শট নির্বাচনে গলদই চাপে ফেলছে পন্থকে

রাবাডা-কুইন্টনদের দাপটে সিরিজ অমীমাংসিত

বিরাট বলে দিয়েছিল, এই সিরিজে তরুণদের সুযোগ দিয়ে দেখতে চায়। বিশেষ করে সবার নজর ছিল ঋষভ পন্থের উপরে। তরুণ এই উইকেটকিপার ব্যাটস্যান কিন্তু আবারও ব্যর্থ হল। ঋষভকে বুঝতে হবে, বারবার সুযোগ হাতছাড়া করলে চলবে না। 

Advertisement

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:২০
Share:

সমতা: সিরিজ জেতা হল না। রবিবার বেঙ্গালুরুতে টি-টোয়েন্টি ট্রফি নিয়ে কোহালি এবং ডি কক। এপি

একটা অদ্ভুত মিল দেখলাম মোহালি আর এই বেঙ্গালুরুর দুটো টি-টোয়েন্টি ম্যাচের মধ্যে। বুধবার মোহালিতে কাগিসো রাবাডার প্রথম বলটা ওয়াইড ছিল, এখানেও তাই। মোহালিতে ওয়াশিংটন সুন্দরের বলে কভার ড্রাইভে চার মেরে শুরু করেছিল কুইন্টন ডি কক। চিন্নাস্বামীতেও তাই হল।

Advertisement

তবে মিলের এখানেই শেষ। মোহালিতে দাপট দেখিয়েছিল ভারত। চিন্নাস্বামীতে প্রথমে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের সামনে এবং পরে কুইন্টন-ঝড়ে হেরে গেল বিরাট কোহালির দল। টি-টোয়েন্টি সিরিজও শেষ হল ১-১ অবস্থায়।

বিরাট বলে দিয়েছিল, এই সিরিজে তরুণদের সুযোগ দিয়ে দেখতে চায়। বিশেষ করে সবার নজর ছিল ঋষভ পন্থের উপরে। তরুণ এই উইকেটকিপার ব্যাটস্যান কিন্তু আবারও ব্যর্থ হল। ঋষভকে বুঝতে হবে, বারবার সুযোগ হাতছাড়া করলে চলবে না।

Advertisement

পন্থের সব চেয়ে বড় সমস্যা হল, ওর শট নির্বাচন। যা ওকে বারবার বিভ্রান্ত করছে। পন্থ কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না, কোন বলটায় বড় শট খেলবে। এ দিনও ঠিক তাই হল। বাঁ-হাতি স্পিনার বিয়র্ন ফোর্তানের বলটা তুলে মারতে গিয়ে লং অফে ক্যাচ দিয়ে দিল। বলটা স্পিন করেনি। অফস্টাম্পের বাইরে থাকার ফলে পন্থ পুরোপুরি ব্যাটে পায়নি। শটটা চলে যায় ফিল্ডারের হাতে।

পন্থকে এও বুঝতে হবে, আরও কয়েক জন উইকেটকিপার কিন্তু নজরে আছে নির্বাচকদের। যেমন ঈশান কিসান, সঞ্জু স্যামসনরা। ওরাও ভাল ব্যাটসম্যান। আমার তো মনে হয়, সাদা বলের ক্রিকেটে পন্থকে দু’একটা ম্যাচে বিশ্রাম দিয়ে বাকিদের দেখা যেতে পারে। বিশ্রামটা পেলে হয়তো মানসিক ভাবে তরতাজা হয়ে নামতে পারবে ও।

চিন্নাস্বামী মানে তো আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের মাঠ। অর্থাৎ কোহালির ঘরের মাঠ। এখানে যে রান তাড়া করাটা অনেক সহজ, সেটা বিরাটের চেয়ে আর ভাল কে জানে। ভারত টস জেতার পরে ভেবেছিলাম, আগের ম্যাচের মতো ফিল্ডিং নেবে বিরাট। কারণ ওকে আমরা জানি ‘চেজমাস্টার’ হিসেবে। কিন্তু ভারত অধিনায়ক ব্যাটিং নিল। এর ব্যাখ্যা একটাই। পরের বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে এখন থেকেই সব রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ফেলতে চায় বিরাট। বিভিন্ন পরিস্থিতির মধ্যে দলকে ফেলে দেখে নিতে চায়, কী ভাবে সে সব চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে ছেলেরা।

ভারতের প্রথম তিন ব্যাটসম্যান এ দিন ন’ওভার শেষ হওয়ার আগে ৬৮ রানের মধ্যে ফিরে যায়। যার ফলে পন্থ এবং শ্রেয়স আইয়ারদের সামনে যথেষ্ট সময় ছিল উইকেটে জমে গিয়ে বড় রান করার। কিন্তু দু’জনই উইকেট ছুড়ে দিয়ে চলে এল। আমি ভেবেছিলাম, শ্রেয়স হয়তো এই ম্যাচে চার নম্বরে নামবে। পরে সাংবাদিক বৈঠকে বিরাটও বলে গেল, বিভ্রান্তির জেরে শ্রেয়সের চার নম্বরে নামা হয়নি।

দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা এ দিন অনেক পরিকল্পনা করে বল করেছে। বাঁ-হাতি স্পিনারকে (ফোর্তান) দিয়ে বল শুরু করেছে। রাবাডা প্রথম দিকে মার খেলেও সেটা সামলে দিয়েছে বুয়েরান হেনড্রিক্স। চার ওভারে ১৪ রান দিয়ে দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা হয়েছে হেনড্রিক্সই। ২০ ওভারে নয় উইকেট হারিয়ে মাত্র ১৩৪ রান করার পরে ম্যাচে ফিরতে দ্রুত উইকেট তোলার দরকার ছিল ভারতের। কিন্তু কুইন্টন সেই পরিস্থিতি হতে দেয়নি। ভারতীয় বোলারদের অনায়সে সামলে ৫২ বলে ৭৯ রান করে গেল। নয় উইকেটে ম্যাচ জিতে সিরিজ অমীমাংসিত রাখল দক্ষিণ আফ্রিকা।

পরীক্ষা-নিরীক্ষার এই সিরিজে ভারতের তরুণ ক্রিকেটারদের মধ্যে ভাল নম্বর পেতে পারে দীপক চাহার। ছেলেটা কিন্তু দারুণ উন্নতি করে চলেছে। এত ভাল সুইং করাচ্ছে যে ব্যাটসম্যানদের সমস্যা হয়ে যাচ্ছে। আবার গতি থাকলেও সুইং করাতে না পেরে মার খেয়ে গেল নবদীপ সাইনি।

কোহালি এ দিনও একটা অসাধারণ ক্যাচ ধরল। মিড অন থেকে দৌড়ে এসে সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ে তুলে নিল রিজ়া হেনড্রিক্সের ক্যাচ। বিরাট আগের ম্যাচে রান পেয়েছিল। এই ম্যাচে পেল না। কিন্তু সব দিন বিরাটই ত্রাতার ভূমিকায় দেখা দেবে, এটাও সম্ভব নয়। সে দিনও খেলতে হবে তরুণদের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement