ছেলের টেস্ট ক্যাপ হাতে নিয়ে গর্বিত বাবা মানি সুন্দর। ছবি - টুইটার
ব্রিসবেনে অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে লড়াকু ৬২ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে রান তাড়া করার সময় চাপের মুখে ২২ রান। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেই টেস্ট ৩ উইকেটে জেতার সুবাদে ২-১ ব্যবধানে সিরিজও পকেটে পুরেছিল ভারত।
তবুও ওয়াশিংটন সুন্দরের বাবা মানি সুন্দর আক্ষেপ করেছিলেন। একটা আক্ষেপ তাঁর এ বারও রয়েছে। যদিও একইসঙ্গে তিনি গর্বিতও বটে। চেন্নাইয়ের ঘরের মাঠে ৮৫ রানে অপরাজিত রয়ে গেলেন ‘লোকাল বয়’। তাই সিনিয়র সুন্দর গর্বিত। আক্ষেপ হল, চিপক থেকে তাঁর বাড়ি মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে হলেও স্টেডিয়ামে বসে ‘ওয়াশি’র দাপুটে ইনিংস দেখতে পেলেন না। টেলিভিশনে সামনে চোখ রেখে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটালেন। জেমস অ্যান্ডারসন, জফ্রা আর্চারের বিরুদ্ধে ছেলের ব্যাটিং শাসন প্রিয় চিপক স্টেডিয়ামে গিয়ে দেখা হল না।
ভারতের প্রথম ইনিংস শেষ হওয়ার পরেই আনন্দবাজার ডিজিটালে সিনিয়র সুন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। ফোন ধরেই বললেন, “বাড়ি থেকে চিপক স্টেডিয়াম মাত্র ১০ কিলোমিটার। কিন্তু মাঠে যাওয়ার উপায় নেই। এদিকে সপ্তাহের প্রথমদিন। তাই অফিসে এসে ‘ওয়াশি’র ব্যাটিং দেখলাম। তবে স্টেডিয়ামে বসে ছেলের ব্যাট দেখলে বেশি খুশি হতাম। কিছু করার নেই। নিয়ম বড় বালাই। দ্বিতীয় টেস্টে মাঠে যাব।”
এরপরেই যোগ করলেন, “আমি তো ওর প্রথম কোচ। তাই ছেলের যোগ্যতা জানি। ব্রিসবেনে প্রথম ইনিংসে শতরান না পাওয়ার জন্য আক্ষেপ থাকলেও, আজকের ইনিংসটা অসাধারণ। ইংরেজ স্পিনারদের পাশাপাশি অ্যান্ডারসন, আর্চারকে অনায়াসে খেলে দিল। অশ্বিন ক্রিজে থাকলে হয়তো প্রথম টেস্ট শতরানও করে দিত। তবে কী আর করা যাবে। যে মেজাজে আছে তাতে মনে হচ্ছে মাথা ঠিক রাখলে খুব দ্রুত আরও সাফল্য পাবে।”
পয়া চিপকের মাঠে প্রথম টেস্ট অর্ধ শতরানের পর 'লোকাল বয়' ওয়াশিংটন সুন্দর। ছবি - টুইটার
মানি সুন্দর এখনও তামিলনাড়ুর ক্লাব ক্রিকেটে বেশ সম্মানীয় নাম। যদিও রাজ্য দলের হয়ে খেলার সুযোগ পাননি। পরিবারের চাপে আয়কর দপ্তরের চাকরি বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু নিজের না পাওয়াগুলো মিটিয়েছেন ছেলেকে তৈরি করে, যাতে ওয়াশিংটন আন্তর্জাতিক মঞ্চে দাপট দেখাতে পারেন। অজিদের মাঠে দাপট দেখানোর পর এবার ঘরের মাঠেও জাত চেনালেন সুন্দর।
অজিত তেন্ডুলকর যেমন তাঁর ছোট ভাই সচিন তেন্ডুলকরের সবচেয়ে সমালোচক ছিলেন, মানি সুন্দর তাঁর ছেলের ক্ষেত্রেও তাই। যদিও জুনিয়র সুন্দরের এই ইনিংসে কোনও খুঁত খুঁজে পেলেন না। তাই গর্বিত বাবার প্রতিক্রিয়া, “এই পিচে ছোটবেলা থেকে খেলেছে। তাই ওকে ইংরেজ বোলাররা সমস্যায় ফেলতে পারেনি। তবে যদি বিশেষ কোনও শটের কথা বলেন তাহলে ক্রিজ ছেড়ে এগিয়ে এসে অ্যান্ডারসনকে লং অনের উপর দিয়ে মারা ছক্কা আমার কাছে বিশেষ তাৎপর্যের।এবার কিন্তু ওকে ভাল বল করতে হবে। কারণ, লাল মাটির পিচ ভাঙতে শুরু করেছে। অশ্বিনের সঙ্গে ওকেও বল হাতে দাপট দেখাতে হবে।”
সুন্দরের বয়স তখন ১৫। একটি ক্লাব ম্যাচে এই তরুণকে প্রথমবার দেখেছিলেন ভারতের প্রাক্তন ওপেনার তথা ভারতের সিনিয়র মহিলা দলের হেড কোচ ডব্লিউ ভি রমন। জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতেও ‘ওয়াশি’কে দেখেছেন জাতীয় দলের প্রাক্তন ওপেনার। বেশ গর্বের সঙ্গে বললেন, “সাদা বলের ক্রিকেটে সাফল্য পাওয়ার পরেও অনেকে টেস্ট ক্রিকেটে পারফর্ম করতে পারে না। লাল বলের ক্রিকেটে জাত চেনানো এত সোজা নয়। তবে ওর ব্যাটিং নিয়ে আমার কোনওদিন সন্দেহ ছিল না। কারণ, স্কুল ও ক্লাব ক্রিকেটে ‘ওয়াশি’ নিয়মিত ওপেনিং করত। এমনকি তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগেও ওপেন করেছে। তাই তো ইংল্যান্ডের দুই পেস বোলারের বিরুদ্ধেও ডিফেন্স আগলে আক্রমণ করে গেল।’’
শেষে যোগ করলেন, “টেস্ট ক্রিকেটে সাফল্য পেতে হলে একজন ব্যাটসম্যানকে অফ স্টাম্প সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতে হবে। বাউন্সার এলে মোকাবিলা করার দক্ষতা দেখাতে হবে। সেই গুণ আছে বলেই ‘ওয়াশি’ দেশে-বিদেশে সাফল্য পেল। একটা সময় পুরো চেন্নাই জুড়ে দীনেশ কার্তিককে নিয়ে এমন আলোচনা হত। আমাদের ‘ওয়াশি’ সেই সোনালি দিন আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসবে। ওর ব্যাটিং দেখা চোখের শান্তি। টেস্ট ক্রিকেটে ৭ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে এমন দাপট সচরাচর দেখা যায় না। ও বিশেষ প্রতিভা।’’
নেট বোলার হিসেবে টেস্টে দলে ছিলেন ওয়াশিংটন সুন্দর। সিডনিতে রবিচন্দ্রন অশ্বিন চোট না পেলে ব্রিসবেন টেস্টে ওঁর অভিষেক হওয়ার সুযোগই আসত না। সেই টেস্টে জাত না চেনালে হয়তো ‘ওয়াশি’ তাঁর ঘরে বসে এই টেস্ট দেখতেন। তবে সেটা হচ্ছে না। স্বপ্নের টেস্ট অভিষেকের পর এবার ঘরের মাঠেও দাপিয়ে বেড়ালেন ‘লোকাল বয় ওয়াশি’। তাই ওঁর বাবার মনে আক্ষেপ থাকলেও এবার কিন্তু তিনি গর্বিত।