেছেন সে সব কথারই জবাব দিচ্ছেন তিনি।