বিনেশ ফোগাট। —ফাইল চিত্র।
কুস্তি থেকে অবসর নিয়ে রাজনীতিতে যোগ দিয়ে একের পর এক আক্রমণ করে চলেছেন বিনেশ ফোগাট। দিন সাতেক আগে মুখ খুলেছিলেন ভারতীয় অলিম্পিক্স সংস্থার প্রধান পিটি ঊষাকে নিয়ে। এ বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করলেন বিনেশ। প্যারিস অলিম্পিক্সে কুস্তির ফাইনালে ওঠার পরে মোদী কেন তাঁকে ফোন করেননি, সেই প্রশ্ন তুলেছেন ভারতীয় কুস্তিগির।
প্যারিসে পদকজয়ী প্রত্যেক খেলোয়াড়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই প্রসঙ্গ তুলেছেন বিনেশ। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী কখন টুইট (বর্তমানে এক্স) করলেন? আমি ফাইনালে ওঠার এক দিন পরে। উনি তো সকলকে সঙ্গে সঙ্গে ফোন করছিলেন। পরের দিনই ওজন নিয়ে ঘটনাটা ঘটল। আমি ফাইনালে ওঠার পরে কেন আমাকে প্রধানমন্ত্রী ফোন করলেন না?”
বিনেশ প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করলেও একটা বিষয় স্পষ্ট, প্যারিসে তাঁদের সঙ্গেই প্রধানমন্ত্রী কথা বলেছেন যাঁরা পদক জিতেছেন। পদক জেতার আগে কারও সঙ্গে কথা হয়নি তাঁর। অলিম্পিক্স শেষে ভারতীয় খেলোয়াড়েরা দেশে ফেরার পরে সকলের সঙ্গে দেখা করেছেন মোদী। সেই দলে ছিলেন না বিনেশ।
যৌন হেনস্থার অভিযোগ ওঠা ভারতীয় কুস্তি সংস্থার তৎকালীন সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের বিরুদ্ধে তাঁরা যখন আন্দোলন করছেন তখনও প্রধানমন্ত্রী তাঁদের পাশে দাঁড়াননি বলে অভিযোগ করেছেন বিনেশ। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী যদি সত্যিই খেলাধুলো ও খেলোয়াড়দের ভালবাসতেন তা হলে অত বড় ঘটনার পরেও উনি চুপ করে থাকতে পারতেন না। উনি সব কথা জানার পরেও বলেছেন যে কিছু জানেন না। এটা খেলোয়াড়দের প্রতি ভালবাসা প্রদর্শন নয়।”
অলিম্পিক্সে ফাইনালের দিন সকালে ওজন বেশি থাকায় বাতিল করা হয় বিনেশকে। তার পরেই অসুস্থ হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। সেখানে তাঁকে দেখতে গিয়েছিলেন ঊষা। এই পুরো ঘটনাকে লোকদেখানো বলে অভিযোগ করেছেন বিনেশ। তিনি বলেন, “আমাকে বলা হয়েছিল ঊষা ম্যাডাম আসবেন। আমি তখনও ঘোরের মধ্যে ছিলাম। আমাকে জোর করে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। উনি এসে ছবি তোলেন। সেটা পরে সকলকে দেখিয়ে বলা হয় যে আমি ভাল আছি। কিন্তু আমি ভাল ছিলাম না। সবটাই লোকদেখানো ছিল।”
প্যারিসে তাঁর সঙ্গে রাজনীতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিনেশ। তাঁর কথায়, “দরজার পিছনে অনেক রাজনৈতিক খেলাই হয়ে থাকে। একই ভাবে, ওখানেও (প্যারিস) রাজনীতি হয়েছে। তাই জন্য ভেঙে পড়েছিলাম। অনেকেই আমাকে বলেছে কুস্তি না ছাড়তে। কিন্তু কেন খেলা চালিয়ে যাব বলতে পারেন? চারদিকে রাজনীতি।”
দেশে ফেরার পরে তাঁকে আর্থিক পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সেই পুরস্কার তিনি এখনও পাননি বলে অভিযোগ বিনেশের। তিনি বলেন, “গোটা দেশ ভেবেছিল আমি সোনা জিতব। সরকার যদি বলত যে সোনাজয়ী খেলোয়াড়দের যে পুরস্কারমূল্য দিচ্ছি সেটাই তোমাকে দেব, তা হলে বুঝতাম মন থেকে সেই কথা বলা হয়েছে। প্রথমে শুনলাম একটা অনুষ্ঠান হবে। আমি পুরস্কারমূল্য ফিরিয়ে দেব বলে ঠিক করেছিলাম। পরে শুনলাম আমার অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকে যাবে। সেটাও আসেনি। অলিম্পিক্সে অংশ নিলে সকলে যে ১৫ লক্ষ টাকা করে পায় সেটাই পেয়েছি।”
ভারতে ফিরে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন বিনেশ। দাঁড়াবেন হরিয়ানার বিধানসভা নির্বাচনে। তাঁর এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেপথ্যেও রয়েছে বড় কারণ। তিনি মনে করেন, ক্ষমতায় থাকা লোকেদের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে সেই রকমই ক্ষমতা দরকার। বিনেশ বলেন, “সিস্টেমের মধ্যে ঢুকতে হবে। ব্রিজভূষণ ক্ষমতায় ছিল বলেই এখনও টিকে আছে। তাই ক্ষমতাশালী হতে হবে। ক্ষমতা না থাকলে সব লড়াই জলে যাবে। ধর্নায় থাকাকালীন কংগ্রেস আমাদের অনেক সমর্থন করেছে। তাই সেখানেই যোগ দিয়েছি। এটা নিয়তি ছিল। তাই হয়েছে।”