প্যারালিম্পিক্সে পদক জেতার পরে মোনা আগরওয়াল। ছবি: এক্স।
১৪ বছর আগে বাড়ি ছেড়েছিলেন তিনি। সন্তানদের থেকে দূরে থাকতে হয়েছে। তাঁর এই সিদ্ধান্ত মানতে পারেনি সন্তানেরা। কিন্তু নিজের লক্ষ্য থেকে সরেননি মোনা আগরওয়াল। প্যারিসে প্যারালিম্পিক্সে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে ব্রোঞ্জ জিতেছেন ভারতের ক্রীড়াবিদ। পদক জেতার পরে ৩৭ বছরের মোনার মনে পড়ছে গত ১৪ বছরের পরিশ্রমের কথা।
রাজস্থানের বাসিন্দা মোনার পা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল পোলিয়োতে। তাতে তিনি দমেননি। যদিও শুরুতে খেলাধুলোয় ততটা আগ্রহ ছিল না। ২৩ বছর বয়সে তাঁর মনে হয়েছিল, ঘরে বসে না থেকে খেলাধুলোয় অংশ নেবেন। কী খেলবেন, তখনও জানতেন না। সেই কারণেই বাড়ি ছাড়েন। শট পাট, ভারোত্তোলন, ভলিবল সব খেলেছেন। অবশেষে শুটিংয়ে মন দেন। এই বারই প্রথম প্যারালিম্পিক্সে নেমেছেন তিনি। ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের ফাইনালে ২২৮.৭ স্কোর করে ব্রোঞ্জ জিতেছেন তিনি।
এই ১৪ বছর পরিবার, সন্তানদের থেকে দূরে থেকেছেন তিনি। সেটাই তাঁকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছে। পদক জেতার পরে মোনা বলেন, “সন্তানদের বাড়িতে রেখে বেরিয়েছিলাম। যখনই ওদের সঙ্গে কথা হত ওরা বলত, ‘মা, তুমি রাস্তা ভুল করে ফেলবে। জিপিএস দেখে ফিরে এসো।’ খুব কষ্ট হত। আগে রোজ ওদের সঙ্গে ভিডিয়ো কলে কথা বলতাম। পরে সপ্তাহে এক দিন করে কথা বলতাম। আমার একটাই লক্ষ্য ছিল। দেশের হয়ে পদক জিততে হবে।”
শুধু পরিবারের থেকে দূরে থাকা নয়, আর্থিক সমস্যাতেও পড়তে হয়েছে মোনাকে। সেই সব চ্যালেঞ্জ সামলেছেন তিনি। মোনা বলেন, “আর্থিক দিক থেকেও অনেক সমস্যা হয়েছে। এই খেলায় অনেক খরচ। কী ভাবে সব সামলাব, বুঝতে পারতাম না। কিন্তু হাল ছাড়িনি। শেষ পর্যন্ত জিতেছি। শারীরিক সমস্যা থাকলেও মানসিক ভাবে নিজেকে ভেঙে পড়তে দিইনি। নিজের সেরাটা দিয়েছি। তারই ফল পেয়েছি।”
এখানেই থেমে থাকতে চান না মোনা। আরও এগিয়ে যেতে চান তিনি। যে খেলা তাঁকে পরিচিতি দিয়েছে সেই খেলায় দেশকে আরও পদক এনে দিতে চান। মোনা জানেন, এর পর তাঁর সন্তানেরা আর তাঁকে বাড়ি ফিরতে বলবে না। তারাও বুঝে গিয়েছে, মা কী করতে পারে। সন্তানদের ভালবাসা নিয়েই আরও এগিয়ে যেতে চান মোনা।