দেশের পিচ নিয়ে বিতর্ক হতেই ফোঁস করে উঠলেন রোহিত। ছবি - টুইটার
চলতি টেস্ট সিরিজে চিপকের বাইশ গজ নিয়ে বিতর্ক চলছেই। একাধিক বিদেশি ক্রিকেটার বিরাট কোহালির ঘূর্ণি পিচ তৈরি করার নীতিকে কটাক্ষ করেছেন। আর এ বার সেই সব ক্রিকেট পণ্ডিতদের এগিয়ে এসে একেবারে মাঠের বাইরে ফেললেন ‘হিট ম্যান’ রোহিত শর্মা। তবে পিচ বিতর্ক ছাড়াও দ্বিতীয় টেস্টে ১৬১ থেকে শুরু করে চোট সারিয়ে দলে ফেরা ও নতুন মোতেরা নিয়েও মুখ খুললেন রোহিত। তাঁর সাংবাদিক সম্মেলন পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল...
ভারতীয় উইকেট নিয়ে বিদেশিদের টিপ্পনীর জবাবঃ আমি তো উইকেট নিয়ে একদম ভাবনাচিন্তা করি না। সেটা নিয়ে বাড়তি মন্তব্যও করি না। আমরা শুধু ক্রিকেট খেলি। তবে একটা কথা বলতে চাই, দুটো দল তো একই পিচে খেলে। তাহলে আমাদের দেশের পিচ নিয়ে এত অহেতুক কথা কেন হয়! তবে আমাদের দেশে অনেক বছর ধরে এমন পিচ তৈরি করা হয়। এতে নতুন তো কিছু নেই। তাই আমার মনে হয় ঘূর্ণি পিচ বানানোর মানসিকতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা উচিত নয়। সব দেশ ঘরের পরিবেশের সুবিধা নেয়। আমরা বাইরে খেলতে গেলে কি আমাদের মত করে পিচ তৈরি করা হয়ে থাকে? তখন তো কেউ আমাদের নিয়ে ভাবেন না। তাহলে আমরাই বা কেন ভাবতে যাব! আমাদের যেটা ভাল মনে হবে সেটা করব। আমাদের দলের যেটায় সুবিধা হবে সেটাই করব। না হলে আইসিসি’র কাছে গিয়ে নালিশ করুন। যাতে ঘরের মাঠে সুবিধা নেওয়ার ব্যাপারটা আইসিসি তুলে দেয়। সেটা তো আইসিসি করবে না। তাহলে সবাই ঘরের মাঠের সুবিধা নেবে। এতে অন্যায়ের কিছুই নেই। যে ভাল খেলবে সে জিতবে। তাই পিচ নিয়ে বেশি কথা না বলে ব্যাটসম্যান-বোলারদের লড়াই নিয়ে কথা বলা ভাল। যেমন পিচ পাওয়া যাবে তেমনভাবে চিন্তা করা উচিত। সেই জন্য দেশের বাইরে গেলে আমরা কিন্তু পিচ নিয়ে অহেতুক চর্চা করি না।
দিন-রাতের টেস্টে গোধূলি বেলা ফ্যাক্টরঃ গোধূলির সময় গোলাপি বল খেলতে অসুবিধা হয়। এটা সতীর্থদের কাছ থেকে শুনেছি। আসল কথা একজন ব্যাটসম্যান সেই সময় কীভাবে চিন্তা করছে সেটা তার উপর নির্ভর করে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গোলাপি বলে টেস্ট খেলার সময় ব্যাপারটা শুনেছিলাম। তবে আমি গোধূলি বেলায় ব্যাট করিনি। যদিও সেই সময় ব্যাট করা বেশ কঠিন সেটা ঠিক। দিন-রাতের টেস্টে দ্বিতীয় সেশন বিকেল ৫-৫:৩০ মিনিটের মধ্যে শুরু হয়। তাই সেই সময় ক্রিজে টিকে থাকতে হলে ধৈর্য দরকার। ক্রিজে সময় দিতে হবে। তাড়াহুড়ো করলেই বিপদ। তাই নিজেকে বোঝানোর পাশাপাশি ক্রিজে থাকা সতীর্থর সঙ্গে অনবরত আলোচনা জরুরি। তাহলেই সমস্যার মোকাবিলা করা সম্ভব। তাছাড়া এই বিষয় নিয়ে আমরা ইতিমধ্যেই কথাবার্তা বলছি।
মোতেরার বাইশ গজঃ মোতেরার বাইশ গজ নিয়ে আলোচনা করার সময় এখনও আসেনি। আমার ধারণা চিপকের দ্বিতীয় টেস্টের মত এখানেও বল ঘুরবে। আমরা পিচের চরিত্র অনুসারে দল গড়ব। অনেক বছর এখানে আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজিত হয়নি। তাই ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে আরও ভাল ভাবে পিচ দেখতে হবে।
নতুন ফ্লাড লাইটে ফিল্ডিং কঠিনঃ যেকোনও নতুন স্টেডিয়ামে খেলতে গেলে এই সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। এতে নতুন কিছু নেই। রবিবারের পর সোমবারও আমরা সন্ধেবেলা অনুশীলন করব, যাতে বিশেষ উচ্চতায় থাকা ফ্লাড লাইটের সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারি। তাছাড়া এই স্টেডিয়ামে কিন্তু নতুন চেয়ার বসানো হয়েছে। রাতের দিকে লাইটের জন্য সেই চেয়ারগুলো আরও চোখে লাগতে পারে। তাই আমাদের কয়েক দিন সন্ধেবেলা অনুশীলন করা খুবই জরুরি। সেখানে স্লিপ থেকে শুরু করে আউট ফিল্ড ক্যাচ অনুশীলন করব।
মন কেড়ে নিয়েছে মোতেরাঃ মোতেরা এই মুহূর্তে ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম। আমরা ইতিমধ্যে অনুশীলন শুরু করে দিয়েছি। ম্যাচ শুরু হওয়ার জন্য মুখিয়ে আছি। আউট ফিল্ড অসাধারণ। আবার মাঠের সঙ্গে লাগোয়া জিম। ইনডোর থেকে অনুশীলন করার পিচ, সবকিছুতেই আধুনিকতা ও পেশাদারিত্বের ছোঁয়া রয়েছে। এখন শুধু দর্শকদের উপস্থিতিতে গোলাপি বলের টেস্ট শুরু হওয়ার অপেক্ষা।
নজরে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালঃ সত্যি বলতে আমরা খেলার সময় বহির্জগত নিয়ে একদম চিন্তা করি না। তবে ম্যাচের পর এগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। আমরা অবশ্যই আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল খেলতে চাই। তবে সেই দিকে যাওয়ার আগে আমাদের বেশ কিছু ভুলত্রুটি শুধরে নিতে হবে। এখনও আমাদের সামনে আরও দুটো টেস্ট আছে। সেখানে কেমন খেলি, সেটাই আসল বিষয়। তাই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল খেলাকে বাড়তি চাপ হিসেবে না নিয়ে খোলা মনে খেলতে চাই। দুটো টেস্ট জিতলে সাফল্য এমনিতেই আসবে। তাছাড়া টেস্ট পাঁচ দিনের খেলা। প্রতি সেশনে খেলা ঘুরে যায়। তাই এখন এই টেস্ট নিয়ে চিন্তা করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
১৬১ করে চিপকে রাজত্ব ও মইনকে লাগাতার সুইপঃ আমি আগেও বলেছি দলের জন্য সব রান আমার কাছে সমান। ভারতের হয়ে খেলতে নেমে রান করলে সব ইনিংস আমার কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমি কোনও ইনিংসের মধ্যে বাচবিচার করি না। কারণ প্রতি ইনিংস গড়ার পিছনে আলাদা লড়াই, আলাদা পরিস্থিতি থাকে। তাই দেশের হয়ে রান করতে পারলেই ভাল অনুভূতি তৈরি হয়। তবে ওই ইনিংসের একটা আলাদা তাৎপর্য আছে। কারণ ব্যাট করতে নামার আগে আমরা কিন্তু সিরিজে পিছিয়ে ছিলাম। এরপর আমার শতরান দলকে ভাল জায়গায় নিয়ে যায়। আমি জানতাম মইন অফ স্টাম্পের বাইরে বল করবে। লং অন ও লং অফে দুটো ফিল্ডার রেখে বাইরে বল করছিল। তাই চিপকের পিচের কথা মাথায় রেখে ওকে লাগাতার সুইপ মেরেছিলাম।