দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটকিপার কুইন্টন ডিকক-কে ফিরিয়ে দিয়ে বিরাট কোহালিদের উচ্ছ্বাস। শনিবার সেঞ্চুরিয়নে। ছবি: এপি
সেঞ্চুরিয়ন পার্কে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টে ভারতের প্রথম একাদশ দেখে সমালোচনার ঝড় উঠেছে চর্তুদিকে। শুরুর দিকে আমিও খানিকটা অবাক যে হইনি, তা নয়। তখন মনে হচ্ছিল, ০-১ পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় টেস্টে ভুবনেশ্বর কুমার-কে বাদ দিয়ে নামার অর্থ কী? কেন ইশান্ত শর্মাকে প্রথম দলে রাখা হল? কেন অজিঙ্ক রাহানে-কে দলের বাইরে রাখা হচ্ছে? এই প্রশ্নগুলিই তখন মনে আসছিল।
ম্যাচের শুরুতেও দক্ষিণ আফ্রিকার টপ অর্ডার ব্যাটিং বিক্রম দেখাচ্ছিল। স্বভাবতই তখন মনে হচ্ছিল, প্রথম টেস্টের মতোই দ্বিতীয় টেস্টেও না ভারত প্রথম দিন থেকেই ব্যাকফুটে চলে যায়! কিন্তু ক্রিকেট এমনই এক অনিশ্চয়তার খেলা যে, দিনের শেষে স্কোরবোর্ড দেখার পরে মনে হচ্ছে, কেপ টাউনের মতো পরিস্থিতি সেঞ্চুরিয়নে হবে না। বরং ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা এই পিচে অনেক স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে পারবে।
কেন? তার কারণ, পিচে বল পড়ে সে ভাবে নড়ছে না। ফলে এই পিচে ভার্নন ফিল্যান্ডারের মতো ‘রহস্যময়’ সুইং হাতে কেউ বিভীষিকা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের কাছে। উল্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় যা সচরাচর দেখা যায় না, সেটাই হতে দেখলাম। তা হল, প্রথম দিন থেকেই আর. অশ্বিনের বল ঘুরছে। যা ভারতীয় দলের মুখের হাসি চওড়া করতে পারে। কেবল কাগিসো রাবাডা বা মর্নি মর্কেলের গতি আর বাউন্সটা সামলে দিতে পারলেই বিরাট কোহালির দলের ব্যাটসম্যানদের অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
চা পানের বিরতির সময় স্কোরবোর্ড দেখে মনে হচ্ছিল প্রথম দিনের শেষে দক্ষিণ আফ্রিকা না চারশোর কাছাকাছি চলে যায়। দক্ষিণ আফ্রিকার টপ অর্ডারের রান দেখেই বোঝা যাচ্ছিল ইশান্ত শর্মা, মহম্মদ শামি-রা গতি বা বাউন্সে সমস্যায় ফেলতে পারেনি বিপক্ষকে। কিন্তু সেখান থেকে দিনের শেষে ২৬৯-৬। যা দেখে বলতেই হচ্ছে, দিনের শুরুটা ভাল না হলেও শেষটা কিন্তু ভালই হয়েছে। ফলে ম্যাচটা ভারতের দিকে এখনও প্রবল ভাবেই আছে। এই পিচে রবিবার সকালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে যদি ৩০০-৩২৫ রানের মধ্যে আটকে রাখা যায়, তা হলে কিন্তু ভারত এই টেস্টে চালকের আসনে বসে পড়বে। কেবল ব্যাট করতে নেমে বিরাট কোহালি, চেতেশ্বর পূজারা, রোহিত শর্মাদের গতিটা সামলে দিতে হবে। তা হলেই রান আসবে। দক্ষিণ আফ্রিকায় এ রকম পিচ অতীতে পায়নি ভারতীয় দল। এ বার সেই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে ব্যাট করার সময়।
অশ্বিন প্রথম টেস্টে পিচ থেকে সে ভাবে কোনও সহযোগিতা পায়নি। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টে বল পিচে প্রথম দিন থেকেই ঘুরতে শুরু করার পর ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে ওকে। তবে এ ক্ষেত্রে ভাগ্যও ভারতকে সহায়তা করেছে এ দিন। ২৪৬-৩ থেকে হার্দিক পাণ্ড্য-র দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ের সৌজন্যে দু’দু’টো রান আউট। আর সেখান থেকেই দক্ষিণ আফ্রিকা হয়ে যায় ২৫১-৬। ম্যাচটা দেখে সাত বছর আগে ইডেনে দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম ভারত টেস্ট ম্যাচের কথা মনে পড়ছে। সে বার ইডেনে ২১৮-১ থেকে ২৯৬ অলআউট হয়ে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। সেঞ্চুরিয়ন পার্কেও দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং অনেকটা সে রকমই হল।
আমার মতে, এই পিচে অশ্বিনের সঙ্গে আরও এক জন স্পিনার হিসেবে রবীন্দ্র জাডেজাকে জুড়ে দিলে ভাল হতো। তা হলে আরও চাপ বাড়ত ফ্যাফ ডুপ্লেসিদের উপরে।