জার্মানির বুন্দেশলিগা দাবা লিগে খেলতে গিয়ে হেনস্থার অভিযোগ করলেন ভারতীয় দাবাড়ু নারায়ণন। প্রতীকী ছবি।
জার্মানিতে একটি প্রতিযোগিতায় খেলতে গিয়ে হেনস্থার শিকার হলেন ভারতের গ্র্যান্ডমাস্টার এসএল নারায়ণন। ম্যাচের আগে তাঁকে খালি পায়ে মেটাল ডিটেক্টরের সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় বলে অভিযোগ।
বুন্দেশলিগা দাবা লিগ খেলতে জার্মানি গিয়েছেন নারায়ণন। প্রতিযোগিতা যেখানে হচ্ছে, সোমবার সেখানে যাচ্ছিলেন ভারতীয় গ্র্যান্ডমাস্টার। তিনি মেটাল ডিটেক্টরের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় একটি শব্দ হয়। তাতে নিরাপত্তাকর্মীরা নারায়ণনের পথ আটকান। প্রথমে ভারতীয় দাবাডুকে বলা হয় জুতো খুলে ফেলতে। তিনি জুতো খোলার পরেও নিশ্চিত হতে পারেননি নিরাপত্তাকর্মীরা। নারায়ণনকে মোজাও খুলে ফেলার নির্দেশ দেন তাঁরা। দেখা যায় মেঝেতে পাতা কার্পেটের জন্য শব্দ হচ্ছে। এই ঘটনায় অপমানিত বোধ করেছেন নারায়ণন। ক্ষুব্ধ ভারতীয় দাবাড়ু জানিয়েছেন, এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে। এ বারের নিরাপত্তারক্ষীরা একটু বেশিই কড়াকড়ি করেছেন।
ক্ষোভপ্রকাশ করে টুইট করেছেন ২৪ বছরের দাবাড়ু। জানিয়েছেন বিশ্ব দাবা সংস্থা ফিডেকেও। নারায়ণন লিখেছেন, ‘‘আমি অপমানিত বোধ করেছি। এমন ঘটনা নিয়ে চুপ থাকলে নিজের প্রতিই অবিচার করা হবে। অন্য ক্রীড়াবিদদের প্রতিও অবিচার হবে, যাঁদের এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে।’’ বিরক্ত ভারতীয় দাবাড়ু জানিয়েছেন, পাঁচ জন প্রতিযোগীকে প্রথম রাউন্ডের আগে বেছে নেওয়া হয়। সেই তালিকায় ছিলেন নারায়ণনও। তাঁদের যে কোনও সময় তল্লাশি করা হবে বলে জানানো হয়েছিল।
ভারতীয় গ্র্যান্ডমাস্টার লিখেছেন, ‘‘মেটাল ডিটেক্টরে পরীক্ষার সময় একটি শব্দ হয়। আমাকে জুতো খুলে ফেলতে বলা হয়। তার পরেও শব্দ হয়। এর পর মোজাও খুলে ফেলতে বলা হয় আমাকে। খালি পায়ের কাছে মেটাল ডিটেক্টর নিয়ে এসে পরীক্ষা করা হয়। তখনও শব্দ হয়। তখন আমাকে এক পাশে সরে দাঁড়াতে বলা হয় এবং পরের খেলোয়াড়কে ডাকা হয়। সেই সময়ের অনুভূতি বলে বোঝাতে পারব না। নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছিল।’’
নারায়ণন লিখেছেন, ‘‘যে ঘরে খেলা ছিল তার মাঝখানে পরীক্ষা করা হচ্ছিল আমাদের। সেখানেই আমাকে খানিকক্ষণ খালি পায়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। বিষয়টা অত্যন্ত অস্বস্তিকর ছিল।’’ নিরাপত্তাকর্মীরা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ভারতীয় দাবাড়ুর পায়ের স্ক্যান করেন। স্বাভাবিক ভাবেই তাতেও কিছু পাওয়া যায়নি।
নারায়ণন লিখেছেন, ‘‘মেঝেতে কার্পেট পাতা ছিল। দেখা যায় সেই কার্পেটের জন্যই শব্দ হচ্ছে। নিরাপত্তারক্ষী অবশ্য আমার কাছে দুঃখপ্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন। তবুও গোটা পরিস্থিতিটাই ছিল অস্বস্তিকর এবং অপমানজনক। মনে হয় পরিস্থিতিটা আরও ভাল ভাবে সামলাতে পারতেন প্রতিযোগিতার আয়োজকরা। এমন মানের প্রতিযোগিতায় আরও পেশাদারিত্ব আশা করি।’’ প্রথম রাউন্ডের খেলার আগে এই ঘটনায় মনঃসংযোগ বিঘ্নিত হয় নারায়ণনের। চেক প্রজাতন্ত্রের গ্র্যান্ডমাস্টার ডেভিড নাভারার কাছে হেরে গিয়েছেন। তাঁর মতে, খেলোয়াড়রা যাওয়ার আগেই প্রতিযোগিতা স্থলের সব কিছু ভাল ভাবে পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। তা হলে খেলোয়াড়দের হেনস্থা হতে হয় না।
তাঁর ক্ষোভপ্রকাশের পর বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে ফিডে। সংস্থার সিইও এমিল স্তোভস্কি বলেছেন, ‘‘ঘটনাটি অনভিপ্রেত। ওর খারাপ অভিজ্ঞতার জন্য আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। যদিও এটা ফিডের প্রতিযোগিতা নয়। আমরা শুধু বুন্দেশলিগা দাবা লিগের আয়োজকদের ফিডের প্রোটোকল মেনে চলার অনুরোধ করতে পারি। নিরাপত্তার কারণে দাবাড়ুদের পোশাক বা জুতো খুলে এ ভাবে পরীক্ষা না করার অনুরোধ করতে পারি। তেমন গুরুতর কিছু হলে অন্য জায়গায় সকলের আড়ালে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করা যেতে পারে।’’