তাঁর ২০ বছরের গল্ফ জীবনে কখনও এতটা খারাপ আবহাওয়ায় খেলেননি। শেষদিন তিনি কার্যত শীতে কাঁপছিলেন! সঙ্গে গরম জামার দু’টি ব্যাগ আনতে হয়েছিল। অল্পের জন্য ট্রফি জিততে না পারলেও সেটা নিয়ে বেশি ভাববেন না অনির্বাণ। এই মুহূর্তে তাঁর একটাই লক্ষ্য, পরের প্রতিযোগিতাগুলির জন্য তৈরি হওয়া।
প্রত্যয়ী: একটুর জন্য খেতাব অধরা অনির্বাণের। ফাইল চিত্র
নিজের সমস্ত উদ্যম উজাড় করেও শেষরক্ষা হয়নি। ফ্লরিডায় পিজিএ টুরে খেতাব অধরা থেকে গিয়েছে অনির্বাণ লাহিড়ীর।
ফ্লরিডায় পাশে পাননি বাইপাস সার্জারি হওয়া কোচকে। সেখানকার মারাত্মক ঠান্ডাতেও টানা সাত দিন তাঁকে খেলতে হয়েছে। বাঙালি গলফার আর কয়েক দিনের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তানের বাবা হবেন। নানা রকম চিন্তা নিয়েই তিনি এই প্রতিযোগিতায় খেলেছেন।
অনির্বাণ বলেছেন, ‘‘কয়েক সপ্তাহ আগে আমার অতীতের বেশ কিছু পরিসংখ্যান পাঠিয়ে কোচ প্রশ্ন করেছিলেন, আমি কি এর থেকেও ভাল কিছু করতে পারি? বলা যায়, সেই পরিসংখ্যানই আমার মানসিকতা আমূল পাল্টে দেয়। আর প্রথম রাউন্ড থেকেই দারুণ কিছু করার লক্ষ্যে নিজেকে উজাড় করে দিই।’’
কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে না পারার যন্ত্রণা থাকলেও ৩৪ বছরের অনির্বাণ কিন্তু পুরো সপ্তাহটাই দারুণ উপভোগ করেছেন! বুধবার ‘অনলাইন’ সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘নিজেই অবাক হয়ে যাচ্ছি, এটা ভেবে যে, এখানে পৌঁছনোর ১০ মিনিট পরেই আমাকে প্রতিযোগিতায় খেলতে নেমে যেতে হয়েছিল।’’ অনির্বাণ আপ্লুত সচিন তেন্ডুলকর তাঁকে অভিনন্দন জানানোয়। ‘‘বেশির ভাগ ভারতীয়ের মতোই আমিও ক্রিকেটের ভক্ত। সচিনকে তো ভীষণই ভাল লাগে। অতীতে ওঁর সঙ্গে কথা বলার সুযোগও হয়েছে।’’ যোগ করেছেন, ‘‘২০১৪ সালে টাইগার উড্স ভারতে এসেছিলেন। তখনই সচিন ভারতরত্ন সম্মান লাভ করেন। সেই সময় টাইগার আর সচিনের সঙ্গে একই হোটেলে নৈশভোজ করেছিলাম। সেখানে সচিন আমার সঙ্গে শিব কপূর, শর্মিলা নিকোলেটদেরও ডেকে ছিলেন। সেই রাতে ক্রিকেট আর গল্ফ নিয়ে অসাধারণ একটা আড্ডা হয়েছিল আমাদের।’’ অনির্বাণ জানিয়েছেন, কিংবন্তি ক্রিকেটার গল্ফও খুব ভালবাসেন। তাই সচিনের প্রশংসা পেয়ে তিনি আপ্লুত। আর ফ্লরিডায় নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে বলেছেন, ‘‘এত ভাল করব ভাবিইনি। এটা আমার কাছে খুবই ইতিবাচক লক্ষণ। প্রতিযোগিতার পরে পরিবার আর বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলেও খুব আনন্দ পেয়েছি। ওদের মুখেই শুনলাম, আমার দেশের অনেক মানুষ কী ভাবে পুরো খেলা দেখে আমাকে সমর্থন করেছেন। সত্যি সেটাও দারুণ একটা প্রাপ্তি।’’ অনির্বাণ জানিয়েছেন, কোচ বিজয় দিবেচার অসুস্থতায় তিনি কতটা উদ্বেগের মধ্যে পড়েছিলেন! এখন অবশ্য চিন্তা কেটেছে। ভাল আছেন কোচ। বলেছেন, ‘‘সাত দিনের প্রতিযোগিতা আমার মনে হচ্ছিল এক মাস ধরে খেলতে হচ্ছে। এতটাই ধকল সহ্য করতে হয়েছে। শেষ দিকে শরীর আর দিচ্ছিল না। মারাত্মক ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম।’’ জানিয়েছেন, রবিবার প্রতিযোগিতার শেষদিন সকালে ফ্লরিডার তাপমাত্রা ছিল মাইনাস দু’ডিগ্রি! সঙ্গে ঝোড়ো হওয়া তো ছিলই। তাঁর ২০ বছরের গল্ফ জীবনে কখনও এতটা খারাপ আবহাওয়ায় খেলেননি। শেষদিন তিনি কার্যত শীতে কাঁপছিলেন! সঙ্গে গরম জামার দু’টি ব্যাগ আনতে হয়েছিল। অল্পের জন্য ট্রফি জিততে না পারলেও সেটা নিয়ে বেশি ভাববেন না অনির্বাণ। এই মুহূর্তে তাঁর একটাই লক্ষ্য, পরের প্রতিযোগিতাগুলির জন্য তৈরি হওয়া।