নতুন ভারতের জন্ম ব্রিসবেনে। ছবি: বিসিসিআই
জৈব সুরক্ষা বলয় থেকে আইপিএলের ধকল। একের পর এক চোট যখন শারীরিক এবং মানসিক ভাবে বার বার আঘাত হানছে ভারতীয় দলে, ভিলেন হয়ে উঠছেন ফিজিয়োরা, এমনকি ক্রিকেটারদের দিতে হচ্ছে ঘুমের ওষুধও, তেমনই একটা সময় যেন জন্ম নিল এক নতুন টিম ইন্ডিয়া। এমন এক ভারতীয় দল যারা কী নেই ভাবে না, যা রয়েছে তাই দিয়েই যুদ্ধ জিততে জানে।
১৭ ডিসেম্বর, ২০২০। গোলাপি বলের টেস্ট দিয়ে শুরু হয়েছিল বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি। ৩৬ রানে থেমে যাওয়া ভারতীয় ইনিংস এবং ৮ উইকেটে হারের লজ্জা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না বলেই মনে করেছিলেন সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার বাংলার রঞ্জি জয়ী অধিনায়ক বললেন, “এটা টেস্ট ক্রিকেটের জয়। ভারতীয় দল যে ক্রিকেটীয় চরিত্র দেখিয়েছে তা অসাধারণ। ভুল প্রমাণ করেছে সকলকে।”
বিরাট কোহালি অ্যাডিলেডের পর ফিরে এসেছিলেন পিতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে। ভারতীয় দল থেকে চোটের জন্য ছিটকে গিয়েছিলেন মহম্মদ শামি। এমন অবস্থায় সকলে যখন ভাবছিলেন সিরিজে ৪-০ হারতে পারে ভারত, অধিনায়ক রাহানের শতরানে ভর করে ম্যাচ জিতে সিরিজে সমতা ফেরায় দল। মহম্মদ সিরাজ, শুভমন গিলদের অভিষেক ম্যাচ স্মরণীয় হয়ে থাকে। ম্যাচে ৫ উইকেট নিয়ে রেকর্ড গড়েন সিরাজ। কিন্তু আবার চোট।
উমেশ যাদব ছিটকে গেলেন চোটের জন্য। সিডনির মাঠে একাধিক পরিবর্তন করতে হয় ভারতীয় দলে। অভিষেক ঘটে নবদীপ সাইনির। রবিচন্দ্রন অশ্বিন, হনুমা বিহারী রবীন্দ্র জাডেজা, ঋষভ পন্থদের লড়াই জিততে দেয়নি অস্ট্রেলিয়াকে। টিম পেনের আচরণ বুঝিয়ে দিয়েছিল কতটা চাপে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ঘরের মাঠে নিজেদের সেরা দল নিয়েও অস্ট্রেলিয়াকে এমন ভেঙে পড়তে শেষ কবে দেখা গিয়েছে তা মনে করাটাই মুশকিল।
ব্রিসবেন ছিল সব চেয়ে কঠিন প্রশ্ন পত্র। গাব্বার এই মাঠে ৬টি টেস্ট খেলে একটিও জিততে পারেনি ভারত। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ১৪৪ রানের সেই রাজকীয় ইনিংসে ভর করে ড্র করেছিল ভারত। কিন্তু জয় থেকে গিয়েছিল অধরাই। রাহানেদের ভারত কিন্তু ম্যাচ জেতার সঙ্গে জিতে নিয়েছে সিরিজও।
এই সিরিজ ভারতীয় দলকে দিয়েছে শুভমন গিল, মহম্মদ সিরাজ, নবদীপ সাইনি, টি নটরাজন এবং এক নতুন ঋষভ পন্থকে। সম্বরণের মতে অ্যাশেজের থেকে কোনও অংশে কম নয় বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি। অস্ট্রেলিয়ার সেরা দলের বিরুদ্ধে নতুনদের এই লড়াই অবিস্মরণীয়। বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ক বলেন, “যখন যে রকম দরকার সেই রকমই খেলেছে ভারতীয় দল। টেস্ট ক্রিকেটের যে মৃত্যু নেই প্রমাণ করে দিল এই সিরিজ। লাল বল, সাদা জামা পরে খেলার জন্য উৎসাহিত হবে ক্রিকেট শিক্ষার্থীরাও।”