রায়ডুর সেই বিতর্কিত আউটের মুহূর্ত। (ইনসেটে) আম্পায়ার ইনামুল হক।
এক যুদ্ধ শেষ। অন্য যুদ্ধ শুরু।
বাংলাদেশ সফরোত্তর ভারতীয় শিবিরের অবস্থা বর্ণনা করতে গেলে এটাই লিখতে হবে। যেখানে সিরিজ শেষ হওয়ার পরেও প্রতিপক্ষ থাকছে। এবং যে প্রতিপক্ষের নাম মোটেও মাশরফি মর্তুজার বাংলাদেশ নয়।
তিনি সদ্য সমাপ্ত ওয়ান ডে সিরিজের ফিল্ড আম্পায়ার। এবং ঘটনাচক্রে তিনিও বাংলাদেশের।
তিনি ইনামুল হক। যাঁর বিরুদ্ধে এখন ভারতীয় বোর্ডের মাধ্যমে আইসিসির দ্বারস্থ হতে চাইছে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট।
ঠিক কী হয়েছে?
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ওয়ান ডে সিরিজে এই সংশ্লিষ্ট আম্পায়ারের বিরুদ্ধে ভারতীয় অসূয়া বেশ কিছু দিন ধরেই চলছিল। ভারতীয় শিবির অভিযোগ করছে যে, বেশ কয়েকটা অদ্ভুত সিদ্ধান্তের শিকার হয়ে তাদের ভুগতে হয়েছে। কিছু ন্যায্য ডেলিভারিকে নাকি ‘নো’ ডেকে দেওয়া হয়েছে। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে কোহলির একটা ন্যায্য ক্যাচ ধরার পরেও বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানকে আউট দেওয়া হয়নি। কিন্তু তার পরেও চরম রাস্তা ধরার কথা ভাবেনি টিম ম্যানেজমেন্ট। এ বার যা ভাবছে।
কারণ বুধবার অম্বাতি রায়ডুর সঙ্গে যা ঘটেছে, তাকে অবিশ্বাস্য বলছে টিম ম্যানেজমেন্ট।
ভারতীয় ইনিংসের চুয়াল্লিশতম ওভার চলছে তখন। মাশরফি বল করছেন। আচমকাই মাশরফির বলে অফস্টাম্প থেকে সরে গিয়ে ডে’ভিলিয়ার্সের কায়দায় ফাইন লেগ দিয়ে তাঁকে ফেলে দিতে যান রায়ডু। কিন্তু বল ব্যাটে না লেগে প্যাড ছুঁয়ে কিপারের হাতে চলে যায়। এবং রায়ডু-ধোনিকে বিস্ফারিত করে কট বিহাইন্ডের আবেদনে আম্পায়ার আঙুল তুলে দেন! অথচ ব্যাট আর বলের মধ্যে ততটাই দূরত্ব, যতটা কি না ঢাকা আর মীরপুরে!
যার পর মোটামুটি ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন রায়ডু। আগুনে চোখ নিয়ে দীর্ঘক্ষণ আম্পায়ারের দিকে তাঁকে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায়। নন-স্ট্রাইকার প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা ধোনিকেও অবাক দৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। শোনা গেল, ড্রেসিংরুমে ফেরার পরেও রায়ডুকে শান্ত করা যাচ্ছিল না। প্রবল আক্রোশে ব্যাট ঠুকতে থাকেন ড্রেসিংরুমে। কোনওক্রমে তাঁকে শান্ত করেন টিম ডিরেক্টর রবি শাস্ত্রী। ম্যাচ শেষ পর্যন্ত ভারত জিতে যাওয়ায় রায়ডুকে শান্ত করা সম্ভব হয়েছে বটে, কিন্তু আম্পায়ারিং ঘিরে টিমের ক্রমবর্ধমান অসন্তোষকে শান্ত করা সম্ভব হয়নি।
এমনিতেই পর্যাপ্ত ফ্লাইট বুকিং না পাওয়ায় টিম ইন্ডিয়ার সবার এ দিন দেশে ফেরা হল না। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি এবং বিরাট কোহলি শুধু ফিরে গেলেন। কিন্তু তার আগেই ইনামুল হকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়ে গেল। বলা হচ্ছে, মাঠে প্লেয়ার অসন্তোষ দেখালে তাকে শাস্তি দেওয়া হয়, তা হলে একই আম্পায়ার পরের পর ম্যাচে ভুগিয়ে গেলে তার ক্ষেত্রে কেন কিছু করা হবে না? রায়ডুর বিরুদ্ধে হাস্যকর আউটের সিদ্ধান্ত দেওয়া তো বটেই, গোটা সিরিজেই ঘটে যাওয়া আরও বেশ কিছু অদ্ভুত সিদ্ধান্তকে তুলে আনা হচ্ছে। যেমন বলা হচ্ছে, দ্বিতীয় ম্যাচে বিরাট কোহলি ঠিকঠাক ক্যাচ ধরার পরেও কোন যুক্তিতে বাংলাদেশ ওপেনার তামিম ইকবালকে আউট দেওয়া হল না, সেটা একমাত্র আম্পায়াররাই বলতে পারবেন। কারণ ড্রেসিংরমে প্রাপ্ত ম্যাচের ডাইরেক্ট ফিড থেকেই নাকি পরিষ্কার যে, তামিম আউট ছিলেন। কোহলি নাকি তার পর জানতেও চেয়েছিলেন, কেন তামিমকে আউট দেওয়া হল না। হক তখন নাকি সদুত্তর দিতে পারেননি। পুরোটাই ঠেলে দেন তৃতীয় আম্পায়ারের দিকে। আরও একটা ঘটনার কথা বলা হচ্ছে। দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ ইনিংসের শেষ দিকে সাকিব আল হাসান ফিল্ড আম্পায়ার রড টাকারের অনুমতি না নিয়েই মাঠে ড্রিঙ্কস ডেকে নেন। যা নিয়েও নাকি হককে টুঁ শব্দ করতে শোনা যায়নি বলে অভিযোগ। ভারতীয় শিবিরের বক্তব্য হল, সাকিব সে দিন যা করেছেন, অপরাধ। একশো শতাংশ ম্যাচ ফি কাটা যাওয়া উচিত।
যা খবর, তাতে টিম ম্যানেজারকে নাকি ধোনিরা বলে দিয়েছেন, ব্যাপারটা বোর্ডকে জানাতে। যাতে এমন বিশ্রী আম্পায়ারিংয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে আইসিসির কাছে পৌঁছে দেওয়া যেতে পারে। সব দেখলে মনে হবে, বাইশ গজের ভারত বনাম বাংলাদেশ ওয়ান ডে সিরিজ শেষ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু বাইশ গজের বাইরেরটা এখনও হয়নি।
প্রথম বলটা পড়ল সবে!