শাসন: রবিবার ভারতের জয়ের দুই কারিগর। ৫০ বলে অপরাজিত ৫৭ রান রাহুলের। (ডান দিকে) ৩৩ বলে ৪৪ রান করে যোগ্য সঙ্গত শ্রেয়সের। ছবি-এপি, এএফপি।
১২ হাজার কিলোমিটার উড়ে গিয়ে নিউজ়িল্যান্ডে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। তার পরের ৪৮ ঘণ্টায় ফের আরও একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে দু’ক্ষেত্রেই বিজয়ী দলের নাম ভারত! পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে রবিবার সাত উইকেটে জিতে এই মুহূর্তে ২-০ এগিয়ে গেল ভারত।
এ দিন টস জিতে নির্ধারিত ২০ ওভারে নিউজ়িল্যান্ড করে ১৩২-৫। জবাবে ১৭.৩ ওভারে ১৩৫-৩ করে ম্যাচ জিতে নেয় ভারত।
সমস্ত প্রতিকূলতা উড়িয়ে ভারতীয় দলের এই ধারাবাহিক ভাবে ভাল পারফরম্যান্স বোঝায় দলের ফিটনেস কতটা উচ্চমানের! ফিটনেসে চনমনে অধিনায়ক বিরাট কোহালি ফিল্ডিং করার সময়ে যে উজ্জীবিত ভাবে খেলে, তাতেই দলের বাকিরা প্রেরণা পায়। বিপক্ষ ইনিংসের শেষ দিকের ওভারে বিরাট দাঁড়ায় লং অনে। কারণ, ওই সময়ে ব্যাটসম্যানেরা ওই অঞ্চল দিয়েই বেশি বল মারে। বিরাট তখন ব্যস্ত থাকে রান বাঁচাতে। যা দেখে উজ্জীবিত হয় দলের বাকিরাও। এই ম্যাচে ১৭.৩ ওভারে যশপ্রীত বুমরার বলে লং অনে দাঁড়িয়ে বিরাট একটা ক্যাচ ফেলেছে। যা প্রমাণ করে বিরাটও একজন মানুষ। ও যন্ত্র নয়।
বিরাট এ দিন ব্যাটে বড় রান না পেলেও যে দুরন্ত ফিল্ডিং, বোলিং পরিবর্তন করল তা অনবদ্য। প্রথম ম্যাচেই কোহালি দেখে নিয়েছিল নিউজ়িল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন সুইপ করার সময়ে তুলে মারে। ফলে বল বাউন্ডারির ৮-১০ গজ আগে পড়ে চার হয়। এ দিন বিরাটকে দেখলাম ১৩তম ওভারে উইলিয়ামসন ব্যাট করার সময়ে জাডেজাকে বল করতে নিয়ে এল। আর যুজবেন্দ্র চহালকে দাঁড় করাল ডিপ স্কোয়ার লেগ বাউন্ডারির আট দশ গজ আগে। দু’বল পরেই দেখলাম জাডেজাকে সুইপ করতে গিয়ে চহালের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরল উইলিয়ামসন।
আরও পড়ুন: রান তাড়া শিখিয়েছে বিরাট, বার্তা শ্রেয়সের
আমার মতে, এই মুহূর্তে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে শেষের দিকের ওভারে অন্যতম বিপজ্জনক বোলারের নাম যশপ্রীত বুমরা। প্রথম ম্যাচে ১৮তম ওভারে বল করতে এসে দিয়েছিল চার রান। এ দিন দিল তিন রান। সুতরাং পরিসংখ্যানই ওর কার্যকারিতা কতটা তা বুঝিয়ে দিচ্ছে। বুমরার বিশেষত্ব হল, বল করার সময়ে ওর বাঁ হাতের ‘লোডিং’টা দুর্দান্ত অবস্থানে থাকে। ফলে ওর কোন বলটা জোরে হবে আর কোন বলটা আস্তে সেটা ধরতে পারা যায় না।
আরও পড়ুন: গড়াপেটার বিস্ফোরক অভিযোগ, কোচকে বরখাস্ত করল ট্রাউ
রোহিত শর্মা ও বিরাট বড় রান না পেলেও ভারত এই ম্যাচটাও জিতল সেই কে এল রাহুল ও শ্রেয়স আইয়ারের ব্যাটিং বিক্রমে। শ্রেয়স স্পিনারদের বিরুদ্ধে সামনের বল খুঁজে মিড অফ ও মিড অনের উপর দিয়ে মাঠের বাইরে পাঠায়। এ দিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু ২১ বলে যখন সাত রান বাকি তখন ওর আউট হওয়াটা হতাশাজনক।
সব শেষে বলতে হবে কে এল রাহুলের কথা। মনে পড়ছে না বিশ্ব ক্রিকেটে কবে এ রকম দেখা গিয়েছে, দুই উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান বসে রয়েছে। আর কাজ চালানোর মতো কিপার-ব্যাটসম্যান সাফল্যের সঙ্গে খেলে যাচ্ছে। রাহুল আগের চেয়ে মনঃসংযোগে অনেক বেশি উন্নতি করেছে। এখন খেলাটা শেষ করে ফিরছে। পেস বা স্পিন বল যে রকমই হোক সাবলীল ভাবে ব্যাট করে যাচ্ছে। প্রথম ম্যাচের পরে এ দিনও অর্ধশতরানের ইনিংস ওর ব্যাট থেকে। রবিবার বেশ কিছু দর্শনীয় শট ও মেরেছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হামিস বেনেটের যে বলে কভারের উপর দিয়ে চার মেরে ও অর্ধশতরান পূর্ণ করল। সব মিলিয়ে ৭১তম প্রজাতন্ত্র দিবসের দিনে রাহুল ভারতীয় ক্রিকেটের বর্তমান ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ হয়ে দেখা দিল। সিরিজে ২-০ এগিয়ে। কোহালির দল যে ছন্দে এগোচ্ছে, তাতে আগামী বুধবার সরস্বতী পুজোর দিনে হ্যামিল্টনেই ভারতের সিরিজ জয়ের প্রবল সম্ভাবনা দেখছি।