প্রতীকী ছবি।
অ্যাথলিটরাই নাকি অ্যাথলিটদের ডোপিং করাচ্ছেন। সেটাও চলছে ভারতে। এমনই মারাত্মক অভিযোগ অঞ্জু ববি জর্জের। এই প্রাক্তন অ্যাথলিটের অভিযোগ, বিদেশে ভারতীয় অ্যাথলিটরা যখন প্রশিক্ষণ নিতে যান, ফেরার সময় অনেকে পারফরম্যান্স বর্ধক নিষিদ্ধ ওষুধ নিয়ে আসেন এবং অন্যদের দেন।
অঞ্জু এই অভিযোগের মঞ্চ হিসেবে একেবারে সিংহের গুহা বেছে নিয়েছেন।
রবিবার অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার (এএফআই) বার্ষিক সাধারণ সভায় কর্তা-ব্যক্তিদের সামনে এই অভিযোগ করেছেন অঞ্জু। বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে একমাত্র পদক জয়ী ভারতীয় অ্যাথলিট বর্তমানে এএফআই-এর সহ-সভাপতি। তাঁর মুখে এমন মারাত্মক অভিযোগ শুনে বৈঠকে উপস্থিত অনেকে স্তম্ভিত।
অঞ্জু বলেছেন, ‘‘ডোপ পরীক্ষায় অ্যাথলিটদের শরীরে এমন কিছু নিষিদ্ধ ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে যেগুলো ভারতে পাওয়া যায় না। ওই অ্যাথলিটদের বেশির ভাগই বিদেশে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসছে।’’ ২০০৩ সালে প্যারিসে আয়োজিত বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে লং জাম্পে ব্রোঞ্জ জয়ী অঞ্জু বলেছেন, ‘‘কোচেরাই শুধু তরুণ অ্যাথলিটদের হাতে নিষিদ্ধ ওযুধ তুলে দিচ্ছেন, বিষয়টা এরকম নয়। কিছু অ্যাথলিট বিদেশে প্রশিক্ষণ নিতে যাচ্ছে। সেখান থেকে তারা পারফরম্যান্স বর্ধক ওযুধ সংগ্রহ করছে এবং দেশে ফিরে অন্যদেরও দিচ্ছে।’’
অঞ্জুর অভিযোগ মেনে নিয়েছেন এএফআই সভাপতি আদিল সুমারিওয়ালাও। অ্যাথলিটদের কড়া বার্তা দিয়ে সুমারিওয়ালা বলেছেন, ডোপিং কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। অ্যাথলিটদের আগের থেকে আরও কঠিন ডোপ পরীক্ষা দিতে হবে।
এএফআই সভাপতি বলেছেন, ‘‘কিছু দিন আগে ন্যাশনাল অ্যান্টি-ডোপিং এজেন্সির (নাডা) প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছি। ওঁরা আরও বেশি সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা করবেন বলে জানিয়েছেন। ডোপ পরীক্ষার জন্য নাডা আরও ১১৫ জন আধিকারিককে নিয়োগ করেছে। রাজ্য এবং জেলা স্তরের প্রতিযোগিতাগুলিতেও ডোপ পরীক্ষা করবেন তাঁরা।’’ সুমারিওয়ালা আরও বলেছেন, ‘‘জেলা, রাজ্য, জুনিয়র এবং বিভাগীয় স্তরের প্রতিযোগিতাতেও ডোপ পরীক্ষা করার অনুরোধ করেছি নাডার প্রতিনিধিদের। অ্যাথলিটদের বলতে চাই, তোমরা এখুনি এই সব বন্ধ কর।’’ এএফআই সভাপতি জানিয়েছেন, এই ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে জাতীয় শিবিরের বাইরে এবং একটু নিচুস্তরে।
এমন ঘটনার জন্য সরকারি বেতনভুক কোচেদের একাংশের দিকেই আঙুল তুলেছেন সুমারিওয়ালা। তিনি বলেছেন, ‘‘কোচদের সাধারণত তিন মাস অন্তর বদলি করা হয়। কিন্তু তাঁরা যদি কোনও জুনিয়র অ্যাথলিটকে নিষিদ্ধ ওষুধ দিয়ে পদক জেতান, তা হলে সেই কোচের বদলি বন্ধ করে দেওয়া হবে।’’ রবিবারের বৈঠকে বিরক্তির সুরে তিনি দোষারোপ করেছেন ক্রীড়াবিদদের একাংশের মানসিকতাকেও। বলেছেন, ‘‘ডোপ পরীক্ষায় ধরা পড়লে সকলেই দাবি করে, না জেনেই তারা নিষিদ্ধ ওষুধ খেয়েছে। ওরা একদম সৎ। কিন্তু আমি বলছি, ৯৯ শতাংশ অ্যাথলিট জেনে বুঝেই পারফরম্যান্স বর্ধক ওযুধ খায়।’’
অতীতে অনেক অ্যাথলিটকে ডোপিংয়ের অপরাধে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তাতেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এই বিষয়টি নিয়েও নিজের উদ্বেগ গোপন করেননি সুমারিওয়ালা। বৈঠকে বলেছেন, ‘‘আমি চেয়েছিলাম ডোপিংকে অপরাধ হিসেবে ধরা হোক। অপরাধীদের কারাবাসের শাস্তি হোক। এর থেকে বেশি আর কী করতে পারি আমরা? পুলিশের মতো ক্ষমতা তো আমাদের হাতে নেই।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।