বিরাটের অনুপস্থিতিতে ৪ নম্বরে আজহারের পছন্দ শুভমন গিল।
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সদ্য একদিনের সিরিজে ভারতীয় দলের মুখ থুবড়ে পড়া। রোহিত শর্মা ইস্যুতে বোর্ডের বিরুদ্ধে ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালির বিস্ফোরণ। আসন্ন টেস্ট সিরিজের ভবিষ্যৎ। আনন্দবাজার ডিজিটালকে সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন প্রাক্তন অধিনায়ক মহম্মদ আজহারউদ্দিন।
ওয়ানডে সিরিজে কেন আত্মসমর্পণ করল টিম ইন্ডিয়া?
আজহারউদ্দিন: ভারত একেবারেই ভাল বল করতে পারেনি। তীক্ষ্ণতার অভাব ছিল। ৪০০-র কাছাকাছি রান দিয়ে দিলে ব্যাটসম্যানদের আর কী করার থাকে! বোলাররা একেবারেই ধারাবাহিকতা দেখাতে পারেনি। ফলে প্রচণ্ড চাপের মধ্যে পড়ে গিয়েছিল ব্যাটিং। মোদ্দা কথা, বোলিং পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। ভরতের বোলিং আক্রমণ কিন্তু খুব ভাল। তবে ওরা নিজেদের মেলে ধরতে পারেনি। আসল এমন দুটো দিন গিয়েছে, যেখানে কোনও কিছুই ঠিকঠাক হয়নি। জিততে গেলে ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং— তিন বিভাগেরই প্রচেষ্টা, উদ্যম আর তাগিদ লাগে। সেটা পুরো ম্যাচ জুড়েই থাকতে হয়। একটা বিভাগও যদি ডুবিয়ে দেয়, জেতা যায় না।
যশপ্রীত বুমরাদের নিয়ে তার মানে উদ্বেগ থাকছেই?
আজহারউদ্দিন: এটা বলতেই হচ্ছে যে, ভারতীয় বোলিং ওয়ানডে সিরিজে ভরসা দিতে পারেনি। এমনকি, শেষ একদিনের ম্যাচেও তো অস্ট্রেলিয়া তিনশোর বেশি রান তুলেছিল। অস্ট্রেলিয়া দলে ডেভিড ওয়ার্নারের মতো ব্যাটসম্যান ছিল না। প্রথম দলের আরও ২-৩ জন খেলেনি। তার পরও ওরা জেতার জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল।
তার মানে ওয়ানডে সিরিজ থেকে ইতিবাচক কিছু পাওয়া যায়নি?
আজহারউদ্দিন: তা বলছি না। একমাত্র যে পজিটিভ দিক আমার নজরে পড়েছে, সেটা হল বেঞ্চ স্ট্রেংথ। রিজার্ভদের দেখে ভাল লেগেছে। ক্যানবেরায় আমরা প্রথম এগারোয় অনেকগুলো বদল ঘটিয়েও জিতেছি। এটায় আমাদের রিজার্ভ বেঞ্চের শক্তি ফুটে বেরিয়েছে। বুধবার আমাদের যে দল খেলেছে, তা অস্ট্রেলিয়ার থেকে ওজনে অনেকটা এগিয়ে ছিল। প্রতিভা শুধু থাকলেই হয় না। শেষ পর্যন্ত তা মাঠে পারফরম্যান্সের মাধ্যমে দেখাতে হয়। শেষ ওয়ানডে ম্যাচে সেটাই ঘটেছে। আর আমরা এই সিরিজে রোহিত শর্মাকে মিস করেছি। ও এই ভারতীয় দলের অন্যতম সেরা। বিশেষ করে ওয়ানডে ও টি২০ ফরম্যাটে।
আরও পড়ুন: ২৪ ডিসেম্বর বোর্ডের সভায় আইপিএল, নির্বাচক নিয়ে আলোচনা
রোহিতকে যেমন এই সিরিজে পায়নি ভারত, তেমনই প্রথম টেস্টের পর বিরাট কোহালিকে পাওয়া যাবে না। ভারতের সম্ভাবনা কতটা কমছে এর ফলে?
আজহারউদ্দিন: নিশ্চিত ভাবেই কমছে। কারণ অস্ট্রেলিয়ার যেমন স্টিভ স্মিভ, তেমনই ভারতের কোহালি। প্রথম টেস্টের পর ও ফিরে এলে ভারতীয় দলের পক্ষে কাজটা খুব কঠিন হয়ে যাবে। ও শুধু দলের সেরা ব্যাটসম্যানই নয়, অধিনায়কও। বেশ কয়েক বছর ধরে ও নেতৃত্ব দিচ্ছে দলকে। বিরাটের না থাকা তাই বড় সমস্যা, যা প্রভাব ফেলবেই। আবার একইসঙ্গে এটা বাকিদের কাছে সুযোগও। বিরাটের জায়গায় যে নামবে, সে নিজেকে চেনানোর দারুণ মঞ্চ পাচ্ছে। নিজের জায়গা পাকা করতে এর চেয়ে ভাল সুযোগ হয় না। মনে হয় শুভমন গিল খেলতে পারে। ওরই খেলা উচিত। গ্রেট প্লেয়ার। আমাদের ধৈর্য দেখাতে হবে ওর ব্যাপারে। ভরসা রাখতে হবে। ওর উপর আস্থা রাখা হোক। একটুও না ভেবে বিরাটের অনুপস্থিতিতে ৪ নম্বরে নামানো হোক শুভমনকে।
রোহিতের চোট নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে এখনও। প্রকাশ্যে এটা নিয়ে মুখ খুলেছেন বিরাটও। গোটা ব্যাপারটা কি অনেক ভাল ভাবে সামলানো যেত না?
আজহারউদ্দিন: এই বিতর্ক তৈরির কোনও মানে হয় না। নিশ্চিত ভাবেই এড়ানো যেত। নির্বাচকরা বলতেই পারতেন পরিস্থিতি ঠিক কী, রোহিত খেলবে কি না। জানি না ঠিক কেন এটা হয়েছে। তবে রোহিত আইপিএলের ফাইনালে খেলেছে, ২০ ওভার ফিল্ডিং করার পর ৬৮ রান করেছে। ফিট না হলে এটা করা যায় না। তার পর জানা গেল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে খেলার মতো ফিট ও নয়। সমস্যা ঠিক কোথায়, বুঝতে পারিনি। ২০ ওভারের ম্যাচ কিন্তু ৫০ ওভারের চেয়ে অনেক কঠিন। অনেক বেশি লড়াই আর টেনশন টি২০-তে।
আরও পড়ুন: লকডাউন ধারালো করেছে নটরাজনকে
টেস্ট সিরিজে ভারতের জেতার চাবিকাঠি কী?
আজহারউদ্দিন: ভাল বোলিং। আমাদের ব্যাটিং ধারাবাহিকভাবে তিনশো রান করছে। তাই ব্যাটিং নিয়ে ভাবছি না। ভাবনার জায়গা হল বোলিং। ২০ উইকেট না নিলে টেস্ট জেতা যায় না। আমি আশাবাদী টেস্টের আগে যে দিনগুলো পাওয়া যাচ্ছে, তাতে বোলাররা ধাতস্থ হয়ে উঠবে। মনে হয় না টেস্টের উইকেটে বিশাল কিছু তফাত হবে। বড় জোর বাউন্স একটু বেশি হতে পারে। অস্ট্রেলিয়াকে কম রানে আটকে রাখলে আমাদের জেতার দারুণ সম্ভাবনা তৈরি হবে।
প্রথম টেস্টই গোলাপি বলে দিন-রাতের। সেটা কি বাড়তি চাপ?
আজহারউদ্দিন: ভারতীয় দল আগেও গোলাপি বলে দিন-রাতের টেস্ট খেলেছে। গোলাপি বলে খেলতে খুব একটা সমস্যা হবে বলে মনে করছি না। ক্রিকেটাররা ঠিক মানিয়ে নেবে। কিছুদিন সময়ও মিলছে টেস্টের আগে। ৩-৪ দিন প্র্যাক্টিস করার সুযোগ রয়েছে। তবে কিছুটা আলাদা তো বটেই। একটা কথা বলতে পারি, লাল বলে টেস্টের জায়গা কোনও মতেই গোলাপি বলের টেস্ট নিতে পারবে না।